ডিসেম্বর ১০, ২০২৩ ৯:১০ পূর্বাহ্ণ
শনিবার থেকে শুরু হয়েছে মিশরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ প্রয়োজন না হলে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে ১৮ ডিসেম্বর। বরাবরের মতোই খুব স্বাচ্ছন্দ্যে এবারের নির্বাচনে জয়ী হয়ে স্বপ্নপূরণের পথে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি (৬৯)। তৃতীয় মেয়াদে আবারও ক্ষমতায় বসার জোর সম্ভাবনা আছে তার।
মিশরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিসি তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন চলতি বছরের ২ অক্টোবর। সেসময় তিনি এই নির্বাচনকে ‘নতুন ম্যান্ডেটের স্বপ্ন’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এর আগে ২০১৩ সালের ৩ জুন অভ্যুত্থানে ব্রাদারহুডের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুতির মাধ্যমে ক্ষমতায় বসেছিলেন সিসি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে জিতেছিলেন ৯৭ শতাংশ ভোটে। আর এবার ক্ষমতায় গেলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ টানা ১৬ বছর মিসরের দণ্ডমুণ্ডের মালিক হয়ে থাকবেন এই স্বৈরশাসক।
প্রবাসী মিশরীয়রা ইতোমধ্যেই ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট পদে ভোট দিয়েছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মূলত ২০২৪ সালের বসন্তের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু দেশটির বর্তমান গুরুতর অর্থনৈতিক সংকট আর অন্যদিকে গাজা যুদ্ধ নির্বাচনের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে। এএফপির খবরে বলা হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের যে আমেজে তুলনামূলক তার ছিটেফোঁটাও নেই এবার। রমরমা প্রচার-প্রচারণায়ও নজরকাড়া উত্তাপ নেই ভোটার মহলে। হয়তো সবাই ধরেই নিয়েছেন, আগের নির্বাচনগুলোর মতো এবারও ‘ভূমিধস’ জয় পাবেন দেশের ‘গণতন্ত্রখেকো’ স্বৈরশাসক সিসিই। অনেকে আবার বলছেন, মিসরের অর্থনৈতিক সংকট চরমে উঠার আগেই নিরুত্তাপ ভোটে প্রেসিডেন্ট পদে তার ‘বৈধতাকে’ পাকাপোক্ত করে নিতে চাইছেন সিসি।
নির্বাচন ব্যবস্থা : সাধাণরত দুই দফায় মিসরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দফায় কোনো প্রার্থী যদি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে তাহলে আবার ভোটগ্রহণ করা হয় দ্বিতীয় দফায়।
সরাসরি সর্বজনীন ভোটে ছয় বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন দেশটিতে। এ ছয় বছরের মেয়াদে শুধু একবার এই পদের নবায়ন করা হয়। তবে মিসরের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪০-এর অনুযায়ী, পরপর দুই মেয়াদের বেশি কোনো প্রেসিডেন্টের দেশ শাসনের বিধান ছিল না। কিন্তু ২০১৯ সালে একটি সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সিসি সরকার প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ চার থেকে ছয় বছর বাড়ানোসহ তৃতীয় মেয়াদে কোনো প্রেসিডেন্টকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বৈধতা দেওয়া হয়।
মিসরের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রার্থীদের অবশ্যই মিসরের নাগরিক হতে হবে। তবে তাদের পিতামাতা, স্বামী অথবা স্ত্রীর কেউ যদি অন্য দেশের নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে তারা প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। মিসরের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রার্থীদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ৪০ বছর। আর সামরিক পরিষেবা সম্পূর্ণ করেছেন অথবা অব্যাহতি পেয়েছেন এমন প্রার্থীরা যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। ২০১৪ সালের মিসরের সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সম্ভাব্য প্রার্থীদের অবশ্যই সংসদের কমপক্ষে ২০ জন সদস্য বা ১৫টি বা তার গভর্নরেটের কমপক্ষে ২৫ হাজার যোগ্য ভোটারের কাছ থেকে অনুমোদন পেতে হবে। মিসরে মোট ভোটকেন্দ্র আছে ১০ হাজার ৮৫টি। এছাড়া মিসরীয় কনস্যুলেট ও দূতাবাসে প্রবাসীদের জন্য ভোটকেন্দ্র আছে ১৩৮টি। দেশটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৬ কোটি ৭০ লাখ।