জানুয়ারি ২৬, ২০২৪ ৯:২৫ পূর্বাহ্ণ
দিনের পর এবার রাত। ধীরে ধীরে ঢাকার গণপরিবহনের আস্থার নাম হয়ে উঠছে মেট্রোরেল। বিশেষ করে উত্তরা থেকে মতিঝিলের পথজুড়ে যানজটের আঁধার পেরিয়ে আলোর পথ নিয়ে হাজির হয়েছে এমআরটি লাইন সিক্স।
দিন দিন মেট্রোরেলের পরিধি যেমন বাড়ছে, তেমনি সমান তালে বাড়ছে যাত্রীদের প্রত্যাশাও। তাই রাত ৮টা পর্যন্ত ট্রেন চললেও এখন দাবি, কখন চলবে মধ্যরাতে। কবে থেকে ১০ মিনিটের বদলে চার মিনিট বাদে আসবে ট্রেন। আবার মাঝে মধ্যেই ট্রেন চলাচল বন্ধে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা।
কর্তৃপক্ষ বলছে, কখনো ইউটিলিটি সার্ভিস, কখনো নগরবাসীর অসচেতনতার মাশুল দিতে হয় তাদের।
দিয়াবাড়ীর অপারেশন সেন্টার থেকেই পরিচালনা করা হয় মেট্রোরেল। এখান থেকেই সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকে ট্রেন অপারেটর ও স্টেশন অপারেটরের সঙ্গে।
জানা গেছে, আট সেট কোচ নিয়ে চলে ট্রেন। আপাতত পিক আওয়ারে ১০ মিনিট পরপর আসে। আর অফপিকে ১২ মিনিট বাদে আসে ট্রেন, চলে সাত সেট কোচে। ১২টি ট্রেন একই সঙ্গে পরিচালনার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ট্রেন চলাচলের ব্যবধান নেমে আসবে পাঁচ মিনিটের নিচে। তবে হুটহাট করেই তা বাড়ানো সম্ভব নয়। পুরো সিস্টেমের সঙ্গে মিলিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে কিছুটা ধৈর্য ধরতে হবে নগরবাসীকে।
এরই ফাঁকে মেট্রোরেলের নিজস্ব দক্ষ জনবল তৈরি হচ্ছে। ২০২৫ সালের জুনে কমলাপুর পর্যন্ত সর্বনিম্ন ব্যবধানে ট্রেন চালানোর আশা কর্তৃপক্ষের।
এমআরটি লাইন-সিক্সের জিএম মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেন বলেন, আমরা নিজেরাও নতুন। মেট্রো নিয়ে আমরা অভ্যস্ত হচ্ছি, যাত্রী সাধারণকেও অভ্যাস করানোর চেষ্টা করছি। দুটি বিষয় কম্বাইন্ড করে যখন নিরাপদ মনে হবে, তখন ট্রেনেরে পরিধি ধীরে ধীরে বাড়াচ্ছি। আমাদের টার্গেট আছে, পিক আওয়ারে ১০-১১টি ট্রেন চালাবো। অফপিক আওয়ারে ৯-১০টি ট্রেন চালাবো। এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে ট্রেন চলাচলের ব্যবধান চার মিনিটে নিয়ে আসবো।
তিনি আরও বলেন, মেট্রোর লাইনটা শহরের ওপর দিয়ে গেছে। আশপাশে ঘনবসতি পূর্ণ এলাকা। ফলে মাঝে মধ্যে ছাদ বা বারান্দা থেকে কেউ কিছু ফেলছে, এতে ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়।
এখন মানুষ সচেতন হচ্ছে দাবি করে ইফতিখার বলেন, আমরাও চেষ্টা করি মানুষকে বোঝাতে। কোনো কিছু ফেললে বা ছোট্ট একটা ভুলের জন্য ট্রেনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, এতে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। তবে সবাইকে সচেতন হতে সময় লাগবে।
মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের চলাচল শুরু হয় ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। এর একদিন আগে ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। আর গত ৫ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে যাত্রী চলাচল শুরু হয়। এরও একদিন আগে ৪ নভেম্বর প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উত্তরা থেকে মতিঝিল ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটারের পুরো রুটটি ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে ভ্রমণ করে মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০,০০০ যাত্রী বহন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৪ জুন এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ উদ্বোধন করেন। প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। মূলত মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.৬ কিলোমিটার বাড়তি অংশ নির্মাণ, প্রতিটি স্টেশনের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হওয়ায় খরচ বেড়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা।
মেট্রোরেল প্রকল্প নেয়া হয় ২০১২ সালে। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে।