মোদির তৃতীয় মেয়াদে শপথ রোববার

মোদির তৃতীয় মেয়াদে শপথ রোববার

আন্তর্জাতিক

জুন ৭, ২০২৪ ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ৯ জুন তৃতীয়বার শপথ নিচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) প্রধান নরেন্দ্র মোদি। এর আগে শনিবার তিনি শপথ নেবেন বলে খবর প্রকাশিত হলেও বৃহস্পতিবার সর্বশেষ খবরে জানা যায়, রোববার সন্ধ্যায় তিনি শপথ নিচ্ছেন। খবর হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ, এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকার।

সারা দেশে ৪৪ দিনব্যাপী সাত দফা ভোটগ্রহণ শেষে মঙ্গলবার লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর বুধবার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে মোদি পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দিলে তিনি সেটা গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে মোদিকে রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করেছেন।

এর আগে জানা গিয়েছিল, রোববার অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে পারেন তেলুগু দেশম পার্টির (টিডিপি) প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু। এর আগের দিন শনিবার শপথ নেওয়ার কথা ছিল নরেন্দ্র মোদির। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে বৃহস্পতিবার জানা যায়, রোববার প্রধানমন্ত্রী পদে মোদি শপথ নেবেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১২ জুন চন্দ্রবাবু শপথ নিতে পারেন।

বিজেপি সূত্রে জানা যায়, মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল ও ভুটানের রাজা জিগমে খেসর নামগিয়াল ওয়াংচুক।

শেখ হাসিনা ও বিক্রমাসিংহে দুজনের সঙ্গেই বুধবার টেলিফোনে কথা বলেছেন নরেন্দ্র মোদি। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তারা থাকবেন বলে মোদিকে জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা এনডিএ-এ?র বিপুল জয়ের জন্য মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আর তিনি সেখানে উপস্থিত থাকবেন বলেও জানিয়েছেন। অন্যদিকে ভুটান, নেপাল ও মলদ্বীপের প্রধানমন্ত্রীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব কেউও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেতে পারেন। আগামী মাসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় এ মাসে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত দেশের ৫৪৩ আসনের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে এনডিএ পেয়েছে ২৯২টি আসন। বিরোধী জোট ‘ইনডিয়া’ পেয়েছে ২৩৩টি আসন। অন্যান্য দলের প্রাপ্ত আসনসংখ্যা ১৮টি। এখানে তাৎপর্যপূর্ণ হলো, এনডিএ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ২০১৪ ও ২০১৯ সালের মতো এবার বিজেপি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কারণ, ৫৪৫ আসনের (দুটি মনোনীত আসনসহ) লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭৩টি আসন। বিজেপি এককভাবে জিতেছে ২৪০টি আসনে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে গত সরকারের ১৯ জন মন্ত্রী পরাজিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে স্মৃতি ইরানিসহ ৪ জন ক্যাবিনেট র‌্যাংকের। সরকার টিকিয়ে রাখতে তাই জোটসঙ্গীদের ওপর নির্ভর করা ছাড়া বিজেপির কোনো বিকল্প নেই। এ পরিস্থিতিতে মন্ত্রী পদের দাবি নিয়ে যাচ্ছে টিডিপি এবং জেডিইউ-এর মতো দলগুলো। সরকার বাঁচাতে তাই তাদের সব দাবির অধিকাংশ মেনে নিয়ে বিজেপিকে আপসও করতে হচ্ছে।

এ লক্ষ্যে বুধবারই এনডিএ-এর শরিকদের নিয়ে দিল্লিতে বৈঠকে বসেছিলেন মোদি, অমিত শাহসহ নেতারা। এনডিএ শরিকদের ভরসায় মোদিকে সরকার গড়তে হবে। এ পরিস্থিতিতে কোনো একটি শরিক দল বেঁকে বসলে সমীকরণ বদলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণেই মোদি সরকার গঠনে বেশি সময় নিতে চাইছেন না। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বৈঠকেই শপথ গ্রহণের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সেটা প্রকাশ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার।

নীতীশ-নাইডুদের চাপে নরেন্দ্র মোদি : দিল্লির বৈঠকে সরকারকে সমর্থনের বিনিময়ে নরেন্দ্র মোদির কাছে একগুচ্ছ দাবি জানিয়েছেন এনডিএ-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই শরিক-নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডু।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, নীতীশ কুমার ও নাইডু দুজনেই তাদের রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিহারের জন্য বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দাবি করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার চাইলেই এ মর্যাদা দিতে পারে। এখন পর্যন্ত ভারতে ১১টি রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া আছে। তবে চতুর্দশ অর্থ কমিশন বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা বলেছে, এর পরিবর্তে ওইসব রাজ্যের প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হোক। নীতীশ ২০০৬ থেকে এবং নাইডু অন্ধ্রপ্রদেশ ভাগের পর থেকে এ বিশেষ মর্যাদা দাবি করে আসছেন। বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা পেলে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রে ৯০ ভাগ অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার দেয়। এছাড়া রাজ্য আর্থিক ও পরিকাঠামোগত নানা সুবিধা পায়।

বিহারে ৫২ শতাংশ মানুষ গরিব। দেশের সবচেয়ে গরিব রাজ্যগুলোর মধ্যে বিহার অন্যতম। তাই নীতীশ বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা চান। আর অন্ধ্র ভাগ হওয়ার পর শিল্পপ্রধান এলাকা চলে গেছে তেলেঙ্গানায়। অন্ধ্রের ওপর আর্থিক দায় বেড়েছে; কিন্তু রাজস্ব কমেছে। তাই তারাও বিশেয মর্যাদা চায়। দুই রাজ্যকে এ মর্যাদা দিতে গেলে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার বাড়তি দায় চাপবে।

রাজ্যের জন্য বিশেষ মর্যাদার পাশাপাশি নীতীশ তার দলের জন্য চার পূর্ণমন্ত্রী ও একটি প্রতিমন্ত্রী পদ এবং চন্দ্রবাবু তিনটি পূর্ণমন্ত্রী ও দুটি প্রতিমন্ত্রীর পদ চেয়ে তদবির করেছেন। সেই সঙ্গে স্পিকার পদও চাইছেন চন্দ্রবাবু।

ভোটের আগে নীতীশের সঙ্গে বিজেপির সমঝোতায় বলা হয়েছিল, এনডিএ ক্ষমতায় এলে নীতীশকে তিনটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ দেওয়া হবে। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে বিজেপির কাছে এখন চারটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ চেয়েছেন নীতীশ। পরিকাঠামো সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়গুলোর দিকেই নীতীশের নজর রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে রেল, গ্রামোন্নয়ন, জলসম্পদের মতো মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে চন্দ্রবাবু নাইডু দাবি করেছেন তিনটি পূর্ণমন্ত্রী ও দুটি প্রতিমন্ত্রী পদ। নীতীশের মতোই জলসম্পদ, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে তিনি নিজেদের এমপিদের দেখতে চাইছেন। তালিকায় রয়েছে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়ও।

ছোট দলগুলোর মধ্যে বিহারে চিরাগ পাসোয়ান পেয়েছে ৫টি আসন। তাদের দাবি একটি পূর্ণ ও একটি প্রতিমন্ত্রী পদ। ওই রাজ্যেই একটি আসন পেয়েছে জিতনরাম মাঝির হাম। তাদেরও দাবি একটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ। মহারাষ্ট্রে সাতটি আসন পেয়েছে একনাথ শিন্দের শিবসেনা। তারাও একজন পূর্ণ ও একজন প্রতিমন্ত্রীর দাবি জানিয়েছে। মন্ত্রিত্ব পেতে মুখিয়ে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের আরএলডি দলের জয়ন্ত চৌধুরী, আপনা দলের অনুপ্রিয়া পটেল, জেডিএসের এইচ ডি কুমারস্বামীরাও।

আগে মোদি সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল বলে এসব ছোট দলকে গুরুত্ব দিতেই দেখা যায়নি বিজেপিকে। পরিস্থিতির ফেরে এখন ছোট দলের দাবি মানা ছাড়া রাস্তা নেই বলে মনে করছে বিজেপি নেতৃত্ব। দাবি না মানা হলে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ভয় রয়েছে।

সরকার গঠনের রাস্তায় এখনই নয়, সময়ের অপেক্ষায় ‘ইনডিয়া’: ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর দিল্লিতেই বুধবার সন্ধ্যায় ‘ইনডিয়া’ জোটের শরিকদেরও বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গে জানিয়েছেন, ইনডিয়া ব্লক ভারতবাসীকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। মানুষের জনাদেশ বিজেপিকে যোগ্য জবাব দিয়েছে। ভারতের সংবিধানকে রক্ষা করা, মূল্যবৃদ্ধিকে রুখে দেওয়া, বেকারত্ব ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে মানুষ ভোট দিয়েছেন।

গণতন্ত্রকে বাঁচাতে মোদির নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ইনডিয়া জোটের লড়াই চলবে। ইনডিয়া জোটের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীও। ইনডিয়ার মতে, মোদি ব্র্যান্ড কার্যত শেষ। কিন্তু সরকার গঠনের রাস্তায় এখনই হাঁটতে নারাজ ইনডিয়া জোট। এমনটাই জোটের আলোচনায় উঠে এসেছে। সঠিক সময়ে সঠিক সুযোগের জন্য এখন অপেক্ষা করবে ইনডিয়া ব্লক। তবে ফ্যাসিস্ট বিজেপির বিরুদ্ধে তাদের লড়াই চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *