অক্টোবর ২১, ২০২৪ ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ
ইসরাইলে গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার হত্যা ইসরাইলের জন্য একটি বড় বিজয়। কিন্তু সিনওয়ার হত্যার পর সামরিক বিজয়ের বাইরেও বেশ কয়েকটি কৌশলগত অর্জন নিশ্চিত করতে চাইছেন ইসরাইলের নেতারা। তা হলো ইসরাইলের পক্ষে আঞ্চলিক (ল্যান্ডস্কেপ) ভূখণ্ড পুনর্নিধারণ এবং ভবিষ্যতের যেকোনো আক্রমণ থেকে তার সীমানা রক্ষা করা। রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
মার্কিন নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। এর আগেই ইসরাইল গাজায় হামাস এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর সর্বোচ্চ ক্ষতি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। জানুয়ারিতে নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেয়ার আগে একটি ‘বাফার জোন’ তৈরি করতে এই সময়টাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে ইসরাইল।
পশ্চিমা কূটনীতিক, লেবানিজ ও ইসরাইলি কর্মকর্তা এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সূত্রের মতে, হিজবুল্লাহ এবং হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করার মাধ্যমে ইসরাইল নিশ্চিত করতে চায় যে, তার শত্রুরা এবং তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইরান পুনরায় সংগঠিত হবে না এবং ইসরাইলের নাগরিকদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজা যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকে চাপ দিতে সিনওয়ার হত্যাকাণ্ডকে ব্যবহার করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ইসরাইলি নেতারা বাইডেনের মেয়াদ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছেন এবং পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করবেন। তা ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বা রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বি ডোনাল্ড ট্রাম্প- যেই হোন না কেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ার ইস্টার্ন অ্যাফেয়ার্সের সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড শেঙ্কার যিনি এখন ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট থিঙ্ক ট্যাঙ্কের একজন সিনিয়র ফেলো। তিনি বলেছেন, ইসরাইলের মগজে এই অঞ্চলে একটি নতুন ল্যান্ডস্কেপ এবং একটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের চিন্তাটা ঘুরপাক খাচ্ছে।
কারণ শেঙ্কারের মতে, ২০২৩ সালের অবস্থায় ইসরাইল এখন আর নেই। ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালে হামাসের হামলার আগে, ইসরাইল ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং অন্য শত্রুদের রকেট হামলার হুমকি সহ্য করার মতো অবস্থায় ছিল। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। এখন ইসরাইল সমুচিত জবাব দিতে সক্ষম।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ইসরাইলের বিমান হামলায় নতুন হামাসপ্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হন।
এদিকে যে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি বিবেচনা করার আগে হিজবুল্লাহকে তার উত্তর সীমান্ত থেকে দূরে ঠেলে দিতে ইসরাইল সামরিক অভিযান ত্বরান্বিত করছে। এছাড়া ১ অক্টোবর ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা হামলা চালানোর পরিকল্পনাও করছে ইসরাইল। ছয় মাসের মধ্যে ইসরাইলের উপর ইরানের ওই হামলা ছিল দ্বিতীয় সরাসরি আক্রমণ।
গত মাসে লেবাননে শুরু করা ইসরাইলের একটি স্থল আক্রমণের লক্ষ্য ছিল হিজবুল্লাহকে তার উত্তর সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পেছনে সরিয়ে দেয়া। লিতানি নদীর পেছনে নিয়ে যাওয়া এবং ইরানের সামরিক সমর্থনের পরেও সশস্ত্র শিয়া গোষ্ঠীটিকে সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত্র করা।
কিন্তু ইসরাইলের হামলা থেকে লেবাননকে রক্ষা করা প্রয়োজন উল্লেখ করে হিজবুল্লাহ নিরস্ত্রীকরণ মানছে না। গত বছর থেকে এর যোদ্ধারা গাজায় হামাসের সাথে সংহতি প্রকাশ করে ইসরাইলের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই গুলিবিনিময় চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরাইল গত বছর বেশ কয়েকটি আরব রাষ্ট্রকে জানিয়েছিল যে, তারা গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনের দিকে একটি ‘বাফার জোন’ তৈরি করতে চায়। কিন্তু এটি কতটা গভীর হবে বা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে এটি কীভাবে কাজ করবে তা এখনও স্পষ্ট করেনি ইসরাইল।
মে মাসে, ইসরাইলি বাহিনী ফিলাডেলফিয়া করিডোরে অবস্থান নেয়। করিডোরটি মিশরের সঙ্গে গাজার দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর একটি সরু স্ট্রিপ। যার মধ্যদিয়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের সমস্ত স্থল সীমান্তের উপর ইসরাইল কার্যকর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে।
তাই ইসরাইল বলছে, তারা এই গ্যারান্টি ছাড়া স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে না যে, গাজা যুদ্ধের পরে যারাই সেটি চালাবে তারা করিডোরটিকে হামাসের কাছে অস্ত্র সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হবে।
সূত্র: রয়টার্স