অক্টোবর ২৩, ২০২৪ ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ
সেই ২০১১ সালে আরব বসন্ত দিয়ে ইয়েমেনে শুরু হয় ক্ষমতার লড়াই। মনে করা হয়েছিল, এর মাধ্যমে দেশটিতে স্থিতিশীলতা আসবে; কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টোটা। ওই বছর তিউনিসিয়ায় শুরু হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভ আশপাশের আরব দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। সে কারণেই এর নাম দেওয়া হয় আরব বসন্ত। এর প্রভাবে কয়েকটি দেশে দীর্ঘ বছরের স্বৈরশাসকের পতন ঘটে। তাদের একজন ছিলেন ইয়েমেনের ৩৩ বছরের স্বৈরাচার আলি আবদুল্লাহ সালেহ।
তার পতনের পর দেশটির বৃহদাংশের নিয়ন্ত্রণ নেয় হুথি বিদ্রোহীরা। তখন থেকেই বিশ্ব দরবারে আলোচনায় আসে ইরান-সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এক পর্যায়ে ২০১৫ সালে ইয়েমেনের রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। সালেহর পতনের পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া আব্দুরাবু মানসুর হাদির সরকার রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ হারালে এডেন হয়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান তিনি। ফলে নড়েচড়ে বসে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট এবং সৌদি নেতৃত্বাধীন কয়েকটি আরব দেশের কোয়ালিশন। কিন্তু তারা হুথিদের দমাতে তো পারেইনি, কার্যত পরোক্ষ পরাজয় হয়েছে সৌদি জোটের। আর হুথিরা একের পর এক চমক দেখিয়ে আসছে তখন থেকেই। সর্বশেষ চমক হলো- প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হাইপারসোনিক মিসাইল হামলা। যা ইসরায়েল তো বটেই, তার পশ্চিমা মিত্রদেরও হতভম্ব করে দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সমরাস্ত্রে হুথিদের এই অগ্রগতি আগামী দিনে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
হুথিরা মূলত শিয়াপন্থী ও ইরান-সমর্থিত হওয়ায় আতঙ্কিত ইয়েমেনের সীমান্তঘেঁষা সৌদি আরব। তাই তো মানসুর হাদিকে আশ্রয় দেয় রিয়াদ। সেই সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশরকে নিয়ে মৈত্রীবাহিনী গঠন করে হুথিদের ঠেকাতে। আর এই জোটকে শুরু থেকেই লজিস্টিক আর ইন্টেলিজেন্স সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স। কিন্তু হুথিদের পরাস্ত তো দূরের কথা, উল্টো শান্তিচুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে সৌদি জোট। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের অন্যতম প্রক্সি হিসেবে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ায় হুথিরা।
গত বছরের ৭ অক্টোবর নজিরবিহীনভাবে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে গিয়ে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধারা। ওইদিন থেকেই অবরুদ্ধ গাজায় আগ্রাসন শুরু করে দখলদার ইসরায়েল। কুখ্যাত ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা এতটাই ব্যাপক ও নৃশংস যে তা বিশ্ব-বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, হাসপাতাল, স্কুল, ধর্মীয় উপাসনালয় কিংবা আশ্রয়শিবির- কোনো কিছুই বাদ যায়নি তাদের হামলার টার্গেট হওয়া থেকে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা এবং বিশ্ব সম্প্রদায় এর বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কারণে কোনো কিছুকেই পাত্তা দিচ্ছে না ইসরায়েল।
স্বাভাবিক কারণেই নিরীহ ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়েছে ইয়েমেনের হুথি ও লেবাননের হিজবুল্লাহ। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সমর্থিত আরেকটি শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হলো হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলি বাহিনী হিজবুল্লাহকে জবাব দেওয়ার অংশ হিসেবে প্রায় নিয়মিত ভিত্তিতে লেবাননে হামলা চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু শত্রু-ভূখণ্ড, বিশেষত লেবাননে বৃহত্তর পরিসরে অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন। তার এমন ভয়ংকর ঘোষণার পর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা বাড়িয়ে দেয় হিজবুল্লাহ ও হুথি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের কাছাকাছি হাইপারসোনিক মিসাইল নিক্ষেপ করে হুথি বাহিনী। অবশ্য এরই মধ্যে দখলদার বাহিনীর হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধান সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এবং হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হয়েছেন। এছাড়া সিনওয়ারের আগে তার পূর্বসূরী হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে ইরানের অভ্যন্তরে হত্যা করা হয়।
আলজাজিরার তথ্যমতে, হুথিদের দাবি, ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি ১১ মিনিটে ২০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আঘাত হানে। যদিও এতে ক্ষয়ক্ষতির বিষয় নিয়ে পরস্পরবিরোধী দাবি করা হয়েছে, তবে এটি হাইপারসোনিক মিসাইল কি না- তা নিয়ে শুরুতেই বিতর্ক সৃষ্টি করে ইসরায়েল। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, এটি হাইপারসোনিক ক্যাটাগরির মিসাইল নয়।
কিন্তু খোদ মার্কিন গণমাধ্যম সামরিক বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, হুথিদের ছোড়া মিসাইল হাইপারসোনিক। বিজনেস ইনসাইডার হাইপারসোনিক লেখা সেই ক্ষেপণাস্ত্রের ছবি প্রকাশ করেছে। একইসঙ্গে মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, এই ঘটনা হুথিদের সমরাস্ত্র উন্নয়নে আরও উৎসাহ যোগাবে।
আয়রন ডোম আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলের গর্বের বিষয়। কিন্তু সেটাকে পরাস্ত করে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে মিসাইল হামলা চালানোয় হুথি প্রধান আব্দুল মালিককে অভিনন্দন জানান হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার।
অভিনন্দন বার্তায় সিনওয়ার বলেছিলেন, “সকল স্তরের প্রতিরক্ষা এবং বাধাকে অতিক্রম করে শত্রুর সত্ত্বার গভীরে আপনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন। এ সাফল্যের জন্য আপনাকে অভিনন্দন।”
বর্তমান সময়ের অন্যতম সমরবিদ হিসেবে বিবেচিত সদ্য প্রয়াত সিনওয়ার আরও বলেছিলেন, আমরা নিজেদেরকে একটি দীর্ঘস্থায়ী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করেছি। ফিলিস্তিন, ইরাক, লেবানন এবং ইয়েমেনে আমাদের সম্মিলিত শক্তি শত্রুকে পরাজিত করবে।
এখন প্রশ্ন হলো- ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হাইপারসোনিক মিসাইল পাঠিয়ে কী বার্তা দিলো হুথি? কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে এটি কতটাই বা প্রভাব রাখতে সক্ষম হবে?
ধারণা করা হচ্ছে, হুথিদের এই সাফল্য ইসরায়েলকে খানিকটা দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। তাছাড়া হুথিদের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র গোটা মধ্যপ্রাচ্যের দৃশ্যপট পাল্টে দিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
হুথিদের মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি দাবি করেছেন, ইসরায়েলি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে নতুন এই হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী সেটি আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি স্থানীয়ভাবে ডেভেলপ করার দাবিও করেছে হুথি।
এমনকি ইসরায়েলি আর্মি রেডিও জানিয়েছে, তাদের বিমানবাহিনী তদন্ত করছে কেন ক্ষেপণাস্ত্রটি আগেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি।
অবশ্য ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে এটিই প্রথম হামলা নয়। এর আগে গত ১০ জুলাই ইয়াফা নামক একটি ইয়েমেনি ড্রোন ইসরায়েলের ইলাত শহরে আঘাত হানে। সেটিও প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিল। তবে সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্রটি ছিল একেবারেই ভিন্ন। এটি সত্যিই এক গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু কেন?
প্রথমত, ক্ষেপণাস্ত্রের ধরণ। এটি রাশিয়ান বা ইরানি কোনো ক্ষেপণাস্ত্র নয়। অর্থাৎ ক্ষেপণাস্ত্রটি মূলত ইয়েমেনেই ডেভেলপ করা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রের গায়েও লেখা রয়েছে ‘মেড ইন ইয়েমেন’। একইসঙ্গে লেখা রয়েছে, ‘হাইপারসোনিক’।
দ্বিতীয়ত, ইসরায়েলের কমপক্ষে তিনটি প্রধান শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে এটি পরাস্ত করেছে। তাছাড়া লোহিত সাগরে মার্কিন নৌবাহিনী এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক উপস্থিতি ও ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কোনো কিছুই এই ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করতে পারেনি।
তৃতীয়ত, ২০ জুলাই হুদাইদাহ বন্দরে ইসরায়েলি হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে বারবার ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে হুথিরা। এরপর যে জবাব তারা দিয়েছে সেটা সত্যিই মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া হিসেবে পরিচিত ইসরায়েলকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। ওই হামলার ফলে হাজার হাজার ইসরায়েলি নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। তাছাড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকেন্দ্র এবং তেলআবিব বিমানবন্দরের মধ্যবর্তী অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি এলাকায় আঘাত হেনেছিল।
শুরু থেকেই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই হামলার ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করার মিথ্যা প্রয়াস চালিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যেটুকু ফাঁস হয়েছে, সেটা থেকে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কাই প্রকাশ করেছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।
চতুর্থত, হামলার সময়টি ইয়েমেনিদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবী মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মদিন উদযাপন সেখানে শিয়া-সুন্নিদের ঐক্যবদ্ধ করে।
পঞ্চমত ও সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হামলাটি চালোনো হয়। তাছাড়া অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে চালানো এই হামলা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, চলমান গাজাযুদ্ধের কারণে কার্যত ইসরায়েলের কোনো অংশই নিরাপদ নয়।
ইসরায়েলের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল এক বিশ্লেষণে বলেছে, হুথির ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি ছিল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের সামগ্রিক যুদ্ধের অংশ। অর্থাৎ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরান এই অঞ্চলে যেসব প্রক্সি ব্যবহার করে, এটি তারই অংশ; যা শুরু হয়েছে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার মধ্য দিয়ে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ইয়েমেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শায়া মোহসেন আল-জিন্দানি ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘এই হামলার মাধ্যমে তাদের সশস্ত্র বাহিনী ইহুদিবাদী শাসকদের কাছে একটি বার্তা দিয়েছে যে, তারা আসলে নিরাপদ নয়।‘’
এতে আরও মন্তব্য করা হয়েছে যে, ইরান সম্ভবত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো আরও অন্যান্য অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র পরীক্ষার জন্য হুথিদের ব্যবহার করছে। অর্থাৎ, হুথিরা হলো ইরানের অস্ত্র পরীক্ষার ক্ষেত্র। যেমন- ২০২০-২১ সালে ইরান প্রথম হুথিদের কাছে শাহেদ ড্রোন রপ্তানি করে। সফলতা পাওয়ায় ২০২২ সালে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য সেই অস্ত্র রাশিয়াকে দেয় তেহরান।
আলজাজিরা এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, হুথিরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে ইসরায়েলি মালিকানাধীন বা তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলো লক্ষ্য করে নিয়মিত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। টাইমস অব ইসরায়েলের তথ্য বলছে, বিগত ১১ মাসে ইসরায়েলে ২২০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়েছে হুথিরা। তবে সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ অতীতের যেকোনো হামলার চেয়ে গভীরতর আঘাত। কারণ এতে ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি প্রথমবারের মতো একজন ইসরায়েলি প্রাণ হারিয়েছে।
হুথিদের প্রচার বিভাগের ভাইস-চেয়ারম্যান নাসরুদ্দিন আমের বলেছেন, ইসরায়েলের ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ধাওয়া করেও তাদের ক্ষেপণাস্ত্রটিকে আটকাতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি ইসরায়েলের কৌশলী প্রতিক্রিয়াতেও সেটার প্রমাণ মেলে। তেলআবিব বলেছে, তাদের একটি ইন্টারসেপ্টর হুথির ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, কিন্তু সেটা ধ্বংস হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া-ভিত্তিক নাভান্তি গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক মোহাম্মদ আল-বাশা আলজাজিরাকে বলেছেন, এটি ইসরায়েলে হুথিদের সবচেয়ে গভীরতম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।
তার মতে, ‘‘রাজনৈতিক এবং কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এর গুরুত্ব অনেক। কারণ সীমান্ত সংযোগ না থাকা সত্ত্বেও ২০০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে হুথিদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র মধ্য ইসরায়েলে আঘাত হানার অর্থ হলো- ইরানের সমর্থনে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রযুক্তিতে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করছে মধ্যপ্রাচ্যের কেন্দ্রে থাকা সশস্ত্র গ্রুপটি।’’
আল-বাশা বলছেন, ‘‘এটির একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও রয়েছে, সেটি হলো- এর মাধ্যমে ইসরায়েলের আয়রন ডোম, ডেভিডস স্লিং এবং অ্যারো এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সম্ভাব্য দুর্বলতা প্রকাশ পায়।’’
‘‘তাছাড়া এটি এই অঞ্চলে একটি ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি হিসেবে হুথিদের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে,’’ মনে করেন মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক এ গবেষক।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ইয়েমেন ও মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক নিরাপত্তা বিশ্লেষক নিকোলাস ব্রুমফিল্ড আলজাজিরাকে বলেছেন, প্রকৃত বাস্তবতা হলো- ইসরায়েলের এত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সত্ত্বেও ক্ষেপণাস্ত্রটি যতদূর পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাতে এটি হুথিদেরর আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
ব্রুমফিল্ড বলছেন, ‘‘তাছাড়া এটিকে তারা তাদের সক্ষমতারই একটি বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দাবি করতে পারে। একইসঙ্গে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে হুথিরা যেভাবে বিভিন্ন উপায়ে ‘প্রতিরোধ অক্ষের’ নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাতে বৃহত্তর আঞ্চলিক খেলোয়াড় হিসেবে তারা নিজেদের গুরুত্ব দাবি করতেই পারে।’’