জানুয়ারি ১৯, ২০২৪ ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ
যুদ্ধের ফুলকি ছুটছে ইরান-পাকিস্তান দুই প্রতিবেশীর সীমান্তে। শুরুটা ইরানের কামান থেকেই। বৃহস্পতিবার পালটা হামলা চালাল পাকিস্তানও। সীমান্তে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দুদিন যেতে না যেতেই এই রণগর্জন দেখাল ইসলামাবাদ।
মঙ্গলবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায় ইরান। যার জেরে ইরানের দক্ষিণ-পূর্বের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের সারাভন শহরে এ পালটা হামলার ঘটনা ঘটে। অঞ্চলটির ডেপুটি গভর্নর জেনারেল আলী রেজা মারহামাতি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ’কে বলেছেন, সারাভনের কাছে আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। সৌভাগ্যবশত এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
পাকিস্তানের একটি গোয়েন্দা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, সামরিক বিমানের মাধ্যমে এই হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মমতাজ জাহরা বালোচ বলেছেন, অপারেশন মার্গ বার সরমাচার ইরানের বিরুদ্ধে ছিল না। এটি কেবল সেখানে বসবাসকারী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্টের (বিএলএফ) সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু করার জন্য পরিচালিত হয়েছিল। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলায় কোনো যোদ্ধা নিহত হয়নি বলে জানিয়েছে বিএলএফ গোষ্ঠী।
পালটা হামলার ব্যাখ্যা চেয়ে তেহরানে থাকা পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন কূটনীতিককে তলব করেছে ইরান। আলজাজিরা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সকালে দেশটির অভ্যন্তরে হামলার ব্যাখ্যা চেয়ে তেহরানে পাকিস্তানের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে (রাষ্ট্রদূতের অনুপস্থিতিতে সর্বোচ্চ কূটনৈতিক পদ) তলব করেছে। এর আগে পাকিস্তানে হামলার ঘটনায় ইসলামাবাদে থাকা ইরানি কূটনীতিককেও তলব করেছিল পাকিস্তান।
ইরানের বিনা উসকানিতে হামলার কয়েক ঘণ্টা পর, ইসলামাবাদ তেহরানের সঙ্গে তার সম্পর্ক সংকুচিত করেছে। ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে। তেহরান থেকে তার রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে চলমান সব উচ্চপর্যায়ের বৈঠক স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার-উল-হক কাকার সুজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে তার সফর সংক্ষিপ্ত করবেন।
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
ইরান ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, যদি উভয় পক্ষই চায়, তাহলে আমরা পরিস্থিতি নিরসনে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক। রাশিয়া ইরান ও পাকিস্তানকে সর্বোচ্চ সংযম এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটা দুঃখজনক যে বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে এটা ঘটছে। ব্রিটিশ কূটনীতিবিদ রবার্ট ম্যাকেয়ার বলেছেন, আক্রমণগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব হলেও এ দুটি দেশ স্পষ্টভাবে একে অপরকে আক্রমণ করছে না।
হামলাগুলো সন্ত্রসী গোষ্ঠীগুলোর দিকে পরিচালিত হয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেছেন, ‘আমি উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’ পালটাপালটি হামলা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুখপাত্র পিটার স্ট্যানো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তালেবান সরকারও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান, ইরাক এবং সিরিয়ায় ইরানের হামলার নিন্দা করেছে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, তেহরান কয়েকদিনে তার তিনটি প্রতিবেশীর সার্বভৌম সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে।