এপ্রিল ২০, ২০২৪ ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ
ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। দেশটি নাতিশীতোষ্ণ বলেও পরিচিত। কিন্তু এ অঞ্চলে গ্রিন হাউস প্রভাবের ফলে গ্রীষ্ম, শীত ও বর্ষাই বেশি প্রতীয়মান হয়। গ্রীষ্মের তাপ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। তবু প্রতিটি ঋতু তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে। প্রতিটি ঋতুর যেমন কমনীয় এবং উপভোগ্য দিক রয়েছে, তেমনি তার অস্বস্তিকর এবং ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। গ্রীষ্মকালও এর ব্যতিক্রম নয়। গ্রীষ্মের গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়া যা অনেকের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে এসব সমস্যা এড়ানো সম্ভব। এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন ভারতের চেন্নাইয়ের শ্রী বালাজী মেডিকেল ইউনিভর্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর এবং বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ডা. এইচ. এন. সরকার
বছরের অন্য সময়ের তুলনায় গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা থাকে অত্যধিক। এ সময় শরীরের মূল তাপমাত্রা স্বাভাবিক সীমায় রাখার জন্য শরীর অতিরিক্ত ঘামের মাধ্যমে তাপ নির্গত করে। যার ফলে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যাওয়ায় শরীরে তরলের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যাকে আমরা পানিস্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশন বলি। পানিস্বল্পতার লক্ষণগুলো হলো- সব সময় তৃষ্ণার্ত অনুভব করা, অল্প এবং গাঢ় আভাযুক্ত প্রস্রাব, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, মাথা শূন্যভাব ও দিশেহারা ভাব। নিয়মিত বিরতিতে প্রচুর পানি পান করে আমরা এ সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করতে পারি। কচি ডাবের পানি, লবণ পানির শরবত বা লাচ্চি পান করা যেতে পারে। তরমুজ, আঙুর, পেঁপে বা আমের মতো অনেক পানিযুক্ত ফল খাওয়া উচিত, যাতে শরীরের পানিশূন্যতা পূরণ হয়।
* মাথাব্যথা
ডিহাইড্রেশনের ফলে গ্রীষ্মকালে মাথাব্যথা একটি সাধারণ ব্যাপার, যা গ্রীষ্মকালীন মাথাব্যথা নামে পরিচিত। পানিস্বল্পতা পূরণ করে মাথাব্যথা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
* তাপজনিত রোগ
এ সময় তাপজনিত রোগ দেখা দিতে পারে। গরমে মৃদু থেকে তীব্র তাপজনিত রোগ সৃষ্টি হতে পারে। এটি সূর্যালোকে থাকার সময় ও পরিশ্রমের মাত্রার ওপর নির্ভর করে। এগুলো হলো-
▶ হিট ক্র্যাম্প : গরম তাপমাত্রায় অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ব্যায়াম করলে প্রচুর ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। ফলে বেদনাদায়ক পেশি সংকোচন হয়। লবণবিহীন শুধু পানি পান করলে এটি আরও বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে শরীরের মূল তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় না। হিট ক্র্যাম্প দেখা দিলে খাবার স্যালাইন বা লবণের শরবত খেলে উপসর্গ দ্রুত উপশম হয়।
▶ হিট সিনকোপ : গরম আবহাওয়ায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে ঘামের পাশাপাশি শরীরের বাইরের দিকের রক্তনালি প্রসারিত হয়, ফলে রক্তচাপ কমে যায়। রক্তচাপ কমে যাওয়ার ফলে মস্তিষ্কে কম রক্ত প্রবাহিত হয়। তখন মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। তখন অজ্ঞান ব্যক্তিকে তাড়াতাড়ি ছায়ার নিচে সরিয়ে নিতে হবে এবং ফ্যান চালিয়ে দিলে দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।
▶ তাপ নিঃশেষণ : গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় দীর্ঘক্ষণ পরিশ্রম করলে তাপ নিঃসরণ ঘটে। প্রচুর ঘাম এবং অপর্যাপ্ত লবণ ও পানি প্রতিস্থাপনের ফলে মূল তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বৃদ্ধি পায়, ফলে নিুলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দেয়-
● চামড়া গরম এবং ঘাম।
● মাথাব্যথা, দুর্বলতা, ক্লান্তি, বিরক্তিভাব।
● ডিহাইড্রেশন, দ্রুত নাড়ির গতি।
এ রকম পরিস্থিতিতে রোগীকে তাপ থেকে ছায়ায় নিয়ে যেতে হবে। কাপড়-চোপড় খুলে ঠান্ডা পানি স্প্রে করে ফ্যান ছেড়ে শীতল করতে হবে। পানিস্বল্পতা পূরণের জন্য খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে বা শিরায় স্যালাইন দিতে হবে। চিকিৎসা না করা হলে, তাপ নিঃসরণ হিট স্ট্রোকে পরিণত হতে পারে।
▶ হিট স্ট্রোক : যখন শরীরের মূল তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে বেড়ে যায়, তখন হিট স্ট্রোক ঘটে এবং এটি একটি জীবন-হুমকির অবস্থা। হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো হলো-
● রোগীর ত্বক খুব গরম অনুভূত হয় এবং ঘাম থাকে না অর্থাৎ চামড়া শুষ্ক।
● মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি।
● মাংসপেশি কাঁপুনি এবং বিভ্রান্তি।
● উত্তেজিত বা জ্ঞান হারানো।
হিট স্ট্রোক একটি জরুরি অবস্থা এবং এর মৃত্যুর হার বেশি। তাই অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ গরমের সময় বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন। যদি বাইরে যেতেই হয়, তবে হলকা কাপড় দিয়ে শরীর ঢেকে বের হবেন। প্রখর রোদে ঘোরাঘুরির পরিবর্তে ঠান্ডা জায়গায় থাকার চেষ্টা করুন।
* হে ফিভার
হে ফিভার এক ধরনের অ্যালার্জি। এটি বিশেষত গ্রীষ্মের শুরুতে দেখা যায়, যখন দিকে দিকে মাঠে ও বাগানে ফুল ফোটে এবং সেই ফুলের পরাগ শরীরের সংস্পর্শে আসে। এটা যাদের অ্যালার্জি আছে বা পরিবারের কারও অ্যালার্জি বা অ্যাজমা রোগ থাকলে তাদেরই বেশি হয়। হে ফিভারের লক্ষণগুলো হলো-
● নাক আটকে যাওয়া এবং চোখ দিয়ে পানি পড়া।
● হাঁচি ও কাশি।
● নাক দিয়ে পাতলা পানি পড়া।
● ক্লান্তি এবং জ্বর।
বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করে পরাগের সংস্পর্শ এড়িয়ে এটি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়; তবে সম্পূর্ণ এড়ানো যায় না। যদি এটি হয়, তবে ফেক্সোফেনাডিনের মতো অ্যান্টিহিস্টামিন দ্বারা উপসর্গগুলো হ্রাস করা যেতে পারে। আপনি যদি অ্যালার্জিপ্রবণ হন, তবে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন, কিছু ওষুধ হে ফিভার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
* হাঁপানির আক্রমণ
গ্রীষ্মের শুরুতে হাঁপানির আক্রমণ বেশি দেখা দেয়, যখন ফুল ফোটে এবং ফুলের রেণু বাতাসে উড়ে বেড়ায়, বিশেষ করে অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে। আপনার যদি হাঁপানি থাকে তাহলে বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করে পরাগের সংস্পর্শ এড়ানোর মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে পারেন।
খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ
* খাদ্যে বিষক্রিয়া
গ্রীষ্মকালে খাদ্যে বিষক্রিয়া বেশি হয় যখন সালমোনেলা এবং ক্লোস্ট্রিডিয়ামের মতো কিছু বিপজ্জনক অণুজীব খাদ্যে বৃদ্ধি পায়। রাস্তার পাশের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের খাবার খেলে পেট খারাপ বেশি হয়। খাদ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণ হলো-
● পেট ব্যথা।
● বমি বমি ভাব এবং বমি।
● পাতলা পায়খানা (ডায়রিয়া)।
● জ্বর।
কম রান্না করা মাংস, কাঁচা শাকসবজি, মাছ এবং ফাস্ট ফুড এড়িয়ে এটি প্রতিরোধ করা যেতে পারে। যদি কেউ খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হন, তাহলে খাবার স্যালাইন খাবেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
* ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা এবং টাইফয়েড
এসব হলো পানিবাহিত রোগ, যা গ্রীষ্মের মাসগুলোতে বেশি দেখা যায় এবং দূষিত খাবার বা পানি এড়িয়ে চলার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়।
* জন্ডিস
আরেকটি মারাত্মক রোগ, যা গ্রীষ্মের মাসগুলোতে বেশি দেখা যায়। এ অবস্থা দূষিত খাবার বা পানি গ্রহণ করলে যে কারও হতে পারে। হেপাটাইটিস এ এবং ই-ভাইরাস দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং সংক্রমিত ব্যক্তির মল দ্বারা পানি বা খাবার দূষিত হয়। জন্ডিস গুরুতর হয়ে উঠতে পারে এবং জীবনকে বিপন্ন করতে পারে।
ত্বকের রোগ
* ঘামাচি
গ্রীষ্মকালে সবচেয়ে বেশি চর্মরোগগুলোর মধ্যে একটি হলো ঘামাচি। এটি বাচ্চাদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদেরও হয়। ত্বকে লাল ফুসকুড়ি হয় এবং এটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর হতে পারে এবং অতিরিক্ত চুলকানির কারণ হতে পারে। এ অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন একজন ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে ঘামে এবং ঘামে ভেজা কাপড় ত্বকে ঘষতে থাকে, যার ফলে ফুসকুড়ি এবং চুলকানি হয়। ঘামাচি থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে ত্বক শুষ্ক রাখতে হবে। ঘর্মাক্ত জামাকাপড় সময়মতো পরিবর্তন করুন এবং ত্বককে শুষ্ক রাখতে ভালো ঘামাচি পাউডার ব্যবহার করুন।
* রোদে পোড়া
যদি আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য সূর্যালোতে থাকেন, তখন ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি আপনার সূক্ষ্ম ত্বকে প্রবেশ করে সানবার্ন নামক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। এ অবস্থায় ত্বক শুষ্ক ও লাল হয়ে যায় এবং চুলকায়। সঙ্গে বমি বমি ভাব, জ্বর বা ঠান্ডা থাকতে পারে। যেসব ক্ষেত্রে পোড়া গুরুতর, সেখানে ফোসকা পড়তে পারে এবং অবস্থার উন্নতি হলে ত্বক খোসা উঠতে পারে। এজন্য রোদে বেরোনোর প্রায় ২০ মিনিট আগে একটি শক্তিশালী (এসপিএফসহ) ভালো সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করতে পারেন। বাইরে বের হওয়ার সময় টুপি ও সানগ্লাস ব্যবহার করলে মুখমণ্ডলকে রোদে পোড়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এছাড়া ত্বকের আর্দ্রতা সঠিকভাবে বজায় রাখুন।
* ব্রণ
গ্রীষ্মকালে ব্রণ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। কারণ, নিজেকে ঠান্ডা রাখতে শরীর বেশি ঘাম তৈরি করে। ঘামের অতিরিক্ত উৎপাদন সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলোকে ত্বক আর্দ্র রাখতে আরও তেল উৎপাদন করতে উদ্দীপিত করে, ফলে সেবেসিয়াস গ্রন্থিমুখ আটকে যায় এবং ব্রণ সৃষ্টি হয়। এজন্য দিনে বারবার মুখ ধোয়া ত্বককে তেলমুক্ত রাখতে সাহায্য করতে পারে। ফলে ব্রণ কম হবে।
রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার
নিরাপদ গ্রীষ্মের জন্য অতিরিক্ত তাপের বিরুদ্ধে নিুবর্ণিত উপায়গুলো অবলম্বন করুন।
▶ প্রচুর পানি পান করুন এবং নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে বাড়িতে এবং ভ্রমণের সময় ডাবের পানি এবং লেবুর শরবত পান করুন। দিনে কমপক্ষে ১০-১২ গ্লাস তরল পান করুন।
▶ ঢিলেঢালা, হালকা রঙের পোশাক পরুন। কারণ গাঢ় রঙের পোশাক বেশি তাপ শোষণ করে এবং আঁটসাট পোশাক শরীরকে ঘামতে দেয় না। হালকা এবং শোষণকারী সুতার পোশাক ব্যবহার করুন।
▶ ভ্রমণ বা বাইরে কাজের সময় ভারী পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন; প্রয়োজনে ছায়াযুক্ত স্থানে বিশ্রাম করুন।
▶ শিশুকে কখনোই প্রখর সূর্যের সংস্পর্শে থাকা গাড়িতে বসে থাকতে দেবেন না এবং ছায়ার নিচে গাড়ি পার্ক করার চেষ্টা করুন।
▶ সূর্যের রশ্মির কারণে রোদে পোড়া হলে আরামের জন্য বরফের প্যাক এবং ব্যথা উপশমকারী মলম প্রয়োগ করুন।
▶ হাত সঠিকভাবে ধুয়ে নিন। খাবার তৈরি এবং পরিবেশন করার সময় সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। খাদ্য ও পানিবাহিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে কোনো খাদ্যদ্রব্য স্পর্শ বা রান্না করার আগে হাত ধুয়ে নিন। যখনই ওয়াশরুমে যাবেন তখনই হাত ধুয়ে নেবেন।
▶ গ্রীষ্মের দিনে আধা-সিদ্ধ খাবার এবং রাস্তার খাবার খাবেন না। তরমুজ, শসা, আখ এবং আমের মতো তাজা রসালো ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন।
▶ দুপুরে রোদের সময় বাড়ির জানালা খোলা রাখুন, যাতে তাপ বাড়ির ভেতরে আটকে না যায়।
▶ খাবার স্যালাইন (ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন)-এর মজুত রাখুন। এগুলো সহজেই কিনতে পাওয়া যায়। যদি না পাওয়া যায়, আপনি নিজে এগুলো বাড়িতে তৈরি করতে পারেন।
▶ চোখের ব্যথা এড়াতে এবং সংক্রমণের আরও বিস্তার রোধ করতে হাত সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখুন। ব্যথা কমাতে পরিষ্কার জল দিয়ে চোখ বারবার ধুয়ে নিন।
▶ MMR (হাম, মাম্পস, রুবেলা) টিকা দিয়ে এদের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। যদি আপনি বা আপনার সন্তানকে এই ৩টি সংক্রমণের বিরুদ্ধে টিকা না দিয়ে থাকলে, তাহলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা নেওয়া উচিত।
▶ মশা তাড়ানোর ওষুধ প্রয়োগ করুন এবং মশার প্রজনন স্থান এড়িয়ে চলুন।
▶ কমপক্ষে ১৫ এসপিএফ’সহ (সান প্রোটেক্টর ফ্যাক্টর) সানস্ক্রিন প্রয়োগ করে ত্বক ঢেকে রাখুন এবং সুরক্ষিত রাখুন।
▶ সূর্যের তাপ এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে দুপুর থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত, যখন সূর্যের রশ্মি সরাসরি লম্বাভাবে পড়ে।
▶ ভ্রমণ বা বাইরে কাজের সময় সানগ্লাসসহ ক্যাপ পরে সূর্যের তাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। টুপি এবং সানগ্লাস ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মিকে আপনার মুখের সংবেদনশীল স্থানে আঘাত করা থেকে বাধা দেবে এবং মুখকে সতেজ ও বলিরেখামুক্ত রাখবে।
অন্যান্য সংক্রমণ
* হাম
হাম একটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি, সর্দি এবং গায়ে লাল লাল দানা। শিশুরা সাধারণত হামে আক্রান্ত হয়। হামের টিকা এবং আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শ এড়ানোর মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা যায়।
* মাম্পস
মাম্পস একটি ছোঁয়াচে এবং মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ, যা গ্রীষ্মকালে ব্যাপক আকার ধারণ করে। সংক্রমিত ব্যক্তি যখন হাঁচি বা কাশি দেয় তখন প্রতিবেশীদের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। এটি কানের সামনের প্যারোটিড গ্রন্থিকে আক্রান্ত করে, যার ফলে গ্রন্থি ফুলে যায়, ব্যথা এবং জ্বর হয়। মাম্পস ভ্যাকসিন এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়ানোর মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা যায়।
* জলবসন্ত
গ্রীষ্মের অন্যতম মারাত্মক রোগ হলো জলবসন্ত বা চিকেন পক্স। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। জলবসন্তে সারা শরীরে ছোট ছোট পানিভর্তি ফোসকা দেখা দেয়। এটি সাধারণত ছোট শিশুদের আক্রান্ত করে; কখনো কখনো প্রাপ্তবয়স্ক, ডায়াবেটিস ও ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের হতে পারে। এ সংক্রামক রোগটি বায়ুবাহিত কণার মাধ্যমে ছড়ায়। সংক্রমিত ব্যক্তি হাঁচি বা কাশি দিলে বা সরাসরি সংক্রমিত ব্যক্তির সাহচর্যে ছড়ায়। কখনো কখনো সংক্রমণ সুপ্ত থাকতে পারে যতক্ষণ না সংক্রমণ করার জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া তৈরি হয়। চিকেন পক্সের ভ্যাকসিন নিয়ে এবং সংক্রমিত ব্যক্তির সাহচর্য এড়িয়ে জলবসন্ত প্রতিরোধ করা সম্ভব।
* মশার কামড়ে সংক্রমিত রোগ
মশার কামড়ে সংক্রমিত রোগ যেমন ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াও গ্রীষ্মকালে বেশি দেখা যায়। কারণ এটি মশার প্রজনন মৌসুম। মশা নিধন, তাদের প্রজনন স্থান অপসারণ এবং মশার কামড় এড়ানোর মাধ্যমে এ রোগগুলো প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
* নেত্রদাহ
নেত্রদাহ চোখের রোগ। চোখ ব্যথা বা কনজাংক্টিভাইটিস হলো ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা অ্যালার্জির ফল, যা কনজাংটাইভা প্রদাহের সৃষ্টি করে এবং ৪ থেকে ৭ দিন থাকে। এর ফলে চোখ ব্যথা করে এবং লাল হয়ে যায়। এগুলো সাধারণত ভাইরাস দ্বারা হয় এবং এটি একটি সংক্রামক রোগ। যদি পরিবারের এক ব্যক্তির এটি হয়, তবে সবারই এটি হতে পারে। প্রতিরোধের জন্য চোখ স্পর্শ করার আগে হাত ধোয়া গুরুত্বপূর্ণ। দিনে কয়েকবার ঠান্ডা পানি দিয়ে আক্রান্ত চোখ ধুলে আরাম পাওয়া যায়।
* গ্রীষ্মকালীন বিষণ্নতা
জলবায়ুর পরিবর্তন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কিছু মানুষের মেজাজ পরিবর্তন হতে পারে। কিছু কিছু মানুষ গ্রীষ্মকালে বিষণ্নতায় ভোগে। তাপমাত্রা কমে গেলে বর্ষা এলে বিষণ্নতা কেটে যায়।
গ্রীষ্মকালে রোগ প্রতিরোধে সুষম খাবার গ্রহণও গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য দরকার সহজপাচ্য ও ঠান্ডা খাবার। খেতে হবে কম তেল ও কম মসলাযুক্ত খাবার। কারণ, গুরুপাক খাবার যেমন বিরিয়ানি, পরটা, পনির, রোস্ট, কাবাব, রেজালা ইত্যাদি পরিপাক ও বিপাক হতে প্রচুর পানি ও ক্যালরি ব্যয় হয়। এসব খাবারে পানিস্বল্পতা দেখা দেয় বলে ঘন ঘন পিপাসার উদ্রেক হয়। খাবারে বেশি মসলা থাকলে শরীরে ঘাম বেশি হয়।