সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় হট্টগোল হয়েছে। ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান এবং হই-হুল্লোড়ের পর অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করে সভাস্থল ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুধবার ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের নিয়ে এ সভা ডেকেছিলেন ওবায়দুল কাদের।
বুধবার বেলা ১১টায় মতবিনিময় সভার সময় থাকলেও সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। বেলা সোয়া ১১টার দিকে সভাস্থলে উপস্থিত হন ওবায়দুল কাদের। ততক্ষণে কয়েকশ ছাত্রনেতা সভাস্থলে বসে ছিলেন। তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা বা মতবিনিময় না করেই গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য দিতে শুরু করেন ওবায়দুল কাদের। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা, পরে যা হট্টগোলে রূপ নেয়। কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে বলতে থাকেন, মতবিনিময় সভা ডেকে সংবাদ সম্মেলন করছেন। তাহলে আমাদের ডাকলেন কেন? আগে আমাদের কথা শুনবেন, আলোচনা করবেন, তারপর ব্রিফ করেন। তা না করে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলা শুরু করে দিলেন?
এ সময় পেছন থেকে ছাত্র নেতাদের কয়েকজন উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠেন-এই অনুষ্ঠানে মিডিয়া কেন? মিডিয়ার জন্য আমরা সামনের কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। এ সময় হট্টগোল শুরু হয়। কয়েকজনকে জোরে জোরে ভুয়া ভুয়া বলতে শোনা যায়। এ সময় টেলিভিশনের কয়েকজন ক্যামেরাপারসন ফুটেজ নেওয়া বন্ধ করে বেরিয়ে আসতে শুরু করেন। ওবায়দুল কাদের তখন বলেন, দায়িত্বরত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কেউ খারাপ আচরণ করবেন না। তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার এ কথার পর আবারও হই-হুল্লোড় ও হট্টগোল শুরু হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী নেতারা আরও জানান, হট্টগোল শুরু হলে বক্তব্য অন্যান্য দিনের মতো দীর্ঘ না করে সভাস্থল ত্যাগ করেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় পেছনে বসা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা আবারও ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে আওয়াজ করেন, তারপর অনেকেই ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে ওঠেন। পরে সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় না করেই আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নিজের অফিসে চলে যান ওবায়দুল কাদের। এ সময় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের নিচ তলা ও সামনের সড়কে থাকা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারাও ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য শেষে নেতারা নিজেদের মতো করে চলে যান। যাওয়ার সময় অনেককেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এ সময় অনেকেই বলেন, আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ডেকেছেন, আগে তো আমাদের কথা শুনবেন, আমাদের কথা বলার সুযোগ দেবেন কিন্তু তা না করে মতবিনিময় সভার জন্য ডেকে মিডিয়ার সামনে কথা বলা শুরু করে দিয়েছেন।
তবে নিজেদের ক্ষোভ নিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতারা প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, এই সময়ে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে সাবেক ছাত্র নেতারা সবাই চলে এসেছেন। ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতারাও ছিলেন, যারা কোনো কিছু পাননি। তারা দলের প্রয়োজনে মাঠে থাকতে প্রস্তুত, সে বার্তাই নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তাদের ডেকে কথা বলতে দেওয়া হলো না, তাদের কথা শোনা হলো না। এত সুন্দর একটা আয়োজন হট্টগোলের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো! এটা কষ্টের!