অক্টোবর ২৫, ২০২৩ ৯:১৯ পূর্বাহ্ণ
অর্থবছরের মাঝপথে হতে পারে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে অগ্রাধিকারে থাকা প্রায় ১ হাজার ১০০টি নতুন প্রকল্পের অনুমোদন শঙ্কার মুখে পড়েছে। কেননা কোনো কারণে সরকার পরিবর্তন হলে কিংবা এ সরকার আবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে এলেও এগুলোর ভবিষ্যৎ একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ হিসাবে তারা বলেছেন, সরকার পরিবর্তন হলে তো কথাই নেই। অনেক ক্ষেত্রে এমপি পরিবর্তন হলেও এদেশে অগ্রাধিকার পরিবর্তন হয়ে যায়। এর অর্থ হলো, প্রকল্প নির্বাচনের সময় যতটা না আর্থসামাজিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, এর চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় রাজনৈতিক বিবেচনা। নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে এডিপিতে থাকা অননুমোদিত ৮০২টি, বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির সুবিধার্তে রাখা ২১৯টি এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ৭৯টি প্রকল্প রয়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অনুমোদনহীন নতুন প্রকল্পের একটি তালিকা যুক্ত আছে। অর্থবছরজুড়েই এখান থেকে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার কথা। এর মধ্যে ৫০ কোটি টাকার ওপরে ব্যয়েরগুলো অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এবং এর নিচে ব্যয় থাকলে সেগুলো পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদন এখতিয়ার। এরকম ৮২৯টি প্রকল্প অগ্রাধিকারে থাকলেও ইতোমধ্যেই প্রায় ২৭টির অনুমোদন পেয়েছে। বাকি আছে ৮০২টি প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে সরকারের উচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে ৬৬৫টি, মধ্যম অগ্রাধিকারে ১২৩টি এবং নিম্ন অগ্রাধিকারে রয়েছে ১৪টি প্রকল্প। এ তালিকায় সবচেয়ে বেশি প্রকল্প রয়েছে গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতের ১৩৩টি প্রকল্প। এছাড়া সাধারণ সরকারি সেবা খাতের প্রকল্প আছে আটটি, প্রতিরক্ষা খাতের ১৭টি, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষার ৪৪টি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবার ৬৫টি, কৃষির ৯৬টি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ১৭টি প্রকল্প। আরও আছে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতের ৮৬টি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নের ৬৮টি, পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদের ৫৫টি এবং স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্প রয়েছে ৪০টি। এছাড়া ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতের ৬৩টি, শিক্ষার ৬৪টি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির ৩২টি এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতের ৪৬টি প্রকল্প রয়েছে।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী বলেন, প্রথম কথা হলো-প্রকল্পগুলো নেওয়ার সময় সম্ভাব্যতা সমীক্ষাসহ অন্য বিষয়গুলো মানা হয়েছে কি না। অথবা শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে কি না। দ্বিতীয় কথা হলো, সামনে নির্বাচন হওয়ায় এগুলোর মধ্যে কতটা অনুমোদন করে বাস্তবায়ন পর্যায়ে নিতে পারবে, সেটি বলা কঠিন। কেননা সরকার যদি পরিবর্তন হয়ে যায়, তাহলে বলা যায় সবকটির ভাগ্যই অনিশ্চিত হবে। আর যদি সরকার থাকেও, তাহলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রকল্পগুলো কতটা অগ্রাধিকা থাকবে, সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ। এছাড়া চলতি অর্থবছরের এডিপি সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু হয় সাধারণত জানুয়ারিতে। এবার সেসময়টাতেই নির্বাচন হতে পারে। ফলে নতুন সরকার এসে এসব প্রকল্প যাচাই-বাছাই করার সময় পাবে অল্প। সব মিলিয়ে বলা যায় প্রকল্পগুলো শঙ্কার মুখেই আছে।
এদিকে বৈদেশিক অর্থায়নের সুবিধার্থে অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় যুক্ত আছে ২১৯টি প্রকল্প। এগুলো মধ্যে সাধারণ সরকারি সেবা খাতের ১১টি, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষার ছয়টি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবার ১৩টি, কৃষির ১৪টি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ৩৪টি প্রকল্প। এছাড়া পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতের ৫৪টি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নের নয়টি, পরিবশ-জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদের নয়টি, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলির ৩১টি এবং স্বাস্থ্য খাতের সাতটি প্রকল্প। আরও আছে শিক্ষার ১৭টি এবং সামাজিক সুরক্ষার ছয়টি নতুন প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে সরকারের উচ্চ অগ্রাধিকারে ৯০টি এবং মধ্যম অগ্রাধিকারে ৩৩টি প্রকল্প রয়েছে। চলতি অর্থবছরের সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) দ্বিতীয় পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল-২ নির্মাণসহ নতুন ৭৯টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি আবার মেগা প্রকল্প। পিপিপিতে হাতে নেওয়া মেগা প্রকল্পের কয়েকটি হলো কমলাপুর মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ, সার্কুলার রেলওয়ে লাইন নির্মাণ, চট্টগ্রামে বে-টার্মিনাল, এবং ঢাকা ইস্ট ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি।