জানুয়ারি ২০, ২০২৪ ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ
ফ্যাশনেবল এই দুনিয়ায় পুরুষের পোশাকের দিকে তাকালেই দেখা মেলে পকেটের বাহার, আর সেখানে নারীদের পোশাকে পকেটের দেখা পাওয়া একেবারেই দায়! কিন্তু কেন?
যেকোনো পোশাক কেনার আগে ছেলেদের নজর থাকে পকেটের দিকে। এই পোশাকের পকেট কী রকম? ফোন, চাবি, মানিব্যাগ আঁটবে তো? নাকি পকেটটা নিতান্তই ‘চিপা’? ছেলেরা যখন নিজেদের পোশাকের পকেট নিয়ে মাথা ঘামাতে ব্যস্ত, তখন নারীদের জামা, প্যান্ট কিংবা ড্রেস-কোনো পোশাকেই সচরাচর পকেটের দেখা মেলে না। ফ্যাশনের হাজার হাজার ট্রেন্ড এল, গেল কিন্তু নারীদের পোশাকে পকেটের অবস্থান পাকাপোক্ত হলো না।
নারীদের পোশাকে পকেট না থাকার কারণ খুঁজতে ফেরত যেতে হবে ৩০০ বছর আগে, সপ্তদশ শতকে। সপ্তদশ শতকে শুরু হয় পকেটের প্রচলন। এর আগে বহন করার জন্য নারী-পুরুষ উভয়েই ব্যবহার করত ছোট ছোট থলে বা ব্যাগ। কিন্তু সপ্তদশ শতকে শুরু হয় পোশাকের সঙ্গে পকেট যোগ করার প্রক্রিয়া।
সে সময়ে প্রত্যেকের পোশাকের সঙ্গেই একটি করে পাউচ বা থলে সেলাই করা থাকত। টুকটাক টাকাপয়সা অথবা প্রসাধনী সামগ্রী বহন করার জন্য যথেষ্ট ছিল সেগুলো।
থলের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকল চোরদের দৌরাত্ম্য। চোরদের হাত থেকে বাঁচতে শুরু হলো থলের ওপরে আলাদা কাপড়ের প্রলেপ দেওয়া, যাতে সহজে নজরে না পড়ে থলে।
কয়েক বছরের মধ্যেই পুরুষদের পোশাকের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়ে পকেট। জামা, প্যান্ট, কোট-প্রতিটি পোশাকেই মিলত পকেট। পুরুষের পোশাকের সঙ্গে যত সহজে মিশে গিয়েছিল পকেট, নারীদের পোশাকের সঙ্গে তত সহজে ‘মানিয়ে নিতে’ পারেনি। চোরদের ভয় থেকে বাঁচতে তখনো কয়েক স্তরের পোশাকের নিচে শোভা পেত নারীদের সেলাই করা থলে। এ ছাড়া নিজেদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র হাতের কাছে ব্যাগে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন নারীরা।
যদিও কেউ কেউ শখ করে নিজেদের পোশাকের সঙ্গে থলে যোগ করে নিত। ইউরোপজুড়ে তা প্রভাব বিস্তার করার আগেই শুরু হয় ফরাসি বিপ্লব। বদলে যায় ইউরোপের চিত্র। খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে পোশাক-পরিচ্ছদ, সবকিছুতেই আসে নতুনত্বের ছোঁয়া। ফরাসি বিপ্লব সবচেয়ে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে পোশাকে। লম্বা গাউন ধরনের পোশাকের পরিবর্তে দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে স্লিম ফিট পোশাক। দু-তিন স্তরের পোশাক পরিণত হয় এক স্তরের স্বস্তিদায়ক পোশাকে।
নতুন যুগের পোশাকে পকেট হয়ে ওঠে অপরিহার্য। ছেলেদের প্রতিটি পোশাকেই দেখা মিলত পকেটের। কিন্তু নারীদের পোশাকের পরিবর্তন হলো ঠিক উল্টো। আগে যেখানে কিছু পোশাকে পকেটের দেখা মিলত, সেখানে নতুন যুগে বিলুপ্ত হয়ে গেল পকেট। নারীদের পোশাক মানেই সেখানে দেখা মিলবে না পকেটের। ছেলেদের পোশাক আর নারীদের পোশাকের পার্থক্য হয়ে উঠল পকেট। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, বাজার থেকে শুরু করে যেকোনো কেনাকাটা-সব ধরনের আর্থিক লেনদেন পুরুষেরাই বেশি করতেন। অনেকে আবার মনে করেন নারীদের পোশাকে পকেট না থাকার পেছনে অন্যতম বড় কারণ তাদেরকে দমিয়ে রাখার ‘পুরুষতান্ত্রিক’ মানসিকতা। তাদেরকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিরুৎসাহিত করা!
অন্যদিকে ‘ক্যাপিটালিজম’ তো ছিলই। নারীদের পোশাকে পকেট না থাকায় ফুলে ফেঁপে ওঠে ব্যাগের ইন্ডাস্ট্রি। পাল্লা দিয়ে বাড়ে গুচি, ব্যালেন্সিয়াগা, ভ্যালেন্টিনোর মতো বিলাসী ব্যাগ কোম্পানির ব্যবসা। বর্তমান বিশ্বে নামকরা ব্র্যান্ড বলতে যে কয়েকটি ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে, তার বেশির ভাগের সূচনা নারীদের ব্যাগ তৈরি থেকে হয়েছে।
তবে আশার কথা হলো, সময়ের সঙ্গে নারী-পুরুষের পোশাকের পার্থক্য অনেকটাই কমে এসেছে। নারীরাও সমানে পরছেন শার্ট, প্যান্ট, স্যুট ইত্যাদি পকেটযুক্ত পোশাক।
এ ছাড়া পুরোদস্তুর ফেমিনিন পোশাক যেমন ফ্রক, গাউন, মিডি ড্রেস, বডি হাগিং ড্রেস, সোয়েটার, ম্যাক্সি বা স্লিপ ড্রেসগুলোতেও যুক্ত হয়েছে পকেট। ফ্যাশনের গুরুত্বপূর্ণ লালগালিচায়ও ফ্যাশনিস্তা নারীরা হাজির হচ্ছেন পকেটযুক্ত পোশাকে।
কেননা, কর্মজীবী নারীর সংখ্যা যেমন বেড়েই চলেছে, তেমনি নারী ফ্যাশন ডিজাইনারের সংখ্যাও অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আবার পুরুষ ফ্যাশন ডিজাইনাররাও নারীর চাহিদা আর প্রয়োজন বুঝে পোশাকের সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন স্টাইলিশ পকেট!