বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার মিরপুরে মো. সিফাত হোসেন (২৬) নামে এক তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এছাড়া বগুড়ায় সেলিম হোসেন (৪০) নামে এক শিক্ষক নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে হত্যা মামলা করেন নিহত সিফাতের বাবা কামাল হাওলাদার। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মিরপুর মডেল থানাকে এজাহার হিসাবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
শুক্রবার মিরপুর মডেল থানা মামলার এজাহার হিসাবে মামলাটি গ্রহণ করেন। এরপর মামলাটি আদালতে পাঠান। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী-আল ফারাবী মামলার এজাহার গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২২ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি এসএম জাহিদ, স্বপন বেপারী, আলমগীর, যুবলীগ নেতা মাহবুব, সরোয়ার হোসেন, রেজাউল হক ভূঁইয়া বাহার, রুহুল আমিন, হুমায়ুন রশিদ জহির, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মনোয়ার হোসেন বিপুল, জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা-১৪ সাবেক সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা-১৫ সাবেক সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার, মো. জিয়া, মো. জামান মিয়া, মো. মেহেদী হাসানসহ অজ্ঞাতনামা অনেকে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০ জুলাই মিরপুর-১০, ৯৮ সেনপাড়া এমএস পাওয়ারের সামনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ করছিলেন। সেই আন্দোলনের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। সিফাত হোসেন রাস্তা পার হয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিরীহ গরিব সিফাত হোসেন মৃত্যুবরণ করেন কিন্তু পুলিশ এ বিষয়ে কোনো মামলা গ্রহণ করেনি।
মামলার অভিযোগে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ছাত্র-জনতার নেওয়া যৌক্তিক দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছিল। কোনো উসকানি ছাড়া পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী একত্রিত হয়ে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বহু মানুষ হত্যা করে। এর মধ্যে সিফাত একজন।
বগুড়ায় নিহত শিক্ষকের বাবা সেকেন্দার আলী বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় হত্যা মামলা মামলা করেন। এতে শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে হত্যার নির্দেশদাতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে সদর বগুড়া থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, এ মামলায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, নিহত সেলিম হোসেনের বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জের পীরব ইউনিয়নের পালিকান্দা গ্রামে। তিনি কাহালু উপজেলার মুরইল লাইট হাউস উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। বগুড়া সদরের ইসলামপুর হরিগাড়িতে বসবাস করতেন। সেলিম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। ৪ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শহরের সাতমাথায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন তিনি। সেখানে আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সংসদ-সদস্যসহ সাত নেতার নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপর ককটেল ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর আবদুল মতিন সরকার ও আমিনুল ইসলাম রামদা দিয়ে কুপিয়ে এবং কাউন্সিলর আরিফুর রহমান আরিফ হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে তাকে জখম করে। পরে অন্য হামলাকারীরা আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে।
মামলায় ১০১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় ৪৫১ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন-সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, সাবেক এমপি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, সহসভাপতি টি. জামান নিকেতা, যুগ্ম-সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন, সাগর কুমার রায়, একেএম আসাদুর রহমান দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদৎ আলম ঝুনু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি, কোষাধ্যক্ষ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাছুদুর রহমান মিলন, দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল, যুববিষয়ক সম্পাদক মাশরাফি হিরো, উপদপ্তর সম্পাদক খালেকুজ্জামান রাজা, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবিন প্রমুখ।
বগুড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল বাছেদ জানান, শিক্ষক সেলিম হোসেন পুলিশের গুলিতে নিহত হননি। তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার বগুড়া শহরের নবাববাড়ী সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় মজিবর রহমান মজনু ও রাগেবুল আহসান রিপুসহ ২৮২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।