ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪ ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ
রুগ্ন পুঁজিবাজারকে সুস্থ করতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার উদ্যোগের কমতি নেই। নিয়মিত আশার বাণী শুনিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। স্বপ্নও বুনছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে তা ধরা দিচ্ছে না বাস্তবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে আছে অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্য; না বুঝেই লেনদেনের প্রবণতা এবং গুজব রোধে সঠিক সিদ্ধান্তের অভাব। সবমিলিয়ে আস্থার সংকটে ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার।
২০১৪ সালে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয় কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড। দীর্ঘ দিন ১৫ টাকার নিচে এই কোম্পানির শেয়ার বিক্রি হলেও গত বছরের ১৮ জুলাই দাম উঠে ৩৮ টাকা ৯০ পয়সায়। পরে কমতে কমতে ১৮ সেপ্টেম্বর নামে ৯ টাকা ৯০ পয়সায়। এরপর বাড়তে বাড়তে গত মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিক্রি হয়েছে ২২৫ টাকা ৩০ পয়সায়।
অর্থাৎ, দীর্ঘদিন লোকসানের ঘানিটানা কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৫ মাসে বেড়েছে ২১ গুণের বেশি। অথচ কোম্পানিটি সবশেষ ২০২২ সালে বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে মাত্র ২ শতাংশ করে।
এমন আরও কোম্পানি রয়েছে যাদের এজিএম ও লভ্যাংশের কোনো নামগন্ধ নেই। অথচ পুঁজিবাজারে রয়েছে দাপট। যেখানে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের দাবি, আশা দেখিয়ে অসাধু চক্র কারসাজি করে ফায়দা লুটছে।
এ বিষয়ে এক বিনিয়োগকারী বলেন, যে সব কোম্পানি দীর্ঘ দিন ধরে ডিভিডেন্ড দিতে পারে না, সেগুলোর শাস্তির মুখে আনা হয় না কেন? তাদের কোম্পানির মালিকানা পরিবর্তন করা হয় না কেন?
এমন বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সিদ্ধান্তহীনতা এবং বাজার না বুঝে তড়িঘড়ি করে শেয়ার কেনাবেচার প্রবণতায় পুঁজিবাজার শক্তিশালী হতে পারছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ‘যারা খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়, তারাই কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সে কারণে আমরা মনে করি, যখন একটি জায়গায় টার্গেটেড জায়গায় মুনাফা যাবে, তখন সেটি লক করতে কিছু সময় দিতে হবে। সময় দিয়ে ও ধৈর্য নিয়ে যদি কাজ করা হয়, তাহলে দিনশেষে কিন্তু এমন একটি স্থানে যাওয়া সম্ভব, যেখানে হয় তো ততটা লোকসান হচ্ছে না।’
তবে যে কোনো মূল্যে পুঁজি সুরক্ষার আশ্বাস দিয়ে আস্থার সঙ্গে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিএসইসি’র চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন,
আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা কিন্তু খারাপ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সুযোগ সন্ধানী গ্রুপ আমাদের সাধারণ নিরপরাধ বিনিয়োগকারীর পুঁজি হাতিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারসাজি করেছে। তাই আমরা এ জন্য পুরোটা সময়েই খুব সাবধানে থেকেছি, যাতে কোনোভাবেই ওই আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। এখানে অবশ্যই পুঁজি নিরাপদ থাকতে হবে।
শেয়ারবাজারে সুদিন ফেরাতে বাজারকে বাজারের গতিতে চলতে দেয়ার পাশাপাশি গুজব রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ারও তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।