জানুয়ারি ৩১, ২০২৪ ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ
বৈশ্বিক ও দেশীয় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিভিন্ন খাতে সরকারের দেওয়া রপ্তানিতে প্রণোদনা ও ভর্তুকির হার কমানো হয়েছে। আগের হারের চেয়ে গড়ে দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ প্রণোদনা কমেছে।
রপ্তানি বাড়াতে বর্তমানে ৪৩টি খাতে বিভিন্ন হারে প্রণোদনা দেওয়া হয়। প্রায় সব খাতেই এ হার কমানো হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে এসব খাতে যেসব পণ্য রপ্তানির জন্য জাহাজীকরণ করা হয়েছে, সেগুলোয় প্রণোদনা কম পাবেন উদ্যোক্তারা।
একই সঙ্গে ৩০ জুন পর্যন্ত যেসব পণ্য রপ্তানির জন্য জাহাজীকরণ করা হবে, ওইসব পণ্যের বিপরীতে রপ্তানির ভর্তুকির হার কমানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিধান অনুযায়ী, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটলে কোনো খাতে রপ্তানিতে বিশেষ প্রণোদনা বা ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। বর্তমানে সরকার ৪৩টি খাতে বিশেষ প্রণোদনা বা ভর্তুকি দিয়ে আসছে। এসব ভর্তুকির অর্থ একসঙ্গে প্রত্যাহার করা হলে সংশ্লিষ্ট খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ কারণে ভর্তুকির হার পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ভর্তুকির হার কমানো হবে। এর অংশ হিসাবে ১ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে যেসব পণ্য রপ্তানির জন্য জাহাজীকরণ করা হয়েছে বা করা হবে, সেগুলোয় ভর্তুকির হার কিছুটা কামনো হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটলে যেসব পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে হবে, এর প্রস্তুতি হিসাবে আগাম সতর্কতামূলক ভর্তুকির হার কমানো হয়েছে। ৩০ জুনের পর নতুন বাজেটে ভর্তুকির ব্যাপারে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সম্প্রতি রপ্তানিতে ভর্তুকির হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তটি সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মঙ্গলবার এটি সার্কুলার দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে।
বৈশ্বিক ও দেশীয় সংকটে বর্তমানে রপ্তানি খাত বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। দেশের বাজারে গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে রপ্তানি পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। যে হারে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, ওই হারে পণ্যের দাম বাড়েনি। এ কারণে রপ্তানি খাত তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে ভর্তুকি কমানো হলে রপ্তানিকারকদের আরও নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন।
সার্কুলারে বলা হয়, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে ৩ শতাংশ, ইউরো অঞ্চলের বস্ত্র খাতের রপ্তানিকারকদের বিদ্যমান ৩ শতাংশ হারের অতিরিক্ত আরও ১ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হবে। ফলে এ খাতে ভর্তুকি হবে ৪ শতাংশ। বস্ত্র খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের রপ্তানির বিপরীতে ভর্তুকি দেওয়া হবে ৪ শতাংশ। নতুন পণ্য বা নতুন বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে দেওয়া হবে ৩ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতে বিশেষ নগদ সহায়তা দেওয়া হবে দশমিক ৫০ শতাংশ। বস্ত্র খাতের কিছু ক্যাটাগরির পণ্য রপ্তানিতে কোনো ভর্তুকি দেওয়া হবে না।
পাটজাত পণ্যে ৫ থেকে ১৫, চামড়াজাত পণ্যে ১২, হস্তশিল্প পণ্যে ৮, হিমায়িত মাছে ২ থেকে ৯, কৃষিপণ্যে ১৫, হালকা প্রকৌশল পণ্যে ১২, মাংসে ১৫; জাহাজ, পেট, বোতল, প্লাস্টিক পণ্যে ৮, কাগজে ৭, ফার্নিচার ও আগর ১০, ওষুধে ১০ এবং সফটওয়্যার ও আইসিটি পণ্য রপ্তানিতে ৩ থেকে ৮ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হবে।
অপর এক সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে ভর্তুকির অর্থ পেতে সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সনদ নিতে হয়। এ খাতের রপ্তানিকারকদের বাংলাদেশ জুট গুডস্ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সাময়িকভাবে ২ বছরের জন্য সনদপত্র ইস্যু করতে পারবে। ওই সনদ দেখিয়ে রপ্তানির অর্থ ছাড় করানো যাবে। তবে এক্ষেত্রে অন্যান্য শর্ত অপরিবর্তিত থাকবে।