ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে ঘুরতে কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনে যাওয়া মানুষের সংখ্যা অন্তত ৯০ শতাংশ কমে গেছে। ট্রাভেল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে উদ্ধৃত করে এ খবর জানিয়েছে ইকোনমিক টাইমস।
সোমবার এ বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে ভারত অভিমুখী অস্থায়ী অনেক ফ্লাইট ব্যাহত হয় এবং চিকিৎসাজনিত কারণ ছাড়া সব ভিসা স্থগিত করা হয়।
ফ্লাইটগুলো এখন আবার শুরু হলেও ঢাকায় ফ্লাইট পরিচালনাকারী একটি এয়ারলাইনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফ্লাইটগুলোর যাত্রী সংখ্যা ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে।
ইকোনমিক টাইমসকে বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মো. তসলিম আমিন শোভন জানান, দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়া বাংলাদেশিদের কাছে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। তিনি বলেন, বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য ভারত একটি প্রধান গন্তব্য। যারা বিদেশে ঘুরতে যায়, তাদের ৪০ থেকে ৪৫ ভাগই ভারতে যায়।
শোভন জানান, ভারতে যাওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে ১৫ শতাংশ যান কেনাকাটা করতে, পাঁচ শতাংশ যান অবকাশ যাপনের জন্য, আর ৮০ ভাগই যান চিকিৎসার উদ্দেশ্যে। বাংলাদেশিদের কাছে কেনা-কাটার জন্য কলকাতা একটি জনপ্রিয় কেন্দ্র। বিশেষ করে, বিভিন্ন উৎসবের আগে।
২০২৩ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে ভারতে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের সংখ্যা ৪৩.৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। তবে মহামারির আগের বছরগুলোর তুলনায় এই পরিসংখ্যানটি ১৫.৫ শতাংশ কম ছিল। গত বছর দেশটিতে ৯২ লাখ ৩০ হাজার পর্যটক সমাগম হয়েছে। এতে আয় হয়েছে ২৪ হাজার ৭০৭ কোটি রুপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পর্যটকদের মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশি পর্যটকই ছিল ২২.৫ ভাগ। এ হিসেবে কোনো একক দেশ হিসেবে ভারতে যাওয়া পর্যটকদের মধ্যে বাংলাদেশিরাই ছিল সবচেয়ে বেশি।
ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অপারেটরস পশ্চিমবঙ্গ অফিসের চেয়ারম্যান দেবজিৎ দত্ত উল্লেখ করেছেন, সাম্প্রতিক সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাতায়াত প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, শুধুমাত্র প্রকৃত চিকিৎসার কারণ ছাড়া সরকার ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালের কাছাকাছি ট্রাভেল অপারেটর, হোটেল এবং গেস্ট হাউসগুলোর ব্যবসা প্রায় ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ৪৮ শতাংশ বেড়েছিল। ২০২২ সালে এই সংখ্যাটি যেখানে ছিল ৩ লাখ ৪ হাজার ৬৭ জন, ২০২৩ সালে এই সংখ্যাটি হয়েছিল ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৭০ জন।
অভ্যুত্থানের পর এই পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, কলকাতা ভিত্তিক একটি মেডিকেল টুরিজম কোম্পানির প্রধান নির্বাহী জানিয়েছেন, আগে তার কোম্পানি প্রতি মাসে প্রায় দেড় শ জন বাংলাদেশি রোগীকে ভারতে চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করত। বর্তমানে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা ৫/৬ জনে নেমে এসেছে।