ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩ ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ
দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে গাজার পরিস্থিতি। ইসরাইলের নৃশংসতায় দুমড়েমুচড়ে পড়েছে পুরো শহর। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ১৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
রোগ, ক্ষুধা, তৃষ্ণা আর মৃত্যু যেন সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বড় শিকার শিশুরা। ইসরাইলের বর্বর হামলার কবলে ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু নিহত হয়েছে। ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার সিএনএনকে বলেছেন, গত ১৫ বা ২০ বছরে সমস্ত দ্বন্দ্বের মধ্যে গাজা যুদ্ধে বেশি শিশু নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যাও হাজার ছাড়িয়েছে। কত শিশু গৃহহীন ও অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে তার হিসাব নেই। গাজার দুর্বিষহ অবস্থা সম্পর্কে ইউনিসেফ বলেছে, গাজা শিশুদের কবরস্থান। অন্য সবার জন্য একটি জীবন্ত নরক। রয়টার্স, আল-জাজিরা।
প্রতিদিন শত শত বিমান হামলার পরও থামছে না ইসরাইল। শনিবার আবারও উত্তর ও দক্ষিণ গাজাজুড়ে ভয়াবহ বোমাবর্ষণ চালিয়েছে। কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, দক্ষিণে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে শুক্রবার রাতের বিমান হামলায় ২০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক ডজন নারী ও শিশু । আরও বলেছেন, উত্তরে গাজার ওয়াইএমসিএ ভবন যেখানে শত শত বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল সেখানেও হামলা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের সরকারি ওয়াফা বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের তিনটি বাড়িতে হামলায় অন্তত তিন ডজন লোক নিহত হয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইলের অবিরত হামলার কারণে উত্তর গাজায় হতাহতের তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। উদ্ধারকর্মীরা বিশ্বাস করেন, কিছু হতাহত ওই এলাকায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।
গাজার বাসিন্দারা উত্তরে শেজাইয়া, শেখ রাদওয়ান, জেইতুন, তুফাহ, বেইট হানুনে ও খান ইউনুস শহরে রাতভর তীব্র লড়াই এবং বোমাবর্ষণের কথাও জানিয়েছেন। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। শনিবার জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক কার্যালয় (ওসিএইচএ) বলছে, ২০০৫ সালের পর থেকে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জন্য ২০২৩ সবচেয়ে মারাত্মক বছর।
ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) শনিবার বলেছে, তারা জাবালিয়ার একটি ভবনে বোমাবর্ষণ করেছে। পাশাপাশি গাজা শহরের দুটি স্কুল ভবনে লুকিয়ে থাকা হামাস যোদ্ধাদের হত্যা করেছে। খান ইউনিসের অ্যাপার্টমেন্টে অস্ত্র মজুত অভিযান চালিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইডিএফের পোস্ট করা একটি ভিডিওতে আরও বলেছে, তারা যুদ্ধে হামাস যোদ্ধাদের নিপাত করেছে। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেউ কেউ আত্মসমর্পণ করেছে।
ইসরাইলের হাত থেকে পার পাচ্ছেন না সাংবাদিকরাও। শুক্রবার ইসরাইলি ড্রোন হামলায় আল জাজিরার ক্যামেরাম্যান সামের আবু দাক্কা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন গাজার ব্যুরো প্রধান ওয়ায়েল আল-দাহদৌহ। আল-দাহদৌহ এবং আবু দাক্কা দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনুসে জাতিসংঘের একটি স্কুলে হামলার শিকার হন। ঘটনার পর আল-দাহদৌহকে নাসের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত অঞ্চলটিতে বিভিন্ন সংঘাতে আল-জাজিরার ১৩ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ জার্নালিস্ট (আইএফজে) তাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
এদিকে শনিবার এক বিবৃতিতে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, গাজায় নতুন যুদ্ধবিরতি নিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দেশটি মানবিক বিরতি নবায়নের জন্য তার চলমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। একটি ব্যাপক এবং টেকসই চুক্তি সম্পাদনের অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আশাও প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে আরও বলেছে, এটি আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের রক্তপাত বন্ধ করবে।