নভেম্বর ৩, ২০২৩ ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ
ইসরাইলের চরম বর্বরতা দিন দিন বেড়েই চলছে অবরুদ্ধ গাজায়। ইতিহাসের নির্মম যুদ্ধগুলোকে হার মানছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের ভয়াল আগ্রাসন।
অমানবীয় অত্যাচার প্রতিনিয়তই মনে করাচ্ছে পূর্বের কালো অধ্যায়। গাজার বর্তমান পরিস্থিতির ভয়াবহতা বারবার স্মরণ করাচ্ছে হিরোশিমার পারমাণবিক বিস্ফোরণকে। নির্বিচারে অসহায়-নিরস্ত্র মানুষদের হত্যায় হিরোশিমার চেয়েও বেশি বোমা নিক্ষিপ্ত হচ্ছে গাজায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোণঠাসা মুহূর্তে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ১৫ হাজার টন ওজনের এটম বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মুহূর্তে ঝলসে গিয়েছিল দুই শহরই। আজও সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে জাপান। ঠিক একই বর্বরতা গাজাতেও চালাচ্ছে ইসরাইল। মাত্র ২৭ দিনে ২৫ হাজার টন বোমা ফেলেছে। যা প্রায় দুটি পারমাণবিক বোমার সমান।
বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘ইউরো-মেডিটারেনিয়ান হিউম্যান রাইটস অবজারভেটরি’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জাপানের হিরোশিমার আয়তন ৯০০ বর্গকিলোমিটার। অন্যদিকে গাজার আয়তন ৩৬৫ বর্গকিলোমিটারের বেশি নয়। অর্থাৎ গাজায় ফেলে দেওয়া বিস্ফোরকগুলোর শক্তি হিরোশিমার চেয়েও ভয়াবহ। ইসরাইলের শক্তিশালী ধ্বংসাত্মক বোমা ১৫০ থেকে ১,০০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিবৃতি অনুযায়ী, শুধু গাজা শহরে দশ হাজারেরও বেশি বোমা ফেলা হয়েছে। নৃশংস হামলায় গাজা স্ট্রিপে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ তুলেছে সংস্থাটি।
এর মধ্যে রয়েছে ক্লাস্টার এবং ফসফরাস বোমা। গুরুতর এ বোমায় মানুষের শরীর মারাত্মভাবে পুড়ে যাচ্ছে। বোমায় আহত ব্যক্তিদের ত্বক গলে যায়। শরীরে অদ্ভুত ফোলাভাব এবং বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। অবশেষে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।
ইউরো-মেড সংস্থাটি জোর দিয়ে বলেছে, ইসরাইলের ধ্বংসাত্মক নির্বিচার এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ আক্রমণগুলো যুদ্ধের আইন এবং মানবিক আইনকে লঙ্ঘন করে। সংস্থাটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।
পাশাপাশি ফিলিস্তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচারের লক্ষ্যেও কাজ করছে তারা। তবে গাজায় ইসরাইলি বর্বরতার এ ইতিহাস নতুন নয়। বহু আগের। ১৫ বছর ধরেই তারা ইসরাইলের হামলার শিকার হয়ে আসছে।
২০০৮ সালে হামাস যোদ্ধাদের হত্যায় গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরাইল। এক সপ্তাহ ধরে চলা সেই যুদ্ধে গাজায় বোমা বর্ষণের পাশাপাশি উপত্যকায় ঢুকে আগ্রাসনও চালায় ইসরাইলি বাহিনী। সেসময় অন্তত এক হাজার ফিলিস্তিনি ও ১২ ইসরাইলি নিহত হন। গাজার অসংখ্য বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
এরপর ২০১২ সালে টানা আট দিন গাজায় নির্বিচার বোমা হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। যুদ্ধে অন্তত ১৮০ জন প্রাণ হারান। ২০১৪-২০২১ সালে পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ ও পবিত্র আল-আকসা মসজিদে প্রবেশে ইসরাইলের বিধিনিষেধের জেরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়।
ইসরাইলি হামলায় সে যুদ্ধে দুই হাজার ১০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন। হতাহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক। ২০২১ সালে গাজায় বড় ধরনের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
রমজান মাসে আল-আকসা মসজিদে যাওয়ায় ইসরাইল নিষেধাজ্ঞা দিলে সহিংসতা শুরু হয়। এতে গাজায় ২৫০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ২০২২ সালে আবারও গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরাইল। এর জবাবে হামাসও পালটা হামলা চালায়। টানা তিন দিন চলা এ যুদ্ধে অন্তত ১৪৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়।