নভেম্বর ৩, ২০২৩ ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ
দেশের প্রথম মেট্রোরেল পূর্ণতা পাচ্ছে আগামী রোববার থেকে। এদিনই শুরু হচ্ছে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে মেট্রোরেলের চলাচল। এর আগের দিন শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশে মেট্রোরেল চলাচলের উদ্বোধন করবেন। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেছিলেন শেখ হাসিনা। শনিবার বাকি অংশের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পাচ্ছে এই মেট্রোরেল; যা এমআরটি লাইন-৬ হিসাবে চিহ্নিত। এ পথে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দূরত্বের পথ মাত্র ৩৮ মিনিটে পার হতে পারবেন যাত্রীরা। এলিভেটেড লাইন হওয়ায় রাজধানীর চিরচেনা যানজটে পড়তে হবে না যাত্রীদের। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পুরো পথের জন্য ভাড়া গুনতে হবে ১০০ টাকা। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি থাকায় পুরোদমে চালু হতে আরও কিছু সময় লাগবে। বর্তমানে আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করছে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৮৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছেন। মতিঝিল-কমলাপুর পর্যন্ত পুরোদমে চালু হলে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং প্রতিদিন ৬ লাখ ৭৭ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন এ ট্রেনে। বিপুলসংখ্যক যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করলে মেট্রোরেলের নিচে অবস্থিত সড়কে ছোট-বড় যানবাহন সংখ্যা কমে আসবে। এতে একদিকে কর্মঘণ্টা বাঁচবে, অপরদিকে গাড়ির জ্বালানি এবং পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতের ব্যয়ও কমে আসবে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সময় সাশ্রয়ের (টাইম কস্ট) কারণে দৈনিক প্রায় ৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং গাড়ির অপারেশন খরচ বাবদ আরও ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে; যা জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক হবে।
মেট্রোরেলের উদ্বোধন নিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এমআরটি লাইন-৬ মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ ৪ নভেম্বর (কাল শনিবার) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বাণিজ্যিক চলাচল বন্ধ থাকবে। তিনি জানান, সেদিন এমআরটি লাইন-৫-এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এমআরটি লাইন-৫ এর আওতায় হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার পাতাল রেল আর সাড়ে ৬ কিমি. উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, উদ্বোধনের দিন বিকাল ৪টায় মতিঝিলের জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
জানা গেছে, এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পটি ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে জাইকা। বাকি ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা বহন করছে বাংলাদেশ সরকার। মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাইকার সঙ্গে চুক্তি সই হয়। প্রথমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণের কথা ছিল। যাত্রীদের সুবিধা বিবেচনায় সেটি কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দূরত্ব এক দশমিক ৬ কিলোমিটার। বর্তমানে বর্ধিত অংশের অর্থাৎ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণের কাজ চলছে। যদিও নির্মাণকাজের শুরুতে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের বাস্তব কাজ শেষ হয়েছে ৯৮ দশমিক ০৮ শতাংশ।
জানা গেছে, তিনটি ধাপে এই মেট্রোরেল নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়। এ অংশের কাজের অগ্রগতি ৯৭.৩১ শতাংশ। তৃতীয় ধাপে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নির্মাণকাজ চলছে। ২০২৫ সালের জুনে এ অংশের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ অংশের অবকাঠামো নির্মাণের অগ্রগতি ১৭.৩০ শতাংশ।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশন রয়েছে। নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি থাকায় প্রথম পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সকালে সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা চলবে। মতিঝিল থেকে আগারগাঁও অংশে শুধু মতিঝিল, সচিবালয় ও ফার্মগেট-এই তিন স্টেশন থামবে মেট্রোরেল। প্রতি ১০ মিনিট পরপর ট্রেন ছাড়বে। আপাতত বিজয়সরণি, কাওরান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশনে মেট্রোরেল থামবে না। তবে আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত আগের মতো রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে। সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে চলে আসায় অনেকটা তড়িঘড়ি করে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ উদ্বোধন করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সরকার মেগা প্রকল্পগুলোর ধারাবাহিক উদ্বোধন করছে।
মেট্রোরেলের পথ ও স্টেশন : মেট্রোরেল উত্তরা থেকে পল্লবী, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, খামারবাড়ী, ফার্মগেট, শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর হয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে। এ পথের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। এই পথের স্টেশনগুলো হচ্ছে-উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয়সরণি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল। প্রতিটি ট্রেনে দুই হাজার ৩০৮ জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। সর্বোচ্চ গতি ১০০ কিলোমিটার।
মেট্রোরেলের ভাড়া : উত্তরা থেকে মতিঝিল ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। উত্তরা থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ পর্যন্ত ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া ৪০ টাকা, শেওড়াপাড়া ৫০ টাকা এবং আগারগাঁও পর্যন্ত ৬০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর উত্তরা থেকে আগারগাঁও-বিজয়সরণি পর্যন্ত ৬০ টাকা, ফার্মগেট ৭০ টাকা, কাওরান বাজার-শাহবাগ ৮০ টাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রেস ক্লাব (বাংলাদেশ সচিবালয়) পর্যন্ত ৯০ টাকা এবং মতিঝিল পর্যন্ত ১০০ টাকা আদায় করা হবে।