জানুয়ারি ২৪, ২০২৪ ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ
দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য সৌদি আরব আর ফ্রান্সের কাছে আরো বিনিয়োগ ও সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে দুই দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে পৃথক পৃথক সাক্ষাতে তিনি এ সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। সকাল সাড়ে ১০টায় প্রথমে গণভবনে যান ঢাকাস্থ সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আলদুহাইলান। এরপর বেলা সোয়া ১১টায় গণভবনে যান ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই। উভয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ মো. জিয়াউদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। দুই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।
মো. নজরুল ইসলাম বলেন, জনগণের আর্থসামাজিক অগ্রগতির জন্য আমাদের সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগ করতে দুই রাষ্ট্রদূতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৌদি আরব ও দেশটির জনগণ বাংলাদেশের হৃদয়ের খুব কাছের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব সবসময় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ সৌদি আরব এবং দেশটির জনগণের মঙ্গল কামনা করে। কারণ তারা মক্কা ও মদিনার দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম।
সাক্ষাতকালে সৌদি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সহযোগিতার অঙ্গীকার করেন। এ সময় পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদের একটি অভিনন্দন বার্তা হস্তান্তর করেন তিনি। বার্তায় যুবরাজ বাংলাদেশের উত্তরোত্তর উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। সৌদি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের ৮টি বিভাগে ৮টি মসজিদ ও ইসলামি ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য তার দেশের ইচ্ছার কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় একটি ইনস্টিটিউট স্থাপনের জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলেন।
সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামী দিনে হজ ও ওমরার প্রক্রিয়া আরো সহজ করা হবে। সৌদি আরব ও বাংলাদেশ ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে সহযোগিতা বাড়াতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। রাষ্ট্রদূত অন্যান্য পেশাদারদের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসাকর্মী নেয়ার ব্যাপারে তার দেশের আগ্রহের কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানান।
এরপর বেলা সোয়া ১১টায় গণভবনে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুইয়ের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ফ্রান্সসহ উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে ফ্রান্সসহ উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা দরকার। কারণ আমাদের দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে। এক সময় বাংলাদেশ দারিদ্র্য, বন্যা ও খরার দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল, যা এখন ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে। আজকের বাংলাদেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেশের প্রতিটি গ্রাম বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে। যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে। গ্রামীণ জনপদ অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। সরকার গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে যা ইতোমধ্যে শহর এলাকায় শুরু হয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের অবশ্যই তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। তারা এখানে মাদক চোরাচালান, অস্ত্র ও মানবপাচারের মতো বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি তাদের চাপ আরো বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের চতুর্থ প্রজন্ম এখানে বসবাস করছে। পাকিস্তান তাদের আর ফিরিয়ে নেবে বলে মনে হয় না। আমরা তাদের স্থায়ী পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে তাদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা করছি।
তিনি ফ্রান্সের গ্যাস কোম্পানিকে বাংলাদেশের গ্যাস খাতে এবং গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রী এয়ারবাস থেকে বিমান কেনা ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণসহ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বিষয়েও রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা করেন।
সাক্ষাতকালে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে বিজয় ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর একটি অভিনন্দন বার্তা শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই। ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফর এবং ২০২৩ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ফ্রান্স ও বাংলাদেশের মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। এই সফরগুলো দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ককে আরো জোরদার করেছে।
জলবায়ু সমস্যা সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, ফ্রান্স বাংলাদেশকে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’ পেতে সহায়তা করবে। তারা বাংলাদেশকে এই তহবিল ব্যবহারে অগ্রণী হিসেবে দেখতে চায়। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ একটি উদাহরণ। ফ্রান্স বাংলাদেশকে সবুজ জ্বালানি উত্তরণে সহায়তা করতে চায়। তার দেশ ব্লæ ইকোনমি ও সাইবার নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায়।