অভাবে কিডনি বিক্রি করছে মিয়ানমারের দরিদ্ররা

অভাবে কিডনি বিক্রি করছে মিয়ানমারের দরিদ্ররা

আন্তর্জাতিক

সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪ ৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমার সেনাবাহিনী একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নানা সংকটের মুখে পড়েছে দেশটি। মিয়ানমারের ৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষের প্রায় অর্ধেকই এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন দরিদ্র মানুষেরা।

অর্থের অভাব মোচন করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধনী ব্যক্তিদের কাছে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে কিডনি বিক্রি করছেন দরিদ্ররা। শনিবার সিএনএনের এক বছরব্যাপী তদন্তে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণের তিন বছর পর দেশটির ৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষের প্রায় অর্ধেকই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) গবেষকরা জানিয়েছেন, ২০১৭ সাল থেকে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। নিজের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির জন্য মিয়ানমারে এমন দরিদ্র মানুষ এজেন্টদের সাহায্যে ভারতে ভ্রমণ করে থাকেন। সেখানেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করেন।

উল্লেখ্য, উভয় দেশের আইনে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করা অবৈধ।

অর্থের অভাবে পড়ে ডেলিভারি চালক মং মং ২০২২ সালে নিজের কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ সময় তিনি কিডনি বিক্রির জন্য ফেসবুকে পোস্ট দেন। কয়েক মাস পরে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারির জন্য ভারতে যান তিনি। একজন চীনা-বর্মী ব্যবসায়ী তিন হাজার ডলার দিয়ে তার কিডনি কিনেছিলেন।

জাতিসংঘের অধিভুক্ত মিয়ানমার তথ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিটের ২০১৯ সালের তথ্য অনুসারে, ওই অর্থ (৩০০০ ডলার) মিয়ানমারের শহরের একটি পরিবারের বার্ষিক আয়ের প্রায় দ্বিগুণ ছিল।

মং মং বলেছেন, কেবল একটি কিডনি বাকি আছে। আমি সবচেয়ে বেশি হলে ১৫ থেকে ২০ বছর বাঁচতে পারি এবং তারপর আমি মরে যাব। কিন্তু এতে আমার কোনো আফসোস নেই।

তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি যদি এ মুহূর্তে এটি না করতাম, তবে আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠত। চাকরি নেই, খাবার নেই। আমার স্ত্রী-সন্তানের কিছুই খাওয়ার ছিল না। আমরা তিনজনই মারা যেতে পারতাম।’

শুধু মং মং নয়, মিয়ানমারে এমন আরও অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা অর্থের জন্য নিজের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করছেন।

অনলাইন অঙ্গ ব্যবসায়, ক্রেতা এবং বিক্রেতারা প্রায়ই এজেন্টদের সঙ্গে কাজ করে থাকেন। এসব এজেন্টদের মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রয়োজনীয় নথি জাল এবং অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করে থাকেন। অঙ্গ বিক্রি ভারতে অবৈধ এবং কিছু বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া কেবল আত্মীয়দের মধ্যে দান করার অনুমতি রয়েছে। তাই এজেন্টরা প্রায়ই আইনজীবী এবং নোটারিদের সহায়তায় পরিবারের রেকর্ড এবং অন্যান্য নথি জাল করেন।

সিএনএন অন্তত তিনটি বার্মিজ ভাষার ফেসবুক গ্রুপে অঙ্গ বিক্রি সংক্রান্ত প্রস্তাবের পোস্ট খুঁজে পেয়েছে। ক্রেতা, বিক্রেতা এবং এজেন্টসহ অঙ্গ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত দুই ডজন লোকের সঙ্গে কথা বলেছে।

জানা গেছে, গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটিতে অর্থের অভাবের কারণেই এমন বেআইনি কাজের সঙ্গে তারা জড়িত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *