দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির মধ্যে বিভ্রান্তি ও হতাশা কিছুতেই কাটছেই না। একে অপরকে দোষারোপ করছে দলের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপির মধ্যে যেমন বিরোধ দেখা যাচ্ছে, তেমনই দেখা যাচ্ছে সিদ্ধান্তহীনতা।
আর বিএনপির মধ্যে একের পর এক সিদ্ধান্তহীনতা এবং স্ববিরোধী সিদ্ধান্তের কারণে দলটি আরো বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের পর বিএনপির মধ্যে আত্মসমালোচনা হচ্ছে একেবারে নীরবে, গোপনে। প্রকাশ্যে বিএনপি নিজেদের জয়ী ঘোষণা করলেও দলের নেতাকর্মীদের হতাশা থামাতে পারছে না। বিএনপির মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে দেখা যাচ্ছে সিদ্ধান্তহীনতা।
বিএনপি কী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে, নাকি আন্দোলনকে থামিয়ে এখন সংগঠন পুনর্গঠন করবে— এ নিয়ে দলটি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। ফলে কিছু নাম কা ওয়াস্তে কর্মসূচি হঠাৎ হঠাৎ দিয়ে আবার ঘরে ফিরে যাচ্ছে দলটি। এতে দলের ভেতর বিভ্রান্তি আরো বাড়ছে, বাড়ছে হতাশাও।
তারা মনে করেন, বিএনপিতে সংগঠন পুনর্গঠন নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে। বিএনপির মধ্যে কেউ কেউ ভাবছেন যে, দলের ভেতর দ্রুত একটি কাউন্সিল করে নেতৃত্বের পুনর্গঠন দরকার। আবার অনেকে মনে করছেন, শূন্যপদগুলো পূরণ করে সংগঠনে গতি আনা দরকার। সংগঠনকে কীভাবে পুনর্গঠন করা হবে, সেটি নিয়েও দলের মধ্যে রয়েছে সিদ্ধান্তহীনতা।
এদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে বিএনপির মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা হলো সবচেয়ে বেশি। নির্বাচনের আগে টানা দু বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল বিএনপি। কিন্তু নির্বাচনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। আর তাই বিএনপির মধ্যে বেড়েছে হতাশা। এরকম অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কৌশল নিয়ে বিপাকে পড়েছে দলটি। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন, ভারত বিরোধিতা করলে তাদের অস্তিত্বই বিপন্ন হবে। অথচ তারা প্রতিনিয়ত ভারত বিরোধীতা করে আসছে। ফলে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বিএনপি কোন পথে যাবে- এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে চলছে নানা রকম টানাপোড়েন এবং সমস্যা।
এছাড়াও ঐক্য প্রসঙ্গ নিয়েও বিএনপিতে চলছে সিদ্ধান্তহীনতা। বিএনপির অনেকেই মনে করছেন যে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম করা উচিত। আবার বিএনপির মধ্যেই কেউ কেউ মনে করেন যে, পুরনো ২০ দল বা জামাতের সঙ্গে তাদের ঐক্য পুনর্বিন্যস্ত করা উচিত। কেউ কেউ মনে করেন যে, বিএনপি একলা চলো অবস্থায় ভালো। আর এরকম ভাবনা গুলো নিয়ে বিএনপি কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছে না। যার ফলে দলের মধ্যে দেখা দিচ্ছে এক ধরনের অস্থিরতা এবং হতাশা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জনগণের কাছে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিএনপি নেতারা এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
তিনি বলেন, তাদের বিদেশি প্রভুদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও নির্বাচনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়, তারা জনগণের ক্ষমতায়নেও বিশ্বাস করে না।
শুক্রবার আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।