এপ্রিল ২৪, ২০২৪ ৯:২৮ পূর্বাহ্ণ
বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানের মধ্যে অন্যতম হলো ডেথ ভ্যালি। নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, স্থানটি কতটা ভয়ংকর। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম স্থানের তকমা অর্জন করে ডেথ ভ্যালি। সবচেয়ে উষ্ণতম মাসের রেকর্ড হিসেবে, ওই বছরের একটানা চার দিন ১২৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা ধরা পড়ে। যা তাপমাত্রার সর্বোচ্চ রেকর্ড।
ডেথ ভ্যালি ক্যালিফোর্নিয়া এবং নেভাদা সীমান্তে অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে তাপমাত্রা বিরাজ করে ডেথ ভ্যালির মরুভূমিতে। এটি বিশ্বের অন্যতম উষ্ণ স্থান হিসেবে পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকাতে কেবল কয়েকটি মরুভূমি আছে। যেখানে গ্রীষ্মে তাপমাত্রায় শীর্ষে পৌঁছায়।
ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে কাজ করেন ব্রান্ডি স্টুয়ার্ট। পার্কের কমিউনিকেশন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তিনি। তিনি বলেন, ‘এখানে এখন যেরকম গরম পড়েছে, আমরা সবাই আমাদের ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি। আপনি যখন বাইরে যাবেন, মনে হবে যেন আপনার মুখে অনেকগুলো হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাস এসে পড়ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখানে এত গরম যে, আপনার গায়ে যে ঘাম হচ্ছে তা আপনি টেরই পাবেন না। কারণ খুব দ্রুত এটি বাষ্প হয়ে উবে যাচ্ছে। ঘামে যখন কাপড় ভিজে যায়, সেটা টের পাওয়া যায়, কিন্তু গায়ের চামড়ায় ঘাম শুকিয়ে যায় খুব দ্রুত। এই বিষয়টিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে আমার সময় লেগেছে।’
ডেথ ভ্যালি এক বিস্তীর্ণ মরুভূমি। মাঝে মাঝে বালিয়াড়ি আর গভীর খাদ রয়েছে। পার্শ্ববর্তী রাজ্য নেভাডা পর্যন্ত বিস্তৃত। বিশ্বের উষ্ণতম জায়গা হওয়ার পরও এই জায়গাতে থাকে কয়েকশ’ মানুষ। মিজ স্টুয়ার্ট তাদের একজন।
মিজ স্টুয়ার্ট বলেন, গ্রীস্মের সময় তাদের বেশিরভাগ সময় ঘরের ভেতরেই কাটে। তবে অনেকে পাহাড়ের দিকে চলে যায়, যেখানে তাপমাত্রা একটু কম। যখন লোকে এতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন এটা স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। তখন তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) নীচে নামলে সেটাকেই মনে হয় খুব ঠান্ডা।
ডেথ ভ্যালির লোকজনের বাড়িতে এয়ার কন্ডিশনিংয়ের ব্যবস্থা আছে। এটি তাদের ঘর ঠান্ডা রাখে। কাজেই ঘুমাতে অসুবিধা হয় না। তবে বিদ্যুৎ যদি চলে না যায়। যখন প্রচণ্ড গরম পড়ে, তখন সবাই সারাক্ষণ এয়ারকন্ডিশনিং চালিয়ে ঘর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে। তখন বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা তৈরি হয়।
ডেথ ভ্যালির বেশিরভাগ মানুষ থাকেন এবং কাজ করেন ফার্নেস ক্রীকে। এখানেই সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এই জায়গাটা সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ২৮০ ফুট নীচু একটা বেসিনের মতো। চারিদিকে উঁচু এবং খাড়া পাহাড় দিয়ে ঘেরা।
জেসন হেসার এই ফার্নেস ক্রীকেই থাকেন। তার আসল বাড়ি মিনেসোটাতে। কাজ করেন এখানকার একটি গলফ কোর্সে। এটি বিশ্বে সমুদ্র সমতল থেকে সবচেয়ে নীচু কোনো গলফ কোর্স। সামরিক বাহিনীর এই সাবেক সদস্য বলেন, ‘আমি দুবার ইরাকে ছিলাম। যদি ইরাকে থাকতে পারি, তাহলে ডেথ ভ্যালিতেও থাকা যায়।’
জেসন গলফ কোর্সে কাজ শুরু করেন ভোর পাঁচটার একটু আগে এবং দুপুর একটা পর্যন্ত কাজ করে যান। তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের জানিয়েছে, যখন গরম আরও বেশি পড়বে, তখন আমাদের আরও ভোরে কাজ শুরু করতে হবে। একেবারে ভোর চারটায়। আর সেই ভোরেও কিন্তু তাপমাত্রা প্রায় ১০০-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৭ দশমিক ৭ হতে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।’
হেসার এখানে এসেছিলেন ২০১৯ সালে। তিনি তার কাজটা বেশ পছন্দ করে ফেলেছেন। আরও কয়েক বছর তিনি এখানে থাকার পরিকল্পনা করছেন। অবসরে তিনি গলফ কোর্সে গলফ খেলতে পছন্দ করেন। তবে সেজন্য উঠতে হয় বেশ সকালে এবং খেলা শুরু করতে হয় সকাল সাতটায়। কারণ এরপর গরম খুবই অসহনীয় হয়ে উঠে।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন এখানে এসেছি, তখন তাপমাত্রা বেশ ভালোই ছিল। শর্টস আর পোলো শার্ট পরে একটা কোল্ড বিয়ার বা কোল্ড সোডা। আপনার সাথে যদি ঠান্ডা পানীয় থাকে, আপনাকে আগে সেটা পান করে নিতে হবে। নইলে গলফের মাঠ থেকে ফিরে কিন্তু দেখবেন সেটা আর ঠান্ডা নেই। আর আগে পান করে নিলে গলফ খেলাটাও জমে ভালো।’
ক্রিসটোফার বার্ট আবহাওয়া বিষয়ক ইতিহাস নিয়ে কাজ করেন। ১৯১৩ সালে ডেথ ভ্যালিতে রেকর্ড করা তাপমাত্রা নিয়ে কেন এই সংশয়, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ঐ এলাকার আশেপাশের অন্যান্য এলাকার রেকর্ডের সঙ্গে এটি মিলছিল না। ফার্নেস ক্রীকের তাপমাত্রা আশে-পাশের এলাকার চেয়ে প্রায় দু্ই বা তিন ডিগ্রি বেশি ছিল।
কেউ কেউ যুক্তি দেন যে, ডেথ ভ্যালির চেয়েও হয়তো বেশি গরম পড়ছে বিশ্বের আরো অন্য কোনো জায়গায়। কিন্তু আবহাওয়ার ওপর যারা নজর রাখেন, তারা এই দাবিকে গুরুত্ব দেন না। কারণ এসব জায়গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করার জন্য নির্ভরযোগ্য কোনো আবহাওয়া কেন্দ্র নেই।
সূত্র: বিবিসি