ডিসেম্বর ২, ২০২৩ ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
জয়ের সুবাস পাওয়া গিয়েছিল চতুর্থ দিন শেষেই। একদিকে নিউজিল্যান্ডের দরকার দুই শতাধিক রান। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৩ উইকেট। ফলে বাস্তবতা নিরিখে আজ বাকি ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতা। ম্যাচ জিততে চাইলে কিউইদের যে অবিশ্বাস্য কিছুই করতে হতো!
না, অসাধ্য সাধন করতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশও প্রত্যাশা অনুযায়ী বোলিং করেছে। মাঝে সাউদি-সোধিদের ব্যাটে জয় পেতে অপেক্ষা কিছুটা বেড়েছে, এই যা। তবে ঠিকই হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছে টাইগাররা। যার ফলে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে কিউইদের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছে শান্তর দল।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিজেদের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৩১০ ও ৩৩৮ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে প্রথম ইনিংসে ৩১৭ রান করেছিল কিউইরা। জয়ের জন্য ৩৩২ রানের লক্ষ্যে নেমে ১৮১ রানে গুটিয়ে গেছে কিউইরা। চায়ের রাজ্যে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে টাইগারদের জয় ১৫০ রানে।
সিলেটকে বলা হয় বাংলাদেশের লাকি ভেন্যু। যেখানে সোধিকে আউট করার মাধ্যমে টেস্ট ফরম্যাটে বাংলাদেশের স্মরণীয় এক জয় নিশ্চিত করেন তাইজুল। সাকিব-তামিম না থাকায় খর্বশক্তির দল নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে টেস্ট হারানো নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়। আরো বড় বিষয়, জয় দিয়ে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন যাত্রা শুরু করল টাইগাররা।
এ ম্যাচে শুরু থেকেই আধিপত্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। যার শুরুটা হয়েছিল টস জিতে নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যাটিং নেয়ার মাধ্যমে। মাহমুদুল হাসান জয়ের ৮৬ রানের ইনিংসে ভর করে ৩১০ রান করে বাংলাদেশ। যেখানে বাকি প্রায় সবারই ব্যাট হাতে ছিল কাছাকাছি অবদান। এ ইনিংসে গ্লেন ফিলিপসের ক্যারিয়ারসেরা ৪ উইকেটের বোলিংয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ আরো বড় হয়নি।
জবাবে প্রথম ইনিংসে ৭ রানের লিড নেয় নিউজিল্যান্ড। দলের সেরা ব্যাটার কেন উইলিয়ামসন এখানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন, খেলেন ১০৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। ৪ উইকেট নিয়ে এই ইনিংসে বাংলাদেশের সেরা বোলার তাইজুল ইসলাম। তবে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনবার ব্রেক থ্রু এনে দেওয়া মুমিনুল ইসলামের বোলিংকে খাটো করে দেখার কোনো উপায় নেই।
নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে আরো গোছালো বাংলাদেশ। যেখানে ১০৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন শান্ত। মুশফিকুর রহিম করেন ৬৭ রান। শেষদিকে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের এমন দায়িত্বশীল ইনিংসে বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। আসে জয়ের ভিত। যেখানে কিউইদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিতে পারেন আজাজ প্যাটেল।
চতুর্থ ইনিংসে তিন শতাধিক রান তাড়া করা যেকোনো পিচেই কঠিন। চতুর্থ দিনে নিউজিল্যান্ডের ৭ উইকেট তুলে নিয়ে সেই কাজ আরো কঠিন করে দেন টাইগার বোলাররা। বল হাতে এই ইনিংসে নায়ক তাইজুল ইসলাম, যিনি শিকার করেছেন ৬ উইকেট। কিউইদের হয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ড্যারিল মিচেল খেলেছেন সর্বোচ্চ ৫৮ রানের ইনিংস।
ক্রিকেটাররা দেখিয়ে দিলেন, সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা দিয়ে টেস্টেও সেরা সাফল্য আনতে পারেন তারা। বিসিবি এবার এই ফরম্যাটকে নিয়ে আরেকটু বেশি সিরিয়াস হবে কী? দেশের ক্রিকেটের স্বার্থেই যে এটা বড্ড প্রয়োজন!