রোজা রেখে যদি কারো স্বপ্নদোষ হয়, তাহলে তার রোজা হবে কি? এবং রোজাদারের স্বপ্নদোষ হলে তখন করণীয় কী?
প্রশ্নটির উত্তর জানার আগে আমরা সংক্ষেপে স্বপ্নদোষ সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নিই; যা পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে।
বীর্যথলির ধারণক্ষমতা পূর্ণ হওয়ার পর ঘুমন্তাবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপথে বীর্যপাত ঘটার মাধ্যমে দেহে বীর্যের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রিত হয়, একেই স্বপ্নদোষ বলা হয়। স্বপ্নদোষের সময় অনেকে স্বপ্নে অবচেতনভাবে যৌন কর্মকাণ্ডের প্রতিচ্ছবি অবলোকন করেন, তবে উক্ত অনুভূতি ছাড়াও স্বপ্নদোষ সঙ্ঘটিত হয়।
স্বপ্নদোষ হলে রোজার বিধান কী?
রোজা থাকা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ, এটি ইচ্ছাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই রোজা সম্পূর্ণ করবেন। কাজা বা কাফফারা কিছুই লাগবে না।
কেউ কেউ মনে করেন, রোজা অবস্থায় যদি স্বপ্নদোষ হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যায়। তাদের এ ধারণা ঠিক নয়। স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভাঙে না। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, ৩টি বস্তু রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। যেমন
(১) বমি করলে। তা অল্প কিংবা বেশি হোক।
(২) শিঙ্গা লাগানো। রোগের জন্য শরীরে শিঙ্গা লাগালে রোজার কোনো ক্ষতি নেই।
(৩) স্বপ্নদোষ। নারী হোক কিংবা পুরুষ; রোজা রাখা অবস্থায় দিনের বেলায় স্বপ্নদোষ হলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। (মুসনাদে বাযযার, মাজমাউয যাওয়ায়েদ তিরমিজি, বায়হাকি)
উল্লেখ্য, সজ্ঞানে রতিক্রিয়া করলে রোজা ভঙ্গ হয়। ইচ্ছাকৃত হলে কাজা ও কাফফারা উভয়টা আদায় করতে হয়। আর অনিচ্ছায় হলে শুধু কাজা আদায় করতে হয়। স্বপ্ন যেহেতু স্বেচ্ছায় নয় এবং সজ্ঞানও নয়, তাই রোজা অবস্থায় রাতে বা দিনে স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙবে না; স্বাভাবিকভাবেই রোজা পূর্ণ করবেন। কাজা-কাফফারা কিছুই প্রয়োজন হবে না। প্রয়োজনমতো ওজু-গোসল ও পবিত্রতা অর্জন করে নামাজ আদায় করতে হবে। (ফতওয়ায়ে শামি, খণ্ড: ০২; পৃষ্ঠা: ৩৬৬)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, স্বপ্নদোষ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই স্বপ্নদোষের কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না। সুতরাং রোজা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙে যায়— এ ধারণা ঠিক নয়।