শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। তবে এবারের রমজানে ফিলিস্তিন অবরুদ্ধ গাজার চিত্রটা হতে যাচ্ছে ভিন্ন। কারণ এমন এক পরিস্থিতিতে উপত্যকাটির বাসিন্দারা রমজানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যখন সেখানে নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। মৃত্যুর পরোয়ানা মাথায় নিয়েই তাই রমজানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।
গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু করে গাজায় প্রায় ছয় মাস ধরে চলছে ইসরাইলি বাহিনীর হামলা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার (১০ মার্চ) জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় উপত্যকাটিতে নিহতের সংখ্যা ৩১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছেন ৭২ হাজারের বেশি মানুষ।
হতাহতের পাশাপাশি রমজানের আগমুহূর্তে ক্ষুধাও বিপর্যস্ত করেছে গাজাবাসীকে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে উপত্যকাটিতে অনাহারে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, উত্তর গাজার অবস্থা মর্মান্তিক। সেখানে সড়কপথে ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে না। আর রমজান যখন এগিয়ে আসছে, তখন প্রাণহানিও বাড়ছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যানুযায়ী, চলমান সংঘাতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলি হামলায় এক হাজারের বেশি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। তবে রমজানে এ দুর্দশার মধ্যেও নামাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
রমজানের আগে গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে একটি বার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন,
রমজান শান্তি, সহনশীলতা ও উদারতার মূল্যবোধকে তুলে ধরে। গাজায় যারা ভয়াবহ দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন, তাদের সবার প্রতি সংহতি ও সমর্থন জানাচ্ছি আমি। এ কঠিন সময়ে রমজান আমাদের আশার আলো দেখাবে।
রমজান ঘিরে গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল এবং এ নিয়ে মিসরের রাজধানী কায়রোয় আলোচনারও আয়োজন করা হয়েছিল। তবে সে আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। ফলে রমজানেও যে ইসরাইলি বর্বরতা থামছে না, সেটি প্রায় নিশ্চিত। তবে বীরত্বের সঙ্গে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র রমজান মাসটি পালন করতে চান ফিলিস্তিনিরা।
এদিকে, ফিলিস্তিনে রমজানের চাঁদ দেখা গেছে। সৌদি ও আরও কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে সোমবার (১১ মার্চ) থেকে রোজা শুরু হচ্ছে দেশটিতে।
রোববার (১০ মার্চ) সন্ধ্যায় জেরুজালেম ও ফিলিস্তিন অঞ্চলের গ্র্যান্ড মুফতি সুপ্রিম ফতওয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শেখ মুহাম্মদ হুসেইন ঘোষণা করেছেন, ফিলিস্তিনে সোমবার থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে।
গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার মধ্যেই পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানাচ্ছেন বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। এরই মধ্যে যেসব দেশ রোজা শুরুর তারিখ ঘোষণা করেছে সে দেশগুলো হলো- অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত, ইরাক, বাহরাইন, সিরিয়া, জর্ডান ও ইয়েমেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় রোজা শুরুর তারিখও জানা গেছে।
সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স