জানুয়ারি ২৬, ২০২৪ ৯:০৯ পূর্বাহ্ণ
‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’ অর্থাৎ বিলম্বিত বিচার মানেই তা বিচারের নামে প্রহসন। প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় আগে এ কথা বলে গিয়েছিলেন ব্রিটেনের উদারপন্থি রাজনীতিবিদ উইলিয়াম ই. গ্ল্যাডস্টোন। গাজার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলায় এখন গ্ল্যাডস্টোনের ‘জাস্টিজ ডিলেইড’ পথেই হাঁটছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে)।
ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে- এই অভিযোগে আইসিজেতে দেশটির বিরুদ্ধে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর একটি মামলা দায়ের করে দক্ষিণ আফ্রিকা। চলতি মাসে নেদারল্যান্ডসের হেগে এই মামলার শুনানিও হয়েছে দুদিন। শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরাইলকে গাজায় গণহত্যা বন্ধের পাশাপাশি অঞ্চলটিতে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে দেশটি যেন বাধা না দেয় এই বিষয়েও আদেশ দিতে আদালতকে অনুরোধ করেছিল। দুপক্ষের শুনানি শেষে মামলায় রায় না দিয়ে ১৭ বিচারক প্যানেলের প্রেসিডেন্ট জোয়ান দোনোগু বলেন, ‘আগামী দিনে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে আদালত। আমাদের সঙ্গেই থাকুন।’ আইসিজে প্রেসিডেন্ট জোয়ান দোনোগুর সেই ‘আগামী দিন’টিই আজ শুক্রবার। অথচ আজকের রায়ে মামলার মূল এজেন্ডা ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধ নিয়েই কোনো রায় দেবেন না আদালত। অর্থাৎ, গাজায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ১১২তম দিনেও ইসরাইলের ‘যুদ্ধাপরাধ’ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে আইসিজে! নারী-শিশুসহ ২৫ হাজারেরও বেশি বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর পরও যুদ্ধাপরাধ আসলে কী তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন বিচারকরা! নাকি কোনো অদৃশ্য ইশারায় এখনই ইসরাইলকে যুদ্ধাপরাধী বলতে চায় না আইসিজে!
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরোধ অনুযায়ী, ইসরাইলের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপের নির্দেশনা দেবেন কিনা আইসিজে- সে বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে শুক্রবার। ঘোষণায় ‘ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে কিনা’ এই মূল রায় থেকেই দূরে থাকবেন জাতিসংঘের এই শীর্ষ আদালতের বিচারকরা। বুধবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে আইসিজে।
বিবৃতিতে আইসিজে আরও জানায়, ‘১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেল শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের হেগে স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা) দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরোধের বিষয়ে ঘোষণা দেবে।’ একটি সরকারি মুখপাত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ঘোষণার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি প্যান্ডর আদালতে উপস্থিত থাকবেন।
আদালতের ঘোষণার ব্যাপারে আইসিজে’র সাবেক আইনি কর্মকর্তা মাইকেল বেকার বলেন, ‘আদালত দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরোধের ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আদেশ দিতে বাধ্য নয়; তবে এটি যা সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত বলে মনে করে সেই ভিত্তিতে অস্থায়ী ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে পারে।’
বেকার আরও বলেন, আজকের আদেশে ‘আদালত সম্ভবত ইসরাইলের সামরিক অভিযানের ওপর নজর রাখবে।’ আদালত ইসরাইলি হামলা বন্ধ করার আদেশ দেবেন বলে তিনি মনে করেন না।
ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যুদ্ধাপরাধী বলতে না চাইলেও দেশটি গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে এ কথা বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ নাগরিক।
সম্প্রতি প্রকাশিত ইকোনমিস্ট/ইউগভ পোলের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ানের বুধবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনজনের মধ্যে অন্তত একজন মার্কিন ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে বলে বিশ্বাস করেন। তবে এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩৬ শতাংশ মানুষ। আর এ বিষয়ে মতামত জানায়নি ২৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ১৮-২৯ বছর বয়সিদের ৪৯ শতাংশ বলেছেন, ইসরাইল গণহত্যায় জড়িত। আর এর সঙ্গে একমত পোষণ করেননি ২৪ শতাংশ। এছাড়া ২৭ শতাংশ ইসরাইলের গণহত্যার বিষয়ে ‘অনিশ্চিত’ বলে মত পোষণ করেছেন।