হামাসের রাজনৈতিক শাখার নতুন প্রধান, কে এই ইয়াহিয়া সিনওয়ার

হামাসের রাজনৈতিক শাখার নতুন প্রধান, কে এই ইয়াহিয়া সিনওয়ার

আন্তর্জাতিক

আগস্ট ৮, ২০২৪ ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ

১৯৬২ সালে গাজার খান ইউনিসে জন্ম নেওয়া সিনওয়ারকে হামাসের সবচেয়ে চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

হামাসের রাজনৈতিক শাখার নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। এর আগে তিনি গাজায় হামাসের নেতার দায়িত্ব পালন করছিলেন।

গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

গত মঙ্গলবার সিনওয়ারের পূর্বসূরি ইসমাইল হানিয়া তেহরানে নিহত হন। তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। তবে ইরান ও হামাসের দাবি, ইসরায়েলই এই হত্যার জন্য দায়ী।

গতকাল এমন সময় এই ঘোষণা এসেছে, যখন হানিয়ার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য যে কোনো মুহূর্তে ইসরায়েলে হামলা চালাতে পারে ইরান।

৩১ জুলাই হানিয়াকে হত্যার দায় স্বীকার বা অস্বীকার, কোনোটিই করেনি ইসরায়েল।

সিনওয়ারকে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্লেষকদের মতে, দায়িত্ব বুঝে নিয়ে গাজার অজ্ঞাত অবস্থান থেকে হামাসকে এই ঝামেলাপূর্ণ সময়ে নেতৃত্ব দেবেন সিনওয়ার।

ইসরায়েলের দৃষ্টিতে সিনওয়ার শত্রু হিসেবে বিবেচিত।

আপাতত অজ্ঞাত অবস্থানে লুকিয়ে থাকা সিনওয়ার কীভাবে হামাসের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, দৈনন্দিন রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নেবেন, তা স্পষ্ট নয়।

ইসরায়েল প্রকাশ্যেই জানিয়েছে, তারা সিনওয়ারকে হত্যা করতে চায়।

১৯৬২ সালে গাজার খান ইউনিসে জন্ম নেওয়া সিনওয়ারকে হামাসের সবচেয়ে চৌকস কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আশির দশকে গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েল বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য একাধিকবার গ্রেপ্তার করা হয়।

স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর তিনি যোদ্ধাদের নিয়ে হামাসের সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হানিয়া। ছবি: এএফপি

১৯৮৭ সালে শাইখ আহমাদ ইয়াসিন হামাস প্রতিষ্ঠার অল্প সময় পর দলটির অন্যতম নেতা হিসেবে যোগ দেন সিনওয়ার। পরের বছর তাকে গ্রেপ্তার করে চারটি ভিন্ন অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ইসরায়েল। মোট ৪২৬ বছরের কারাদণ্ড পান তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল দুই ইসরায়েলি সেনা ও চার জন সন্দেহভাজন ফিলিস্তিনি গুপ্তচরকে হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা।

২৩ বছর ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি থেকে তিনি হিব্রু ভাষা শেখেন। এ সময় ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা নেন তিনি। ২০১১ সালে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তিনি মুক্তি পান। সিনওয়ারের বদলে ইসরায়েলি সেনা গিলাদ শালিতকে মুক্তি দেয় হামাস।

২০১২ সালে হামাসের রাজনৈতিক শাখায় যোগ দেন সিনওয়ার। এ সময় কাসাম ব্রিগেডের সঙ্গে সমন্বয় অব্যাহত রাখেন তিনি।

২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলের সাত সপ্তাহের আগ্রাসনের সময় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামরিক ভূমিকা পালন করেন সিনওয়ার। পরের বছর যুক্তরাষ্ট্র তাকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী’ তকমা দেয়।

২০১৭ সালে হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হলে সিনওয়ারকে গাজায় হামাস-প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

হানিয়া জনসম্মুখে নিয়মিত আসলেও ৭ অক্টোবরের পর একবারও মুখ খুলেননি সিনওয়ার।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এই হামলায় এক হাজার ১৯৭ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ।

হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫১ জন মানুষ, যাদের ১১১ জন এখনো গাজায় আটক আছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, জিম্মিদের মধ্যে ৩৯ জন ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন।

সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার ও প্রতিশোধমূলক গণহত্যা শুরু করেছে ইসরায়েল। এই হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৯ হাজার ৬৫৩ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন ৯১ হাজার ৫৩৫ জন মানুষ। হতাহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *