ডিসেম্বর ১১, ২০২৩ ৯:০০ পূর্বাহ্ণ
দশকের পর দশক ধরে অবরুদ্ধ গাজার ছোট্ট জনপদের প্রতি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে ছড়িয়ে পড়েছে যুদ্ধ। প্রতিদিনই মরছে শত শত মানুষ। একটু আগে যার সঙ্গে কথা হচ্ছে, পরক্ষণেই সে নেই! ট্যাংক-স্নাইপার না হয় বোমা হামলায় লাশ হয়ে পড়ে থাকছে রাস্তায়। অথবা কোনো এক ধ্বংসস্তূপের নিচে।
প্রতিদিন শত শত শেল-বোমা হামলায় পুড়ে তামা তামা হয়ে গেছে গাজার নাগরিক জীবন। নিশ্বাসে আর জলপাই সুবাস নেই, পোড়া বারুদের ঝাঁজ। বেঁচে থাকা যেন শুধুই মৃত্যুর অপেক্ষা।
গত ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর থেকে ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তবু যুদ্ধবন্ধের কোনো পদক্ষেপ নেই যুক্তরাষ্ট্রে। মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির ‘কু-সন্তান’ তকমায় ধিকৃত ইসরাইলকে এখনো যুদ্ধবন্ধের ‘নির্দেশ’ (ডেডলাইন) দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বানসহ বেসামরিক হতাহতের বিষয়ে গণমাধ্যমে বারবার সোচ্চার হলেও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে একেবারেই মুখে তালা লাগিয়ে বসে আছে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের গডফাদার যুক্তরাষ্ট্র। বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স, আলজাজিরা, এএফপি।
ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেগবির বরাত দিয়ে রোববার সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। এদিনই আরও বড় আতঙ্কের খবর দিয়ে ইসরাইলের এক স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় আরও দুই মাস স্থায়ী হতে পারে যুদ্ধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সময়ে মধ্যে আর কোনো যুদ্ধবিরতিও দেওয়া হবে না। তবে এর মধ্যে বাকি বন্দিদের মুক্তির জন্য অতিরিক্ত চুক্তি প্রচারের চেষ্টা করা হবে জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন যুদ্ধবন্ধের ইশারা দেয়নি। গত বৃহস্পতিবারই এ কথা জানিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন।
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা সহকারী জন ফিনার সেদিন বলেছিলেন, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে বড় যুদ্ধ অভিযান শেষ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে একটি দৃঢ় সময়সীমা দেয়নি। পাশাপাশি আরও বলেন, ‘এটি আমাদের ভূমিকা নয়। এটি তাদের (ইসরাইল-হামাস) দ্বন্দ্ব।’
তবে ৫ ডিসেম্বর মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছিল, সম্ভবত কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হবে। জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত চলতে পারে। যুদ্ধবন্ধে মাথাব্যথা না থাকলেও বেসামরিক হত্যাবন্ধ বিবৃতিতে কোমর বেঁধে নেমেছে ওয়াশিংট। যুদ্ধবিরতির পর নতুন করে হত্যাযজ্ঞ শুরুর প্রতিক্রিয়ায় নিয়ম করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রায় প্রতিদিনই।
বলেছে, ইসরাইলি বাহিনী গাজার উত্তরে যে ধরনের ধ্বংসাত্মক কৌশল ব্যবহার করেছে দক্ষিণে যেন তার একই প্রতিফলন না ঘটে।
যুদ্ধবন্ধে ভূমিকা পালন না করলেও ইসরাইলকে সমর্থনে ঠিকই মাথা ঘামাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে হাজার হাজার যুদ্ধাস্ত্র দিয়েছে দেশটি। ব্যয় করেছে কোটি কোটি ডলার। মৃত্যুপুরী গাজার মৃত্যু থামানোর পরিবর্তে আবারও অস্ত্র বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর শুক্রবার গভীর রাতে ইসরাইলের কাছে আরও যুদ্ধাস্ত্র বিক্রির জন্য আইনপ্রণেতাদের কাছে একটি জরুরি ঘোষণা পাঠিয়েছে।
শনিবার বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক যুক্ত একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, কংগ্রেসকে বাইপাস করে অবিলম্বে ইসরাইলের কাছে ১৩ হাজার ট্যাংক শেল বিক্রি করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। এসব অস্ত্র ইসরাইলের কাছে ১০৬ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করা হবে। মেরকাভা ট্যাংকের জন্য ইসরাইলকে ৪৫ হাজার গোলা বিক্রি করার অনুমোদনের পরপরই এ ঘোষণা আসে।