ইসরাইলি সামরিক অভিযানের কারণে গাজার দক্ষিণের শহর রাফাহ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি। সোমবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ।
চলতি বছরের মে মাস থেকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল ও তাদের অবকাঠামো ভেঙে ফেলার জন্য রাফাহ শহরে হামলা শুরু করেছে। ফলে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী, রাফাহর বেসামরিকদের প্রায় ২০ কিলোমিটার (১২ মাইল) দূরের একটি ‘সম্প্রসারিত মানবিক অঞ্চলে’ চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। রয়টার্স।
ইউএনআরডব্লিউএ সংস্থাটি বলেছে, হাজার হাজার পরিবার এখন খান ইউনুস শহরের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও ধ্বংসস্তূপগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। ‘ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ’ সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় পরিষেবা সরবরাহ করছে তারা। তবে অনেক ফিলিস্তিনির অভিযোগ, তারা যেখানেই যায় সেখানেই ইসরাইলি হামলার ঝুঁকি রয়েছে। ইসরাইলের চলমান এই হামলার জেরে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে ত্রাণ পাঠানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে মিসর।
ইসরাইল যদি রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংয়ের গাজার অংশ থেকে নিজেদের সেনা ও নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার না করে তাহলে এই ত্রাণ সরবরাহের জন্য পথটি ফের চালু করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে দেশটি। সোমবার মিসরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শৌকরি এ কথা বলেছেন। মাদ্রিদে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে শৌকরি বলেছেন, ফিলিস্তিনি প্রশাসন ছাড়া রাফাহ ক্রসিং পরিচালনা করা কঠিন।
তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য ১৯৭৯ সালের মিসর-ইসরাইল শান্তিচুক্তি এখনো দৃঢ় ভিত্তি হিসাবে কাজ করছে। সবার উচিত এই গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিটি টিকিয়ে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে ইসরাইলি নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে কবে থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে তা জানানো হয়নি।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রতিবাদে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু। তার কার্যালয়ের মুখপাত্র জানান, ইসরাইলি পাসপোর্টের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের অঙ্গীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু। তিনি ইসরাইলি আগ্রাসনের শিকার ফিলিস্তিনিদের জন্য তহবিল সংগ্রহের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এদিকে এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটির নাগরিকদের খুব দ্রুত মালদ্বীপ ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে।
দেশ ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়ে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, মালদ্বীপে আপনারা কোনো বিপদে পড়লে আমাদের পক্ষে সহায়তা করা কঠিন হবে। মালদ্বীপ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে মোট ৫২৮ জন ইসরাইলি নাগরিক মালদ্বীপ ভ্রমণ করেছেন, যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ৪ হাজার ৬৪৪ জন। মালদ্বীপ ছাড়াও বর্তমানে আলজেরিয়া, বাংলাদেশ, ব্রুনেই, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, পাকিস্তান, সৌদিআরব, সিরিয়া ও ইয়েমেন ইসরাইলি পাসপোর্টধারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চালু আছে।
অন্যদিকে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি নিশ্চিত করতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তার একমাত্র পথ আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত এবং দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান।