ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪ ১:৫৩ অপরাহ্ণ
রাজধানী ঢাকার পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা হালনাগাদের উদ্যোগ নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তালিকা শেষে আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে রাজধানীর গেজেট-বহির্ভূত পরিত্যক্ত সম্পত্তিগুলোকে গেজেটভুক্ত করা হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে গত মাসেই ১১ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন হয়েছে। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজধানীর অলিগলি যেখানেই পরিত্যক্ত সম্পত্তি পাওয়া যাবে, যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেগুলো সরকারের অধিকারে নিয়ে আসা হবে।
পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার জন্য সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ‘পরিত্যক্ত বাড়ি (সম্পূরক বিধানাবলি) আইন, ২০২৩’ পাস হয়েছে। আইনটি পাস হওয়ার পর পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা করতে তৎপর হয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এজন্য গত মাসে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মনিটরিং অনুবিভাগ) মো. হাফিজুর রহমানকে সভাপতি করে ১১ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আইন উপদেষ্টা, ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) একজন করে প্রতিনিধি।
কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে কমিটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। দুই-তিন মাসের মধ্যে কিছু সম্পত্তি গেজেটভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে কী পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানা যায়নি। এছাড়া আদালতে পরিত্যক্ত ঘোষিত বেশকিছু সম্পত্তি নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজও শুরু করেছে কমিটি।
রাজধানীর পরিত্যক্ত সম্পত্তিগুলোর বেশির ভাগই বেদখল অবস্থায় রয়েছে উল্লেখ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তি নিয়ে আইন পাস হয়েছে। আইনটি এখন আমাদের হাতে এসেছে। আমি এটা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে দিয়েছি। এ লক্ষ্যে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর অলিগলি যেখানেই পরিত্যক্ত সম্পত্তি আছে, তালিকা করে সেগুলো গেজেটভুক্ত করা হবে। আমরা কয়েকটি পর্বে কাজ করব। প্রথম পর্যায়ে যে সম্পত্তি নিয়ে কোনো জটিলতা নেই, মামলা নেই—সেগুলো চিহ্নিত করে গেজেটভুক্ত করব। আগামী দুই মাসের মধ্যেই বড় সাফল্য পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা করছি। বেদখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তিগুলোও চিহ্নিত করে দখলমুক্ত করার জন্যে বিশেষ কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে।’
রাজধানী ঢাকায় এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৭২টি পরিত্যক্ত বাড়ি শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। চলতি সপ্তাহেই জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালে স্বতন্ত্র সদস্য সাইফুল ইসলামের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
মন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পরিত্যক্ত বাড়ি সব থেকে বেশি রয়েছে মিরপুর এলাকায়। এখানে মোট ২ হাজার ৫৮২টি পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মোহাম্মদপুর। এখানে পরিত্যক্ত বাড়ি আছে ১ হাজার ৫৪২টি। এছাড়া গুলশানে ১২৮টি, বনানীতে নয়, মগবাজারে ৬২, তেজগাঁওয়ে ৩৬, নাখালপাড়ায় ১৯, ক্যান্টনমেন্টে ২৬, বাসাবোয় ৩৮, শাহজাহানপুরে ১০, খিলগাঁওয়ে ১২, জুরাইনে দুই, মতিঝিলে ৭২, রমনায় ১৫৮, সূত্রাপুরে ৩২০, লালবাগে ১৭৪, কোতোয়ালিতে ৪৬, ধানমন্ডিতে ৮৮, লালমাটিয়ায় ২৫, যাত্রাবাড়ীতে চার ও মানিকনগরে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে। এসব পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে চারটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ও ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী আরো জানান, সংরক্ষিত পরিত্যক্ত বাড়িতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণকাজে ব্যবহার হচ্ছে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাড়া ভিত্তিতে বরাদ্দ করা হচ্ছে। বিক্রয়যোগ্য পরিত্যক্ত বাড়িগুলো প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিতে বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান, শহীদ পরিবার, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বরাদ্দপ্রাপ্তদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। গত তিন অর্থবছরে ঢাকার পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে ১২ কোটি ৬৮ লাখ ১৬ হাজার ৪২৯ টাকা ভাড়া আদায় হয়েছে। এ সময়ে বিক্রি থেকে মূল্য আদায় হয়েছে ২ কোটি ৩১ লাখ ২ হাজার ৭৩৭ টাকা।
এর আগেও কয়েকবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পরিত্যক্ত সম্পত্তি নিয়ে কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু এ ধরনের উদ্যোগ নানা চাপে সফল হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তিগুলো দখলমুক্ত করে সরকারের আয়ত্তে নিয়ে আসা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এ সম্পত্তিগুলো কেন এতদিন বেদখল ছিল, কারা দখল করে রেখেছে, সরকারের কোন কোন কর্মকর্তা সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় থেকে সহযোগিতা করেছেন, এগুলোও তদন্ত করে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। আমরা দেখেছি, সরকার যখনই পরিত্যক্ত সম্পত্তি নিয়ে কাজ শুরু করে তখনই একদল প্রভাবশালী বিভিন্ন পন্থায় কর্মকর্তাদের থামিয়ে দেয়। ফলে বারবার উদ্যোগ নেয়ার পরও তা আলোর মুখ দেখে না। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়।’