অক্টোবর ৭, ২০২৩ ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সফরে আমাকে কেউই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। এ ধরনের কোনো কথা হয়নি এবং কেউ এ ধরনের কথা আমাকে জিজ্ঞাসাও করেনি।
শুক্রবার গণভবনে তার সাম্প্রতিক জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভানসহ অন্যান্য সরকার-রাষ্ট্রপ্রধান ও সংস্থার কর্তাব্যক্তিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবও দেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে অংশগ্রহণের জন্য ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন। ২৩ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ও ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাজ্য সফর শেষে গত বুধবার দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক অভিজ্ঞতা ২০০৭-০৮ সালে হয়েছে আমাদের। তারপরেও আবার কেউ তা চাইতে পারে। আর সিস্টেমটাতো বিএনপিই নষ্ট করে ফেলেছে। কাজেই এরকম কোনো কথা হয়নি।
গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে জেইক সুলিভানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয়। গত মাসে, তিনি নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাতে ফলপ্রসূ আলোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, তাদের যে আন্দোলন সেই আন্দোলনে আমরা বাধা দিচ্ছি না। তারা আন্দোলনের নামে লোক সমাগম করে যাচ্ছে, ভালো কথা। এতদিন চুরি চামারি করে যে অবৈধ অর্থ তারা বানিয়েছিল আর যত টাকা মানিলন্ডারিং করেছিল সেগুলোর এখন ব্যবহার হচ্ছে। অন্তত সাধারণ মানুষের হাতে কিছু টাকাতো যাচ্ছে। আমি সেভাবেই বিবেচনা করি। যত আন্দোলন করবে তাতে সাধারণ মানুষের পকেটে কিছু টাকা যাবে। তাই আমি বলেছি কিছু বলার দরকার নেই তারা আন্দোলন করতে থাকুক। কারণ এই টাকাগুলোতো বের হওয়াটাও দরকার।
আবারো অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষের জানমালের ক্ষতি করার বিষয়ে তথাকথিত আন্দোলনকারীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, যদি মানুষের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে, ঐ রকম অগ্নিসন্ত্রাস বা নাশকতার প্রচেষ্টা চালায় তাহলে তো ছাড়বো না। কারণ আমাদের সঙ্গে জনগণ আছে।
শেখ হাসিনা জনগণের ওপর আস্থা রেখে বলেন, আমাদের কিছু করা লাগবে না। জনগণকে ডাক দিলে তারাই ঠান্ডা করে দেবে। কারণ তারা যখন অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল তখন সাধারণ মানুষই ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এবারো তাই হবে।
বিএনপির এই অর্থের উৎস সম্পর্কে সাংবাদিকদের খোঁজ নেয়ারও আহ্বান জানান সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী তার সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং বিএনপির আন্দোলন ছাড়াও আগামীর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, ডেঙ্গুসহ চলমান অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা, সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন, বিভিন্ন দূতাবাস এবং রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তা প্রদানে সরকারের কার্যকর ভূমিকাসহ আসন্ন দূর্গাপূজাকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বিভিন্ন সমকালীন বিষয়ে খোলামেলা সব প্রশ্নের উত্তর দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের যে সংস্কারগুলো ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন পাস করা, নির্বাচন কমিশন যেটা সম্পূর্ণ প্রধামন্ত্রীর দফতরের ওপর নির্ভরশীল ছিল সেটাকে আলাদা করে দিয়ে, পৃথক বাজেট বরাদ্দ দিয়ে তাদের আরো শক্তিশালী করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জনগণের মাঝে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং জনগণের ভোটের যে অধিকার ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করা হয় তা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া- এই কাজগুলোতো আওয়ামী লীগই করেছে। আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোট আন্দোলনের মাধ্যমে বহু রক্তের বিনিময়ে এসব অর্জন করেছে।
তিনি বিদেশি কূটনীতিকদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই কথাটা আমি বলেছি তাদের, আমাকে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন শেখাতে হবে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রাম আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে করেছি এবং সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারপর সেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পেরেছে বলেই জনগণ আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে। একটানা ক্ষমতায় আছি বলেই আজকে অর্থনৈতিক উন্নতিটা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামল ছাড়া অন্য যারা ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে কি উন্নতি দিয়েছে? এমনকি জনগণের মুখে এক মুঠো ভাত পর্যন্ত তুলে দিতে পারেনি। সারাবছর দেশের উত্তরবঙ্গ এমনকি দক্ষিণের অনেক জায়গাতেও দুর্ভিক্ষ লেগে থাকতো।
প্রধানমন্ত্রী তথাকথিত সুশীল সমাজের সমালোচনা করে বলেন, কিছু স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেকে বললেন, মেগা প্রজেক্ট আমরা করেছি। কিন্তু দরিদ্রদের জন্য আমরা নাকি কিছু করিনি। এ রকম বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারা ঘরের ভেতরেই আছেন। দিন দুনিয়া তাকিয়ে দেখেন না।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দরিদ্র বিমোচনসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের সম্পাদকবৃন্দ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা ছাড়াও সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্য, সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন।