লোভের কারণে দ্বীন ও ইমান ধ্বংস হয়

লোভের কারণে দ্বীন ও ইমান ধ্বংস হয়

ধর্ম স্পেশাল

আগস্ট ১৬, ২০২৪ ৮:১৮ পূর্বাহ্ণ

আমাদের ভেতরে অসীম এক গুহা আছে, সর্বোগ্রাসী লোভ। যা প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা ট্রেঞ্চের চেয়েও সুবিশাল। সব কিছু গোগ্রাসে গিলতে থাকে। লোভ মানুষের অন্তরের মারাত্মক ব্যাধি। অর্থবৃত্ত, যশ-খ্যাতি আর পদের লোভ মানুষের অন্তরের ইমানের রংকে ধূসর করে দেয়। দ্বীনের প্রদীপকে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের মতো ছিন্নভিন্ন করে, অন্ধকারে ছেড়ে দেয় উদ্বাস্তুর মতো। রাসূল (সা.) বলেছেন, দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলপালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া অত বেশি ধ্বংসকর নয়, যত না বেশি মাল ও মর্যাদার লোভ মানুষের দ্বীনের জন্য ধ্বংসকর।’ (তিরমিজি : ২৩৭৬)। কবি বলেন, ‘সচ্ছলতা হারানোকে দরিদ্রতা ভেব না। বরং দ্বীন হারানোই হলো সবচেয়ে বড় দরিদ্রতা’।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তুমি কখনো প্রসারিত কর না তোমার দুচোখ সে সবের প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে দুনিয়ার জীবনের জাঁকজমক স্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসাবে দিয়েছি। যাতে আমি সে বিষয়ে তাদের পরীক্ষা করে নিতে পারি। আর তোমার রবের প্রদত্ত রিজিক সর্বোৎকৃষ্ট ও অধিকতর স্থায়ী। (সূরা তাহা আয়াত : ১৩১)।

সম্পদের লোভের চেয়ে ভয়াবহ হলো নেতৃত্ব ও মর্যাদার লোভ। নেতৃত্ব ও মর্যাদার লোভে মানুষ দুহাতে মুষলধারে বৃষ্টির মতো অর্থ ব্যয় করে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সত্বর নেতৃত্বের লোভী হয়ে পড়বে। অথচ সেটি কিয়ামতের দিন লজ্জার কারণ হবে। অতএব, কতই না সুন্দর দুগ্ধ দায়িনী ও কতই না মন্দ দুগ্ধ বিচ্ছিন্নকারিণী’। (বুখারি : ৭১৪৮)। পদপ্রার্থী হয়ে অর্থের বিনিময়ে নির্বাচকদের প্রভাবিত করার ঘটনা নতুন কিছু নয়। পদ পেয়ে অহংকারবোধ এবং মানুষের কাছে প্রশংসা কামনা করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা তাদের কৃতকর্মের প্রতি খুশি হয় এবং যা তারা করেনি তা নিয়ে প্রশংসিত হতে পছন্দ করে, তুমি তাদের আজাব থেকে মুক্ত মনে কর না। আর তাদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব।’ (সূরা আল ইমরান আয়াত : ১৮৮)।

ভোগবাদী সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে, একদিন তো মরেই যাব, খাও-দাও ফুর্তি কর। জ্ঞান ও আমলের মাধ্যমে মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব কামনা। লোভ-লালসাই মানুষকে পরকালের কথা ভুলিয়ে রাখে। আসলেই রং-রসে পূর্ণ পৃথিবীর সফর শেষ হবে মুসাফিরের। তবে আল্লাহভীতি ও পরকালে জবাবদিহিতার ভয় মানুষকে অল্পে তুষ্টি হতে শিখায়।

রাসূল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আদম সন্তানকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক কদমও নিজের জায়গা থেকে সামনে নড়তে দেওয়া হবে না। তা হলো-তার জীবনকাল কীভাবে অতিবাহিত করেছে, যৌবনের সময়টা কীভাবে ব্যয় করেছে, ধন-সম্পদ কীভাবে উপার্জন করেছে এবং তা কীভাবে ব্যয় করেছে, সে দ্বীনের (ইসলাম) যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে সেই অনুযায়ী আমল করেছে কিনা বা কতটুকু করেছে। (তিরমিজি : ২৪১৬)। রাসূল (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদের দুনিয়াতে মঙ্গল দাও ও আখেরাতে মঙ্গল দাও এবং আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচাও’। (বুখারি : ৪৫২২)। আমাদের লক্ষ্য হোক, পার্থিব লোভমুক্ত জীবন এবং পরকালীন মুক্তি কামনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *