অক্টোবর ১৭, ২০২৩ ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ
ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক উঁচুর। উচ্চতার এ সম্পর্ক সব সময়ই আছে, থাকবে। এমন সম্পর্ক অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। যার কোনো সীমারেখা নেই। বাংলাদেশ ভালো থাকলে, স্থিতিশীল থাকলে ভারতের ভালো লাগে। ভারত সব সময় চায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বজায় থাকুক। তবে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কীভাবে হবে তা একান্তই তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সে দেশের সাধারণ জনগণই তা ভালো বোঝেন, ভারতের সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে।
সোমবার দুপুরে নয়াদিল্লিতে সফররত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী, যুগ্মসচিব (বাংলাদেশ-মিয়ানমার বিভাগ) স্মিতা পান্ত, পরিচালক (বাংলাদেশ-মিয়ানমার বিভাগ) নবনীতা চক্রবর্তী, শিলা দিত্য হালদার প্রমুখ।
দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর তৎপরতা ও এ প্রেক্ষাপটে ভারতের ভূমিকা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, বিশেষ করে বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে সেদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র সুরক্ষিত থাকুক, তা ভারত চায়।
বাগচী আরও বলেন, আমাদের সম্পর্ক বাংলাদেশের সঙ্গে, সেদেশের জনগণের সঙ্গে। যে কোনো সরকার থাকুক, আমরা আমাদের সম্পর্ক রাখি, রাখব। বাংলাদেশ শুধু পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র নয়, দেশটির স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের জওয়ানরা রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে।
বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে বাগচী বলেন, ভারতের সংবিধানে এমন কিছু নেই, তাই ভারতে এমন কিছু হয় না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংবিধানে যা বলা আছে, হয়তো সেটাই হবে। ওটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যেটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো, নিশ্চয় বাংলাদেশ তা করবে। বাংলাদেশের জনগণ তা করবে।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের বিষয়ে অরিন্দম বাগচী আরও বলেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যাপার। এ নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। যদি তারা মনে করে তাদের ভালো, তবে তারা সেটা বেছে নেবে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অন্য কোনো দেশের সঙ্গে তুলনা চলে না। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সবচেয়ে উঁচুর।
ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্যপদ না পাওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের বিরোধিতা ছিল বলে ছড়ানো তথ্যকে নাকচ করে দিয়ে বাগচী বলেন, যারা এসব তথ্য ছড়ায় তারা ব্রিকসের সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া জানে না। ভারত কেন বাংলাদেশের বিরোধিতা করবে। বরং সুযোগ পেলেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চায়। তারই অংশ হিসাবে নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা স্মিতা পান্তে বলেন, দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক কীভাবে আরও সহজ করা যায় সেটা নিয়েও কাজ করছে ভারত। ভারতে আসার জন্য এখন ডলার আনার প্রয়োজন নেই। টাকা-রুপি কার্ড চালু হয়ে গেলে ভ্রমণকারীরা ক্যাশলেস লেনদেন করতে পারবেন।
তিনি জানান, ভারত এখন নিত্যনতুন উদ্ভাবন, সবুজ জ্বালানি, প্রযুক্তি প্রভৃতির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভারত স্কলারশিপ ভবিষ্যতে আরও বাড়াবে বলে জানান স্মিতা পান্ত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে এখন উন্নয়ন হচ্ছে এবং বাংলাদেশ সেখানেও বিনিয়োগ করছে।
বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ভিসাসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত গত বছর ১৬ লাখ বাংলাদেশির ভিসা ইস্যু করেছে। সম্প্রতি ভিসা নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা সাময়িক। শিগগির এটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
ভারতের ভিসা সমস্যা সাময়িক, শিগগির স্বাভাবিক হয়ে যাবে জানিয়ে স্মিতা আরও বলেন, আগামীতে দুদেশের মধ্যে পর্যটক যাতায়াত নিশ্চয় আরও বাড়বে। দুদেশের মধ্যে সড়ক ও রেলপথে যাতায়াত আরও উন্নীত হচ্ছে।
এদিকে সোমবার বিকালে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মিডিয়া প্রতিনিধিদলটি দেশটির ন্যাশনাল টিভি ‘ডিডি নিউজ’ ভবন পরিদর্শনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিনিধিদলটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।