এনডিএ জোট নিয়ে যা বললেন মোদি

এনডিএ জোট নিয়ে যা বললেন মোদি

আন্তর্জাতিক

জুন ৮, ২০২৪ ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

সব সময় নিজেরই প্রচার করে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত ১০ বছরে জোটধর্ম অথবা ঐকমত্যের কথা মুখে আনেননি তিনি। তবে সেই মোদি আজ শুক্রবার ‘এনডিএ’র জয়গান করলেন। বললেন, সরকার চালাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন, কিন্তু দেশ চালাতে দরকার ঐকমত্য। সবার সম্মতি। এনডিএ সেটাই করে দেখাচ্ছে। জোটবদ্ধতার ক্ষেত্রে এনডিএর মতো সাফল্য অন্য কারও নেই।

এত কাল যিনি সর্বদা নিজের প্রচার করে গেছেন, দলের ঊর্ধ্বে নিজেকে স্থাপন করেছেন, সেই মোদির কণ্ঠে আজ ঝরল জোট–মাহাত্ম্যের কথা। শুক্রবার পুরোনো সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে এনডিএর সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হয়ে মোদি বলেন, ‘এই জোট ক্ষমতার জন্য একত্র হওয়া দলগুলোর জোট নয়, এটা একটা সহজাত জোট। অটল বিহারি বাজপেয়ী, প্রকাশ সিং বাদল, বালাসাহেব ঠাকরে, জর্জ ফার্নান্দেজ, শরদ যাদবেরা এই জোটের বীজ বুনেছিলেন। আজ তা মহিরুহ।’

তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হতে চলা মোদি বলেন, ‘দেশবাসী ও আপনারা যে দায়িত্ব আমায় দিয়েছেন, তা পালন করা আমার কর্তব্য।’

সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তার কণ্ঠে বারবার ভেসে ওঠে জোট রাজনীতি, এনডিএ, সবাইকে নিয়ে চলা ও সর্বসম্মত হওয়ার কথা। ভোটের প্রচার পর্বে যার মুখে ‘জোট’ শব্দটি একবারের জন্যও উচ্চারিত হয়নি, এনডিএ জোটের বৈঠকও যিনি একবারও ডাকেননি, সমন্বয় কমিটি গড়ে তোলেননি, নির্বাচনী ইশতেহারজুড়ে ছিল শুধুই ‘মোদি কি গ্যারান্টি’, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো সেই নরেন্দ্র মোদি আজ বলেন, ‘এনডিএর আদর্শ ও নীতি হলো ‘সর্বপন্থা সমভাব’; অর্থাৎ সবাই সমান। আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাস রেখে চলেছি। আগামী দিনেও এগিয়ে যাব।’

এই অবসরে মোদি তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতেও অবশ্য ছাড়েননি। তিনি বলেন, বিরোধীরা শুরু থেকেই বোঝাতে চেয়েছে, এনডিএ জেতেনি। এই জয় হারের শামিল। তাদের সেই চেষ্টা বৃথা গেছে। সত্য হলো, গত ১০ বছরেও কংগ্রেস তার আসনসংখ্যা ১০০তে নিয়ে যেতে পারেনি।

মোদি বলেন, বিজেপি এবার যত আসন পেয়েছে, গত তিনটি লোকসভা ভোট মিলিয়েও কংগ্রেস তা ছুঁতে পারেনি।

কংগ্রেসের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিরোধীদের ভাবখানা এমন, যেন আমরা (এনডিএ) হেরে গেছি। অথচ আমরা কখনো হারিনি। এবারেও নয়। যে কোনো শিশুকে জিজ্ঞেস করুন, কারা এত দিন ক্ষমতায় ছিল? দেখবেন উত্তর দেবে, এনডিএ সরকার। জানতে চান, কারা ২০২৪ সালে সরকার গড়বে? উত্তর পাবেন, এনডিএ। অতীতেও এনডিএরই সরকার ছিল, ভবিষ্যতেও তাদেরই থাকবে।’

আজ সন্ধ্যা ছয়টায় রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বার সরকার গঠনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক দাবি জানান। শপথ গ্রহণ আগামী রোববার। তার আগে তিনি প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি ও মুরলী মনোহর যোশির বাসভবনে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন।

বিজেপি এবার যত আসন পেয়েছে, গত তিনটি লোকসভা ভোটে মিলিয়েও কংগ্রেস তা ছুঁতে পারেনি।

সেন্ট্রাল হলের অনুষ্ঠানে শরিক দলের সব নেতাই মোদির প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করেন। জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার আচমকাই মোদির পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে যান। তিনি বলেন, ‘বারবার এদিক-ওদিক গিয়ে লাভ হয় না। আপনার সঙ্গেই থাকব। আপনার নেতৃত্বেই সবাই এগিয়ে যাব।’

মোদি যেমন ‘আমিত্ব’ ভুলে শুরুর আগে থেকেই জোটধর্ম পালনের ইঙ্গিত দিয়েছেন, শরিক দলের নেতারাও তেমনই মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থনের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয় নিয়ে দর-কষাকষি ছাড়ছে না। নানাভাবে সেই চাপ তারা বড় শরিক বিজেপির ওপর বাড়িয়ে চলেছেন।

বিজেপি যদিও চার বড় মন্ত্রণালয়ের একটিও কারও কাছে ছাড়তে প্রস্তুত নয়। দলের পক্ষ থেকে শরিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনোভাবেই তারা অর্থ, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছাড়বে না। এমনকি রেল ও সড়ক পরিবহনের মতো মন্ত্রণালয়, যেখানে সংস্কারের কারণে বিপুল লগ্নি করা হয়েছে, তা ছাড়তেও বিজেপি নারাজ।

শুক্রবারের এনডিএ বৈঠকের পর বিজেপির এক সূত্রের কথায়, ‘জোটধর্ম ও সবাইকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী বললেও তিনি চান না কর্মযজ্ঞের ধারাবাহিকতা কোনোভাবে নষ্ট হোক। শরিকদের মনে রাখতে হবে, আমাদের সংখ্যা নয় নয় করেও ২৪০। তাদের গুরুত্ব দেওয়ার অর্থ, সব অন্যায় আবদার মেনে নেয়া নয়।’

বিজেপির সবচেয়ে বেশি চিন্তা টিডিপি ও জেডিইউকে নিয়ে। চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমার দুজনেই তাদের রাজ্য—যথাক্রমে অন্ধ্র প্রদেশ ও বিহারের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানিয়ে রেখেছেন। নাইডু তার রাজ্যের নতুন রাজধানী অমরাবতীর জন্য বিপুল আর্থিক সহায়তা দাবি করেছেন। নীতীশও চান পিছিয়ে থাকা বিহারের উন্নতিতে বিশেষ সহায়তা। এর সঙ্গে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দাবি। মোদি আবার অবকাঠামো-সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় ছাড়তে রাজি নন।

ঘনিষ্ঠদের তিনি বলেছেন, ১০ বছরের সুফল জলাঞ্জলি যাক, তা তিনি চান না। শরিকদের কীভাবে সন্তুষ্ট রাখা যায়, সেদিকেই এখন সবার নজর।

টিডিপি ও জেডিইউ ছাড়াও রয়েছে একনাথ শিন্ডের শিবসেনা ও চিরাগ পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি। তারাও একটি করে গুরুত্বপূর্ণ পূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দাবি জানিয়ে রেখেছেন। মন্ত্রণালয় ভাগাভাগি শরিকদের কতটা সন্তুষ্ট রাখছে, তার ওপরই নির্ভর করবে জোটের ভাগ্য। সরকারের যাত্রা শুরুর আগে নরেন্দ্র মোদি আপাতত এটুকু বুঝিয়ে দিয়েছেন, ১০ বছরের একাধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে এবার তিনি জোটধর্ম পালনে প্রস্তুত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *