প্রতিবেদন, মো. হাবিবুর রহমান:
বাজারে নিত্যপণ্যের দামে অসহায় ক্রেতা সাধারণ। মাছ-মুরগি থেকে শুরু করে বাজারের অধিকাংশ পণ্যের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। একটু কম দামের আশায় নিত্যপণ্যের বাজারে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ছোটাছুটি করছেন। তবে তাতে মিলছেনা কোনো স্বস্তির খোঁজ।
ক্ষুব্ধ ক্রেতাদের অভিযোগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীলদের মুখে কথার ফুলঝুরি ফুটলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে তাদের নেয়া কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রায়ের বাজার ও মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ঘুরে দেখা যায়, সয়াবিন তেল (১লি. বোতল), পাম অয়েল সুপার, মশুর ডাল (বড়, মাঝারী), আদা, মুরগি ব্রয়লার, ডিম এর মূল্য হ্রাস পেয়েছে। অপরদিকে চিনি, মাংস, আলু, রশুন ও জিরার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। পেঁয়াজের দামও কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের মূল্য অপরিবর্তীত রয়েছে।
প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়।
মোটা চাল (স্বর্ণা/চায়না/ইরি) ৫০-৫২ টাকা এবং চিকন চাল (নাজির/ মিনিকেট) ৬৪-৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং পাইজম মাঝারি ৫৫-৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৩০-৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৬৫০ টাকায়। কেজি প্রতি খাসির মাংস ১১০০ টাকায় টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে বিক্রি হয়েছে ৯০০-১০০০ টাকায়।
বর্তমানে বয়লার মুরগির দাম ২০০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর আগে ২১০- থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি মুরগি ৫০০-৫৫০ টাকা, সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩১০-৩২০ টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-২৯০ টাকায়। বাজারে ফার্মের মুরগির ডিম হালি প্রতি ৪০-৪৫ টাকা,
এদিকে, দেশি পেঁয়াজের দাম ৯০-১০০ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ৯৫-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আগে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি এই পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হতো, কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকায়। জিরা ৮০০-৯০০ টাকা, যা আগে ১২০০ টাকায় বিক্রি হতো। তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা, দারু চিনি ৫৫০-৫০০, লবঙ্গ প্রতি কেজি ১৯০০, এলাচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ টাকায়। রসুন (দেশি) ১০০-১২০ টাকা, শুকনা মরিচ (দেশি) ৩৮০-৩৫০ টাকা, হলুদ (দেশি), ২৮০-৩০০ টাকা,
আদা (দেশি)২৫০-২৮০ টাকা, লবন (আয়োডিনযুক্ত) ৮০ – ৮২ টাকা, ধনে ২৩০-২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মসুর ডাল বড় বাজারে ১০৫-১১০ টকায়, মসুর ডাল ছোট ১৩৫-১৪০, মুগ ডল মানভেদে ১৫০-১৭০, অ্যাংকর ডাল ৮০-৯০ টাকা, ছোলা ১০০-১১০ টাকা।
চিনি প্রতি কেজি ১৪০-১৫০ টাকা। যা আগে ছিল ৫৫-৬০ টাকা। খোলা সাদা আটার দাম ৪৫-৫০ টাকা, প্যাকেট আটার দাম ৫৫-৬০ টাকা, খোলা ময়দার দাম ৬০-৬৫ টাকা, প্যাকেট ময়দার দাম ৭০-৭৫ টাকা।
বাজারে, সয়াবিন তেল লুজ ১৪৮-১৫৫, সয়াবিন তেল ১ লিটার (বোতল) বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭৩ টাকা, একসপ্তাহ পূর্বে ১৬০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সয়াবিন তেল ৫ লিটার বোতল ৭৮০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাম ওয়েল লুজ ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, পাম ওয়েল সুপার ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে,ও সরিষার তেল ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লবণের প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়।
স্থানভেদে সব মাছের দামই প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। আকারভেদে রুই, কাতলা, মৃগেল কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩৫০ টাকায়। ইলিশ কেজি প্রতি ৬৫০ টাকা তেলাপিয়া ২২০-২৩০ ও পাঙাশ ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও ১০ থেকে ২০ টাকা কম দামে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও ৬০০ টাকার নিচে নেই পাবদা, টেংরা, কই, বোয়াল, চিতল, আইড় ও ইলিশ মাছ।
রায়ের বাজার ও টাউনহল ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রমজান মাসেও রাজধানীর বাজারগুলোতে মাছের দাম চড়া। বাজারে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত মূল্যতালিকা থাকলেও তাতে মাছের মূল্য নির্ধারণ করা হয় না। বিক্রেতারা এই সুযোগ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
রায়ের বাজারের মাছ বিক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, দাম খুব একটা বাড়েনি। আগের সপ্তাহে যে দামে বিক্রি হয়েছে প্রায় সেই দামেই এখনো বিক্রি হচ্ছে। তবে বিক্রেতাদের এই দাবির সঙ্গে একমত নন মাছ কিনতে আসা ক্রেতারা। তাদের একজন ওষুধ বিক্রেতা রিপন ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, বিক্রেতারা দাম বাড়ালেও স্বীকার করতে চান না। গত সপ্তাহে যে রুই মাছ ২২০ টাকা কেজি কিনলাম, সেটা আজ ৩০০ টাকা চাইছে।
ক্রেতা আশিকুর রহমান বলেন, রমজান মাস এলেই বিক্রেতারা নানা কৌশলে দাম বাড়ান। সরকারি সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ক্রেতারা নিরুপায়।
রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুড়ে দেখা যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থেকে রেহাই পায়নি নিম্ন ও মধ্যবিত্তের সবজির বাজারও। দেখা যায়, বাজারে প্রচুর সরবরাহ থাকার পরেও কমছে না সবজির দাম। আলু ছাড়া ষাট টাকার নিচে মিলছে না তেমন কোনো সবজি।
সবজির বাজারে ১ কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। কাঁচা মরিচ কেজি ৭০-৮০ টাকায়, লেবু ২৫ টাকা (প্রতিটি), গাজর কেজি প্রতি ৮০০-১২০ টাকা, শশা ৪০-৬৫ টাকা, হাফ কেজি ওজনের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে কেজি ৪০ টাকায়। চালকুমড়া পিস ৫০-৬০ টাকা। আর টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এছাড়া আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে। টমেটো ৬০-৭০, করল্লা ৭০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০-৮০ টাকা, মান ও আকারভেদে লাউ ৬০- ৭০ টাকা, শসা ৭০ থেকে ৮০, মুলা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
শাকের মধ্যে সরিষা শাক আটি ১৫ টাকা, ডাটা শাক ১৫ টাকা, পালং ১০-১৫ টাকা, লাউ শাক ৩০-৪০, লাল শাক ১৫ টাকা, বথুয়া শাক ১৫-২০ টাকা আটি বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে দোকানের তুলনায় ভ্যানে কিংবা ফুটপাতের দোকানগুলোতে প্রত্যেক সবজির দাম ১০-৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।এছাড়া প্রায় অপরিবর্তিত আছে অন্যসব সবজির দাম।