নভেম্বর ১২, ২০২৩ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ
সারাদিন কর্মব্যস্ততার পর আপনি ক্লান্ত। আর তাই রাতে লম্বা একটা ঘুমের জন্য শুয়ে পড়লেন বিছানায়। কিন্তু ঘুম কিছুতেই আসছে না! বহু লোকেরই এ সমস্যা হয়েছে কোনো না কোনো সময়।
সুতরাং প্রশ্ন হলো, কীভাবে নিজের মনকে চাপমুক্ত করে চমৎকার ঘুমের জন্য নিজেকে তৈরি করা যায়?
এটা কিন্তু খুব কঠিন কিছু নয়। ঘুমোতে যাবার কিছু নিয়ম-কানুন আছে যা সবাই শিখে নিতে পারে।
এখানে তেমনটি পাঁচটি টিপস দেওয়া হলো, যা ভালো ঘুমের কিছু পরীক্ষিত কৌশল।
(এক) প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিন: আপনি কি সত্যি সত্যিই ক্লান্ত?
আপনি ভাবতে পারেন: এ আবার কেমন প্রশ্ন? আমি যে ক্লান্ত সেটা কি আমি নিজে বুঝবো না?
আসলে কথাটা হলো, আপনি যদি সত্যি বিছানায় যাবার জন্য তৈরি হন – তাহলে সহজেই ঘুম এসে যায়। তবে একজনের কাছে যা ‘স্বাভাবিক’ ঘুমানোর সময় – অন্য কেউ কেউ সে সময়টায় ঘুমাতে পারেন না।
যদি আপনার এ সমস্যা থাকে- তাহলে দিনের বেলা যত বেশি সম্ভব সময় প্রাকৃতিক আলোর মধ্যে কাটাতে চেষ্টা করুন, এবং সেটা শুরু করুন ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই।
বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে এর ফলে রাত-জাগা লোকদের ‘দেহ-ঘড়ি’কে আগেভাগে ঘুমানোর জন্য তৈরি করা যায়।
দিনের বেলা যথেষ্ট ব্যায়াম ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিছানায় যাবার আগের চার ঘণ্টার মধ্যে ব্যায়াম না করলেই ভালো। কারণ এর ফলে শরীরে যে এ্যাড্রিনালিন নি:সৃত হয় – তা হয়তো আপনাকে ঘুমোতে দেবে না।
আপনি যদি ছোট্ট শিশু না হন এবং আপনার কম ঘুম হয়- এমন সমস্যা থাকে, তাহলে দিনের বেলা- বিশেষ করে বিকেল ৪টার পর- না ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এতে আপনার রাতে ঘুম হবার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে।
(দুই) আপনি কি খাচ্ছেন বা পান করছেন সেদিকে নজর দিন
ঘুমানোর আগে গুরুপাক, চিনিযুক্ত খাবার বা মদ্যপান করবেন না। প্রকৃতপক্ষে ভালো ঘুমের প্রক্রিয়া শুরু হয় বিছানায় যাবার সময়ের অনেক আগে। তাই ঘুমাতে যাবার অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে থেকেই ক্যাফেইন আছে এমন কোনো পানীয় পান করা বন্ধ করে দিন।
ক্যাফেইন এমন এক জিনিস যা আপনার শরীরে থাকে অন্তত ৯ ঘণ্টা। কাজেই ভালো করে ঘুমাতে চাইলে দুপুর ১২টার পর থেকেই চা, কফি এবং কোক-পেপসির মতো ‘ফিজি ড্রিংকস’ পান বাদ দেবার কথা ভাবুন।
অনেকেই খালি পেটে ঘুমাতে পারেন না। তবে একেবারে ভরপেট খেয়ে বিছানায় গেলেও ঘুমের অসুবিধা হতে পারে।
যদি পারেন তাহলে ঘুমের সময়ের প্রায় চার ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন। এবং তাতে ভারী গুরুপাক খাবার বা চিনি-যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এতে ঘুম না হওয়া বা রাতে জেগে ওঠার সমস্যা কেটে যাবে।
এ্যালকোহল বা মদ্যপান আপনাকে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করতে পারে- কিন্তু আপনার সেই ঘুম খুব গভীর হবে না। যাকে বলে ‘র্যাপিড আই মুভমেন্ট’ বা ‘আরইএম স্লিপ’- তা মানুষের স্মৃতি ও শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং অগভীর ঘুমে তার ক্ষতি হয়।
তা ছাড়া মদ্যপানের ফলে শরীরে বেশি প্রস্রাব তৈরি হয়, তাই রাতে টয়লেটের জন্য ঘুম ভেঙে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
(তিন) ঘুমের আগে রিল্যাক্স করার জন্য কিছু করুন
বিছানায় যাবার আগে এমন একটা কিছু করুন যা আপনার দেহ ও মনকে চাপমুক্ত করবে। এটা আপনাকে প্রতিদিনই করতে হবে, যাতে এটা করলেই আপনার শরীর এবং মন্তিষ্ক বুঝে যায় যে ঘুমাোর সময় হয়েছে।
এটা যেকোনো কিছু হতে পারে। যেমন হালকা গরম পানিতে স্নান, মেডিটেশন বা ধ্যান করা, আপনার জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কথা বলা, ডায়েরি লেখা, বই পড়া, বা আলো কমিয়ে দিয়ে গান শোনা।
কেমন সঙ্গীত ঘুমের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত? ২০১৫ সালে ম্যাক্স রিখটার নামে একজন কম্পোজার নানা গবেষণার পর ৮ ঘণ্টার সঙ্গীত রচনা করেছেন শুধু ঘুমের জন্য।
সে যাই হোক, আপনি ঘুমানোর জন্য যে সঙ্গীতই শুনুন না কেন -আসল শর্ত হলো সেটা শুনে আপনার যেন মনের সব চাপ দূর হয়ে গিয়ে একটা শিথিল ভাব আসে।
(চার) ঘুমের সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক ভুলে যাবেন না
এর অর্থ এই নয় যে ঘুমের আগে আপনাকে গোসল করতে হবে বা দাঁত মাজতে হবে- যদিও এগুলো বেশ উপকারী।
আসল কথা হচ্ছে, ঘুমের জন্য আদর্শ পটভূমি তৈরি করা। প্রতিদিন এক সময়ে ঘুমাতে যান, ঘুমের আগে উত্তেজক বা এ্যালকোহল পান এড়িয়ে চলুন, ঘরে ঘুমের পরিবেশ তৈরির দিকে নজর দিন।
আমাদের বেডরুমের হওয়া উচিত ঘুমের জায়গা, অন্য কিছুর নয়।
যে ঘর অন্ধকার, অতিরিক্ত গরম নয়, জিনিসপত্রে ঠাসা নয়, যেখানে নানা যন্ত্রপাতি বা মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেয় এমন কিছু নেই।
ঘুমের এক ঘণ্টা আগে থেকে টিভি-স্মার্টফোন থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। এগুলো থেকে যে নীল আলো ছড়ায় তা আপনার মস্তিষ্ককে ঘুমোতে দেয় না।
যদি আপনি রেডিওতে কিছু শোনেন তাহলে স্লিপ টাইমার ব্যবহার করুন যাতে এটা একটা নির্দিষ্ট সময়ে বন্ধ হয়ে যায়।
(পাঁচ) আপনার ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন
আপনি হয়তো কোনো সফল উদ্যোক্তা বা বিশ্বনেতার সম্পর্কে গল্প শুনেছেন- কীভাবে তারা মাত্র চার ঘণ্টা ঘুমিয়েও পুরো দিন কর্মক্ষম থাকেন। সত্য কথাটা হলো: বেশির ভাগ লোকই এটা পারে না।
কম ঘুম হলে তা আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বহু বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
রাতের পর রাত যদি পাঁচ ঘণ্টার কম ঘুম হয়- তাহলে হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক, বা ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ঘুম কম হলে তা আপনার আয়ুও কমিয়ে দেয়।
প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং নিশ্চিত করুন যেন প্রতি রাতে আপনার সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম হয়।
এর মানে হচ্ছে – প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা – এবং তা মেনে চলুন ছুটির দিনেও।