নভেম্বর ২১, ২০২৩ ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগ্রহীদের অধিকাংশই মনে করছেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে জয় অনেকটা নিশ্চিত। তাই চিত্রতারকা, ক্রিকেটার, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, আমলা, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ দলের কোনো পদে নেই এমন ব্যক্তিরাও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনছেন।
অনেকে কিনবেন বলে জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যে দলের ফরম সংগ্রহ করেছেন জাতীয়ভাবে পরিচিত বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনরা। বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরে নিয়েই সহজ জয় পেতে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী এসব বিশিষ্টজন। তাদের আগ্রহে চাপে রয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। কারণ, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনার আগে বিশিষ্টজনদের অনেকেই তাদের বাড়িতে কিংবা অফিসে গিয়ে দোয়া চাইছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা সোমবার এ তথ্য জানান।
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান (মাগুরা-১ ও ২ এবং ঢাকা-১০), চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আরশাদ আদনান (পাবনা-৫), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন (নেত্রকোনা-৫), সাবেক সচিব জিল্লার রহমান (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১), বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ সাদিক (সুনামগঞ্জ-৪); প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী (ফেনী-২), বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম (কুমিল্লা-১০), আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (সুনামগঞ্জ-২), এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন (কুমিল্লা-৩), যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পরিচিত মুখ আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন (হবিগঞ্জ-৪) ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমার শেষ দিন। তবে এ সময় বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। শনিবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হয়েছে।
এদিকে মনোনয়ন ফরম বিক্রির সময় নেতাকর্মীদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে তিন দফা চেষ্টা করেও রোববার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে তিনি ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ফিরে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলিস্তানের জিপিও মোড় হয়ে দলীয় কার্যালয়ে আসার চেষ্টা করেন তিনি। এখানে তিনি ভিড়ের কবলে পড়েন। মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা পুলিশ ডেকেও দলের সাধারণ সম্পাদককে ভেতরে নিয়ে যেতে পারেননি। ফরম বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা বলেন, অতীতে কখনোই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি নিয়ে এমন অবস্থায় পড়তে হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেছেন, দলীয় ফরম কেনার ক্ষেত্রে বেশি উৎসাহের অন্যতম প্রধান কারণ নেতাকর্মীরা মনে করছেন বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাই দলীয় মনোনয়ন পেলে তারা সহজে জয়ী হতে পারবেন। এছাড়া টানা তিন মেয়াদ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় অনেক নেতাকর্মী বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন। এখন তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি-মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
আওয়ামী লীগ সূত্র দাবি করছে, আজ শেষ দিন জাতীয়ভাবে পরিচিত অনেক মুখ দলীয় ফরম সংগ্রহ করতে পারেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন চিত্রতারকা, ব্যবসায়ী, আমলা, অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও আইনজীবী। আগ্রহী ব্যক্তিদের নামের তালিকায় চিত্রনায়ক আলমগীর ও ফেরদৌস, অভিনেত্রী শমী কায়সার ও রোকেয়া প্রাচী এবং চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের নাম শোনা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে চিত্রনায়ক শাকিল খান ও অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান মনোনয়ন ফরম তুলেছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান সোমবার বলেন, দলের নীতি ও আদর্শে বিশ্বাসী যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে কাকে কোথায় মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনরা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য যে আগ্রহ প্রকাশ করছেন, সেটা ইতিবাচক একটি বিষয়।
নৌকার মাঝি হওয়ার দৌড়ঝাঁপ ক্রীড়াঙ্গনেও : বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি আতাউর রহমান ভূইয়া মানিক নোয়াখালী-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তারকা ফুটবলার দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। সাবেক জাতীয় অধিনায়ক এবং বাফুফের সদস্য সত্যজিৎ দাশ রুপু চট্টগ্রাম-১২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে।
মনোনয়ন দৌড়ে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা : সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক (শরীয়তপুর-১), সাবেক ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দ (কিশোরগঞ্জ-২), সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান (জামালপুর-১), সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আবদুর রহিম (ময়মনসিংহ-৮) এবং সাবেক সিনিয়র এএসপি শেখ আতাউর রহমান (সাতক্ষীরা-৪) মনোনয়ন চান। বরিশাল-৫ আসনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া মাহবুব উদ্দিন (এসপি মাহবুব) ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র কিনে জমা দিয়েছেন।
নৌকার টিকেট চান প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা : ফরিদপুর সদর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে এমপি হতে চান এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন। জসিম উদ্দিন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। প্রাইম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক কাজী সিরাজুল ইসলাম ফরিদপুর-১ আসন থেকে এবং টাঙ্গাইল-৬ আসন থেকে মনোনয়ন চান ব্যবসায়ী আহসানুল ইসলাম টিটু।
নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন সাবেক আমলারাও : খুলনা-১ আসনে সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায়, সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন ভোলা-৪, সাবেক সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নওগাঁ-৩ এবং চাঁদপুর-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান ও সচিব গোলাম হোসেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান চিকিৎসকদের বেশ কয়েকজন : বিএসএমএমইউ-এর সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান টাঙ্গাইল-৩, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চট্টগ্রাম-৩, সাবেক সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান রাজবাড়ী-২, স্বাচিপের সাবেক মহাসচিব ডা. এমএ আজিজ ময়মনসিংহ-৪, বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী সিলেট-৩, দলের সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু মুন্সীগঞ্জ-১ এবং স্বাচিপের সাবেক সহসভাপতি ডা. রউফ সরদার নরসিংদী-৪, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. শহীদ উল্লাহ খুলনা-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। তাদের কেউ কেউ দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলে জমা দিয়েছেন।