প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুলাই মাসের প্রথম দিকে ভারত সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে ভারত উদ্বিগ্ন, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতে। কারণ চীনের অস্ত্র দ্রুত বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভিত্তি হয়ে উঠছে।
ভারতের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্ভবত শেখ হাসিনাই প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসতে চলেছেন। সেখানে বাংলাদেশের কৌশলগত ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান চীনা পদচারণা নিয়েও তিনি আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো জানায়, গত বছর চট্টগ্রামের কক্সবাজার জেলার পেকুয়ায় ১.২ বিলিয়ন ডলারে নির্মিত ‘বিএনএস শেখ হাসিনা’ সাবমেরিন ঘাঁটি– বাংলাদেশের বুকে প্রথম যা চীনের সহায়তায় নির্মিত। এটি নয়াদিল্লির উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি উচ্চ পরিকল্পনা তৈরি করেছে, কারণ সরকার ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’-এর বাস্তবায়নের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এটি দেশের ফ্ল্যাগশিপ প্রতিরক্ষা নীতি ২০০৯ সালে উন্মোচিত হয়েছিল। সাবমেরিন ঘাঁটিতে ঢাকার দুটি সাবমেরিন থাকবে- বিএনএস নবযাত্রা এবং বিএনএস জয়যাত্রা- যেগুলো ২০১৭ সালে বেইজিং থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।
সূত্রে জানা গেছে, ভারত ঘনিষ্ঠভাবে উন্নয়নগুলো পর্যবেক্ষণ করছে এবং তারা বিশ্বাস করে যে, প্রতিটি দেশের একটি স্বাধীন প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র নীতির প্রতি নিজস্ব সার্বভৌম অধিকার রয়েছে।
তবে বাংলাদেশ ও চীনের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান বন্ধুত্বের সঙ্গে, ঢাকা চীনা বাহিনীকে ভারতের কাছাকাছি নিয়ে আসছে, এটি দেশের প্রায় একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলকে স্পর্শ করতে চলেছে।
বাংলাদেশ সরকারের সূত্র অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রথম নেতা হতে চান এবং আলোচনায় বোঝাতে চান যে ‘বাংলাদেশ সরকার ভারত ও চীনের মধ্যে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখবে, যা বঙ্গোপসাগরের শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময়, উভয় পক্ষ বাংলাদেশে ভারতীয় অস্ত্র রফতানির বিষয়েও আলোচনা করতে পারে। কারণ ঢাকা নয়াদিল্লি থেকে সামরিক হার্ডওয়্যার সংগ্রহে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভারত বাংলাদেশের কাছে ফাইটার জেট এবং হেলিকপ্টার বিক্রি করতে আগ্রহী এবং এ ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা এরই মধ্যে হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একদা সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, তারা দুটির মধ্যে ভারসাম্য আনতে চায়। একটি হাত ভারতের দিকে বাড়াতে চায় এবং অপরটি চীনের দিকে। প্রতিরক্ষার দিক থেকে বিচার করলে, তাদের অস্ত্রশস্ত্রের প্রায় ৭০ শতাংশ চীন থেকে আনা এবং এভাবেই চীনারা সেই দেশে প্রবেশ করেছে। যদিও বেইজিং ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। সাবমেরিন ঘাঁটিতে চীনারা পোর্ট কল করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী করবেন? এটি চীনা সাবমেরিনগুলিকে বিপদজনকভাবে ভারতের জলসীমার কাছাকাছি নিয়ে আসবে।