নভেম্বর ১১, ২০২৩ ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ
চলমান আন্দোলন আরও জোরদার করতে চায় বিএনপি। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াতে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদেরও একযোগে রাজপথে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।
ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড। মামলা-হামলা-গ্রেফতারের বিষয়ে দেখভাল করার জন্য সব সাংগঠনিক বিভাগে আইনজীবী, চিকিৎসক ও নেতাদের সমন্বয়ে সেল গঠন করা হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী ও যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত সমমনা রাজনৈতিক জোট ও দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে আলোচনা শুরু করা হয়েছে। আন্দোলন সফলে করণীয় নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন নেতারা। বুধবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার রাতেও সিনিয়র নেতারা এ নিয়ে বৈঠক করেন। দুই বৈঠকই ভার্চুয়ালি হয়। এতে নানা কৌশল ঠিক করা হয়। উভয় বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে চতুর্থ দফায় রোববার ভোর ৬টা থেকে আবারও দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। যা মঙ্গলবার ভোর ৬টায় শেষ হবে। এরপর একদিন বিরতি দিয়ে আবারও একই কর্মসূচি দেওয়ার কথা রয়েছে। যা লাগাতার হতে পারে।
নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাতে বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নির্বাচন কমিশনাররা। পরে বঙ্গভবনের সামনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে কোনো মূল্যে নির্ধারিত সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। দ্রুত নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হবে।’
বিএনপি নেতারা জানান, তারা নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানতে পেরেছেন ১৪ অথবা ১৬ নভেম্বরের মধ্যে যে কোনো সময় তফশিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। এই তফশিল ঘোষণার ওপর নির্ভর করবে আন্দোলনের তীব্রতা কবে থেকে বাড়ানো হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত উভয় বৈঠকে চলমান আন্দোলনের কর্মকৌশল নিয়ে বিশ্লেষণ করেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারের পরিকল্পিত একটি ‘ক্র্যাকডাউন’ চলছে। এই অবস্থায় অবরোধ কর্মসূচির মধ্যদিয়ে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল দলটির। সেখানে তারা নিজেদের সফল মনে করছেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার এড়াতে ঘরছাড়া। দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির তিন সদস্যসহ কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নেতাদের ধারণা, সরকার পতনের একদফার আন্দোলনে সফল হতে না পারলে গ্রেফতার নেতারা নির্বাচনের আগে কারামুক্ত হতে পারবেন না। বরং বিভিন্ন মামলায় একে একে সব গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীকে কারাগারে যেতে হতে পারে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারসহ একদফা দাবিতে আন্দোলন চলমান থাকলে ক্ষমতাসীন সরকারের ওপর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের চাপ আরও বাড়বে। ফলে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন সরকারের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলতেই থাকবে। আওয়ামী লীগ চিরস্থায়ী ক্ষমতায় থাকার স্বপ্নে বিভোর। ভেবেছে নেতাকর্মীদের হামলা, মামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতন করে তারা চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে, অত্যাচারীরা যে অস্ত্র নিয়ে আঘাত করে স্বাধীনতাকামী ও গণতন্ত্রকামী মানুষ সেই অস্ত্র তাদের দিকেই তাক করে। সরকারের আশা জনগণ পূরণ হতে দেবে না। জনগণের আন্দোলন সফল হবেই।’
সূত্রমতে, বিশেষ করে ঢাকা মহানগর নিয়ে বিশেষ কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি হাইকমান্ড। ইতোমধ্যে আন্দোলন জোরদার করতে বিভিন্ন জোনে ভাগ করা হয়েছে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণকে। প্রতিটি জোনে কেন্দ্রীয় ও মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে, এসব জোনের ঢাকার বাইরের বিভিন্ন সংসদীয় এলাকার সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের (কেন্দ্রীয় নেতা) তাদের নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন জোরদার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, তাকে ঢাকা মহানগরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নির্বাচনি এলাকার নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে বলা হয়েছে। আজ থেকে তিনি তার সংসদীয় এলাকায় আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন।
একই কথা জানিয়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের একজন সাবেক সংসদ-সদস্যও। তিনি বলেন, তাকে নির্বাচনি এলাকার আন্দোলন জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার বাদ জুমা নিহতদের স্মরণে সারা দেশের মসজিদে মসজিদে দোয়া ও মিলাদের কর্মসূচি পালন করে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জামায়াতে ইসলামী। আজ তাদের কর্মসূচি নেই। কাল থেকে শুরু হওয়া আবারও অবরোধ কর্মসূচি সফলে তৃণমূলে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
হরতালের পর টানা ৩ দিন দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপিসহ সমমনা ও জামায়াতে ইসলামী। পরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ফের পৃথকভাবে ৪৮ ঘণ্টার একই কর্মসূচি পালন করে। তৃতীয় দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হয় শুক্রবার ভোর ৬টায়।
রোববার থেকে শুরু হওয়া অবরোধ কর্মসূচি প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ভোর ৬টা থেকে শুরু হবে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ যারা গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিশ্বাস করে, তারা প্রত্যেকে এই অবরোধ কর্মসূচি সাফল্যমণ্ডিত করবে। সাারা বাংলাদেশে রাস্তা-ঘাট, মহাসড়কসহ প্রত্যেকটি জায়গায় উপস্থিত হবে। সরকারের যত জুলুম-নির্যাতন-নিপীড়ন-অত্যাচার প্রতিহত করেই তারা রাজপথে থাকবেন।’
অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দল ও জোট। একই কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও।
দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, ‘সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক জনতা জেগে উঠেছে। তারা স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছে। জনগণের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে। পদত্যাগ করে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় উদ্ভ‚ত যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।’