ক্রিকেট ক্রিকেটই। সেটা যুদ্ধ হয় কী করে। দুদলেই ১১ জন খেলোয়াড়। দিনশেষে কেউ হারে কেউ জেতে। তবু ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ যেন বারুদে ঠাসা দ্বৈরথ। ওয়াঘা সীমান্তের এপার-ওপার যেন বিস্ফোরোন্মুখ। ক্রিকেট সংস্কৃতি সেখানে গৌণ। পরস্পরের প্রতি বৈরী মনোভাবাপন্ন দুই পড়শির যুদ্ধংদেহী মনোভাব বোঝাতেই বোধহয় ইংরেজিতে ‘রাইভালরি’ শব্দের উৎপত্তি।
বলা হয়, যে কোনো টুর্নামেন্টে জয় দিয়ে শুরু করলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সহজ হয়ে যায়। সেই হিসাবে আয়ারল্যান্ডকে অনায়াসে হারিয়ে কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপ শুরু করা ভারত রয়েছে সুবিধাজনক অবস্থানে। উলটোদিকে, পাকিস্তানের শুরুটা হয়েছে সহআয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সুপার ওভারে হেরে।
পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে তো বটেই, মনস্তাত্বিকভাবেও ভারত এগিয়ে, পাকিস্তান পিছিয়ে। এই সংস্ককণে এ পর্যন্ত ১২ ম্যাচে ভারতের নয়টি এবং পাকিস্তানের তিনটি জয়েও প্রমাণিত, কারা এগিয়ে। ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেটযুদ্ধকে বলা হয় ‘মাদার অব অল ব্যাটেল’। সব যুদ্ধের জননী। অনেকটা ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দ্বৈরথের মতো।
আমেরিকা ক্রিকেট পছন্দ করুক কিংবা না করুক, আজ ম্যাচ চলাকালে নাসাউ কাউন্টির অন্য সব কিছু বন্ধ থাকবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড স্থবির হয়ে যাবে।
আমেরিকানদের কথা বাদ দিন। এশিয়ার যারা অভিবাসী, বিশেষ করে ভারতীয় ও পাকিস্তানিরা, উজ্জ্বল সূর্যের নিচে সুপার বোলের দেশে ক্রিকেটের উৎসবে মাতোয়ারা হবেন তারা। এনএফএল ফাইনালের মতো জমকালো পার্টি হয়তো হবে না, তবে আইজেনহাওয়ার পার্কের কাছে সিডার ক্রিক পার্কে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ উন্মুক্ত স্থানে খেলা দেখার ব্যবস্থা করেছে। নাম দিয়েছে ‘ওয়াচ পার্টি’। আজকের ম্যাচের টিকিট যারা পাননি, তাদের জন্য এই আয়োজন। পাক-ভারত ম্যাচের টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পরে শেষ হয়ে যাবে, এ আর নতুন কী! কালোবাজারিতে টিকিট বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
এই ম্যাচের আরেকটি অনুষঙ্গ হচ্ছে, আইএসআইএসের হুমকি। যার পরিপ্রেক্ষিতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে যখন রাত ৮টা ৩০ মিনিটে খেলা শুরু হবে, নিউইয়র্কে তখন সকাল ১০টা ৩০। এত কথা হলো, আসল কথাটাই তো বলা হলো না। লড়াইটা কেমন হবে? সাদা চোখে লড়াইটা হবে পাকিস্তানি পেসার বনাম ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে। শাহিন আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হারিস রউফ, মোহাম্মদ আমিরদের পেস আক্রমণ সামলাতে হবে রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের। তাই বলে ভারতীয় বোলিং আক্রমণকেও তুচ্ছজ্ঞান করার কোনো সুযোগ নেই। ভারতীয় বোলাররা আয়ারল্যান্ডকে গুটিয়ে দিয়েছেন মাত্র ৯৬ রানে। তবে আজকের গল্প ভিন্ন হতে পারে।
এই তথ্যটিকে যদি জরুরি মনে করেন তাহলে বলে দেওয়া যাক, এই মাঠে শেষ ছয় ইনিংসের চারটিতে ১০০ রান করতে অসফল হয়েছে দলগুলো। সুতরাং, শাহিন আফ্রিদিরা যেমন, জাসপ্রিত বুমরারাও তেমনি লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন উইকেটের দিকে।