সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩ ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগে পুরোদমে ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। রাজপথে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের কাজও চলছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না দিলেও বিভিন্ন জরিপ এবং তথ্য সংগ্রহের মাধমে ভেতরে ভেতরে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে কাজ এগিয়ে রাখছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণকে সামনে রেখে ইশতেহার প্রণয়নের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনেও জোর দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। চলছে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের নির্বাচনি জনসভাও। নির্বাচন সামনে রেখে অপপ্রচারের জবাব দিতে ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে মাঠে নামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নেতাকর্মীদের। অনলাইনে গুজবের জবাব দিতে বছাই করা যুব ও ছাত্রকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে জোটের মেরুকরণেও নজর রাখছে দলটির হাইকমান্ড। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, আমাদের দল নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। নির্বাচনের পূর্ব শর্ত হিসাবে দলের যেসব কাজ রয়েছে, সেগুলোও প্রায় শেষের দিকে; যেমন নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন, সরকারের পরিকল্পনা ইত্যাদি। এছাড়া আমাদের দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের ইতোমধ্যে একবার আমাদের দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী ডেকেছিলেন। তিনি সেখানে তাদের সার্বিক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। স্থানীয় সরকার জনপ্রতিধিনিদের সঙ্গেও তিনি বসেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নেত্রী ইতোমধ্যে কয়েকটি বিভাগে সমাবেশ করেছেন। অক্টোবরে আরও কয়েকটি জনসভা করার কথা রয়েছে। যেমন ১০ অক্টোবর ফরিদপুরের ভাঙ্গায় জনসভা হবে। এরপর সিলেট, বরিশাল, খুলনায় জনসভা হতে পারে। সুতরাং এ ধরনের প্রস্তুতি চলছে। আমরা পুরোদমে নির্বাচনি ডামাডোলের মধ্যেই আছি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনমুখী দল। আমরা চাই একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আমরা আমাদের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণকে আরও যত বেশি সম্ভব সম্পৃক্ত করতে চাই। এই লক্ষ্য সামনে রেখেই আমরা নানা কর্মসূচি পালন করছি। আমরা সাড়াও পাচ্ছি। আমাদের জনসভাগুলো এখন জনসমুদ্র হয়ে যায়। এটা কিন্তু নির্বাচন নিয়ে জনগণের আগ্রহ-উৎসাহের কারণেই হচ্ছে।’
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। আমরা জেলা নেতাকর্মীদের বলেছি, ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি করতে। এছাড়া নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কি কি উন্নয়ন করেছেন, সেগুলো সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে। বিএনপি-জামায়াতের অপশাসন এবং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের চিত্রগুলোও তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে, এটা ধরে নিয়েই ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এর অংশ হিসাবে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক বৈঠকে প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে ইঙ্গিতও দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। এবার যে দলীয় মনোনয়ন কঠিন হবে তা তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে জরিপ পরিচালনা করে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখেও তাদের জরিপ চলমান আছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও প্রধানমন্ত্রীকে হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করে থাকে। এসব জরিপে জনপ্রিয়তায় কে এগিয়ে, তাদের অতীত ও বর্তমান এবং দুর্বল দিক-সবই থাকছে।
দলটির সূত্রে আরও জানা যায়, জাতীয় নির্বাচনে তরুণ ভোটার ও নারী ভোটার টানার কৌশল থাকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা অনেক আগেই নির্বাচনি ইশতেহার আপডেট করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। নির্বাচনি প্রস্তুতির লক্ষ্যে তিনি অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন এবং সেমিনারের মাধ্যমে নির্বাচনি ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তযোগ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো বিভিন্ন বিষয়ের সুপারিশ বা আপডেট করতে উপকমিটিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ কারণে আওয়ামী লীগের কয়েকটি উপকমিটি কাজও শুরু করে। বেশ কয়েকটি সেমিনারের আয়োজনও করে উপকমিটি।
সূত্র জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে সব ধরনের কর্মকাণ্ডকে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসাবে ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এর আওতায় সব ভোটারের কাছে নিজেদের কাজ ও উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে দেশজুড়ে থাকা দলীয় কার্যালয়গুলোতে স্থাপন করা হচ্ছে স্মার্ট কর্নার। এ উদ্যোগের আওতায় একটি সুশৃঙ্খল ক্যাম্পেইন টিমের মাধ্যমে ঘরে ঘরে প্রত্যেক ভোটারের কাছে নির্বাচনি বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে। এজন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ।
১৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালায় মাস্টার ট্রেইনার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এই প্রশিক্ষকরা সারা দেশে অন্যদের প্রশিক্ষণ দেবেন। আগামী নির্বাচনে স্মার্ট কর্নারের মাধ্যমেই সারা দেশে প্রচার টিম ব্যবস্থাপনা করা হবে। প্রতিটি ভোটারের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের বার্তা পৌঁছাতে স্মার্ট কর্নার হবে একটি কার্যকরী মাধ্যম। এছাড়া ‘দ্য ডিল’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে অনলাইনে গুজব প্রতিরোধের বিষয়ে দলীয় নেতাকর্মী বিশেষ করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে দলটি।
এদিকে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের জন্যও নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকব, প্রয়োজন হলে রাজপথেও থাকব। একইসঙ্গে নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুত থাকব। আমরা মানুষের ঘরে ঘরে যাব, দেশের যে অভাবনীয় উন্নয়ন সারা পৃথিবীর মানুষ জানে ও প্রশংসা করছে-তা দেশবাসীর কাছে তুলে ধরব। একই সঙ্গে বিএনপির আন্দোলন, ষড়যন্ত্র, হুমকি ও বিদেশিদের নিয়ে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করব।