নভেম্বর ১৯, ২০২৪ ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান আবার কমিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিস রেটিংস। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির পূর্বাভাসে পরিবর্তন এনেছে। গত সাড়ে পাঁচ মাসের মাথায় মুডিস আবার বাংলাদেশের ঋণ মানের রেটিংস কমাল এবং অর্থনৈতিক পূর্বাভাস স্থিতিশীল থেকে ঋণাত্মক করেছে। এর আগে গত ৩১ মে মুডিস বাংলাদেশের ঋণমান এক দফা কমিয়েছিল।
মুডিস বলেছে, গত পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ঋণমান ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আরও এক ধাপ নেতিবাচক পূর্বাভাস দিল। সোমবার সিঙ্গাপুর থেকে মুডিসের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে গত ৩১ মার্চে মুডিসের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল বলে মন্তব্য করেছিল। সাড়ে পাঁচ মাস পর সংস্থাটি সার্বিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল অবনমন করে ঋণাত্মক হিসাবে চিহ্নিত করেছে মুডিস। পাশাপাশি সরকারের ঋণ মানের রেটিংস ‘বি১’ থেকে হ্রাস করে ‘বি২’তে নামিয়ে আনা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদি ইস্যুয়ার রেটিংস নট প্রাইম গুণসম্পন্ন নয় হিসাবেও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। গত পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে ঋণমান ও অর্থনৈতিক পূর্বাভাস হ্রাস করেছে মুডিস।
বিশ্বের প্রধান তিনটি ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হচ্ছে মুডিস। গত ৩১ মে প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছিল। সেবার তারা ঋণমান এক ধাপ কমিয়ে বিএ৩ থেকে বি১ এ নামিয়ে এনেছিল। এর কারণ হিসেবে ওই সময়ে মুডিস জানিয়েছিল, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে উচ্চমাত্রার দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁকি রয়েছে। যে কারণে সংস্থাটি ঋণমান কমিয়ে ছিল।
মুডিস বলেছে, বাংলাদেশের ঋণমান হ্রাস করার জন্য মূলত দেশটিতে বর্তমানে সৃষ্ট রাজনৈতিক ঝুঁকি বৃদ্ধি ও নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা থেকে এ বিষয়গুলোকে প্রধান্য দিয়ে মুডিস রেটিংস তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে দেশটিতে একটি সরকারের পরিবর্তন ঘটেছে। এসব বিষয় সরকারের নগদ অর্থ প্রবাহের ঝুঁকি, বৈদেশিক খাতে দুর্বলতা ও ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে ঘাটতি পূরণে আরও বেশি স্বল্পমেয়াদি ঋণের ওপর নির্ভরশীল করে তুলবে। সম্পদের গুণগত মানের ঝুঁকির কারণে ব্যাংকিং ব্যবস্থার পুঁজি ও তারল্যসংক্রান্ত দুর্বলতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে রাষ্ট্রের দায়সংক্রান্ত ঝুঁকিও বেড়েছে। এসব ঝুঁকি আগামীতে অর্থনীতিকে সংকটে ফেলে দেবে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ ও বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীরা আরও বেশি ঋণ দিলেও বৈদেশিক খাতে দুর্বলতার ঝুঁকি আগের মতোই রয়ে গেছে। এর কারণ হিসাবে সংস্থাটি বলেছে, গত কয়েক বছর ধরেই দেশের রিজার্ভ কমছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সামাজিক ঝুঁকি বৃদ্ধি, একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপের অভাব রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির কারণে রাজনৈতিক ঝুঁকি বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যাশার চেয়েও এবার কম প্রবৃদ্ধি হবে। ফলে তা দেশটির দুর্বল রাজস্ব পরিস্থিতি ও বৈদেশিক খাতের চাপ আরও বাড়াতে পারে। এই ঝুঁকি তৈরি হয়েছে দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে পণ্য সরবরাহের সমস্যার কারণে। এর ফলে রপ্তানি ও তৈরি পোশাক খাতের সম্ভাবনা মেঘাচ্ছন্ন হয়েছে। এসব কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিস্তৃত সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে তা বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা রয়েছে। যদি সরকার মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরা ও উচ্চ বেকারত্ব কমানোসহ দ্রুত ফলাফল না দিতে পারে, সেক্ষেত্রে সংস্কারের পেছনে যে রাজনৈতিক অর্থ রয়েছে তা দ্রুতই চলে যেতে পারে।
ঋণমান কমানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের স্থানীয় মুদ্রা (এলসি) ও বিদেশি মুদ্রার (এফসি) ঊর্ধ্বসীমা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এলসির জন্য ঊর্ধ্বসীমা বিএ২ থেকে বিএ৩ এবং এফসির ঊর্ধ্বসীমা বি১ থেকে বি২ তে নামানো হয়েছে।