এপ্রিল ১২, ২০২৪ ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ
শতবছরের নির্যাতন নিপীড়নের কারণে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর। এর ফলে অন্তত এক ডজন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর তৈরি হয়েছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে। এসব সশস্ত্র বিদ্রোহ গোষ্ঠীর ভেতর রাখাইন রাজ্যে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। এই সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য রাখাইনে ‘মুসলিম আরাকান রাজ্য’ প্রতিষ্ঠা করা। এটি রোহিঙ্গা মুসলিমদের অধিকার আদায়ের পুরানো সংগঠন।
যতক্ষণ আরাকান জান্তা সরকারের হাত থেকে মুক্তি না পাবে ততক্ষণ আরএসও এবং আরাকান আর্মি লড়াই অব্যাহত রাখবে বলে জানা গেছে। এ লড়াইয়ে জান্তা সরকারকে হারাতে পরলে রোহিঙ্গা মুসলিমরা তাদের অধিকার ফিরে পাবেন বলে মনে করেন তারা আরএসও নেতারা। জান্তা বাহিনীর পতনে আরো জোড়ালো ভূমিকা রাখতে চায় সংগঠনটি।
১৯৭৮ সালে আরএসও’র জন্ম। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ট্রেনিং প্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের নিয়ে গঠিত হয় আরএসও। তুরস্ক, কুয়েত, সৌদি আরব সহ বিভিন্ন মধ্যপ্রাচ্যের দেশে শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে এই সংগঠনের। তারা এই সংগঠনের জন্য পাঠান অর্থ। আরএসও’র প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনুস বর্তমানে মালয়েশিয়া রয়েছেন। তার অনুসারীদের মধ্যে টিং টং ওরফে মো. আইয়ুব খান এখন সংগঠনের সাময়িক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আইয়ুব খান বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, এরই মধ্যে আমরা ১০-১৫টি সেনা চৌকি দখল করেছি। আমরা নির্যাতিত। আমরা লড়াই করে যাবো বিজয় না আসা পর্যন্ত। আমরা জান্তা সরকারে হাত থেকে বাঁচার লক্ষ্যে লড়ছি। এই লড়াইয়ে আমরা অনেকটা সফলও হয়েছি। কিন্তু ‘আরসা’ সংগঠনটি জান্তা সরকারের হয়ে কাজ করার ফলে কিছুটা সমস্যায় আছি।
তিনি আরো বলেন, নতুন করে আরএসও’র তৎপরতায় বিস্তৃতি ঘটছে। আমাদের বাহিনীতে এখন হাজার হাজার সদস্য আছে। আরএসও মূলত নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করছে। বহু আগের তৈরি হওয়া এই সংগঠনটি বিন্দু থেকে বৃত্তে পরিণত হয়েছে।
বেশ দ্রুত বদলে যাচ্ছে মিয়ানমারের পরিস্থিতি। সেখানে একের পর এক জায়গা দখল করে নিচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। বিভিন্ন জায়গায় নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে জান্তা সরকার। মিয়ানমারে যে তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তাদের মধ্যে অন্যতম আরাকান আর্মি। গত নভেম্বর মাসে জান্তা সরকারের প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, দেশটির সান রাজ্যে শুরু হওয়া যুদ্ধ সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পুরো দেশই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। এদিকে মিয়ানমারে আরাকান আর্মির প্রভাব এখন বাড়তে শুরু করেছে। একই সঙ্গে রাখাইন অঞ্চলও বাড়তে শুরু করেছে।
আরাকান আর্মির প্রধান টিওয়ান এমরাট নেয়াং স্থানীয় গণমাধ্যম ইরাবতীকে বলেন, রাখাইন রাজ্যের অবশ্যই নিজস্ব সেনাবাহিনী থাকতে হবে। একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী থাকার অর্থ হচ্ছে- রাখাইনের নৃ-গোষ্ঠীগুলোর অস্তিত্ব টিকে থাকবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কাচিন বিদ্রোহীদের কাছে প্রশিক্ষণ নেয়া আরাকান আর্মি মিয়ানমারের জন্য সম্ভাব্য বড় ধরনের সামরিক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। যেটি রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির চেয়ে অনেক শক্তিশালী হবে।
এই পটভূমিতে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাখাইনে আরাকান আর্মির শক্ত অবস্থানের কারণে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে একটি উভয় সংকট তৈরি হতে পারে। আরাকান আর্মির এক মুখপাত্র দাবি করেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের অন্যতম অংশীদার তারা।
বাংলাদেশ থেকে ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে আরো ৭ বছর আগে। কিন্তু সেই সংকট সমাধানের কোনো কূল-কিনারা হচ্ছে না। রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির কৃতিত্ব যত বাড়বে ভূ-রাজনীতি তত বেশি জটিল হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। কারণ তাদের ঘোষিত লক্ষ্য হচ্ছে ফেডারেল রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে একরকম স্বাধীনতা বা স্বায়ত্তশাসন। রাখাইন অঞ্চলে জান্তা সরকারের কৃতিত্ব দুর্বল করে আরাকান আর্মির প্রভাব বাড়তে থাকায় সেটি রোহিঙ্গা সমস্যার শাঁখের করাত হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম শাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, রাখাইন অঞ্চলে জান্তা সরকারকে হটিয়ে দিয়ে আরাকান আর্মি যদি শক্ত অবস্থান নেয় তাহলে রোহিঙ্গা সংকটের জন্য ইতিবাচক বা নেতিবাচক যেকোনো কিছুই হতে পারে।
অন্যদিকে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। এই সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য রাখাইনে ‘মুসলিম আরাকান রাজ্য’ প্রতিষ্ঠা করা। যার ফলে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে এই সংগঠনটি নেতিবাচকভাবে কাজ করবে বলে মনে করেন অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক।