ফিলিস্তিনে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিসহ পাঁচ সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর

ফিলিস্তিনে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিসহ পাঁচ সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর

জাতীয় স্লাইড

নভেম্বর ১২, ২০২৩ ১:৫৭ অপরাহ্ণ

ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসন বন্ধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিসহ পাঁচটি সুপারিশ পেশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অবিলম্বে এই আগ্রাসন বন্ধের জন্য বিশ্ব ক্রমাগত আহ্বান জানিয়ে আসছে। তা সত্ত্বেও ইসরায়েলের এ আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে।

পূর্বে রেকর্ডকৃত এবং ৮ম বিশেষ ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে সম্প্রচারিত ভাষণে তিনি এসব পরামর্শ দেন। গত ৯ নভেম্বর থেকে রিয়াদে এ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে।

ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নৃশংস ও নজিরবিহীন আগ্রাসন নিয়ে আলোচনার জন্য সৌদি আরবের আমন্ত্রণে এ শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী প্রথমে, ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েল পরিচালিত জঘন্য একতরফা যুদ্ধ বন্ধে অবিলম্বে ‘যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, এই যুদ্ধ অন্যায্য এবং এটি মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের নির্মম লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজা জ্বলছে এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েল কোনো বিরতি ছাড়াই নির্দয় তাণ্ডব চালাচ্ছে, হাসপাতাল ও বেসামরিক অবকাঠামোতে বোমাবর্ষণ করছে এবং হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

প্রধানমন্ত্রী তার দ্বিতীয় সুপারিশে বলেন, বিধ্বস্ত গাজার আটকে পড়া বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী উপকরণের অবিচ্ছিন্ন, দ্রুত এবং নিরাপদ সরবরাহের জন্য অবিলম্বে একটি মানবিক করিডোর খোলার প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি বলেন, বিরামহীন ইসরায়েলি বোমা হামলায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হওয়ার এ সময়ে মনে হচ্ছে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মৃত্যু ও ধ্বংসের দৃশ্য দেখে অচল হয়ে পড়েছি।

তিনি বলেন, অন্তত একটি নিরাপদ মানবিক করিডোরের জন্য আমাদের দ্রুত কাজ করা দরকার।

তৃতীয়ত, শেখ হাসিনা বলেন, নিরপরাধ বেসামরিক মানুষ হত্যা এবং বর্বর উপায়ে এলাকাগুলো উচ্ছেদ করায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, এই ধরনের জঘন্য কাজের শাস্তি হওয়া উচিত যাতে গাজায় যাদের বাড়িঘর রয়েছে তারা আবারো তাদের নিজ দেশে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে।

চতুর্থত, শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অবশ্যই জাতিসংঘ, আরব শান্তি উদ্যোগ এবং কোয়ার্টেট রোডম্যাপে সম্মত  হওয়া সিদ্ধান্তগুলো পুনরায় দেখে নেয়া এবং দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে, যা এই অঞ্চলের জনগণের মধ্যে স্থায়ী শান্তি আনবে।

পঞ্চম পরামর্শে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের এ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, তারা (গাজাবাসী) আমাদের ভাই ও বোন, যারা গত ৫৫ বছর ধরে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং তাদের নিজস্ব মাতৃভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সময় এসেছে, আমরা সবাই একসঙ্গে তাদের পাশে দাঁড়াই এবং তাদের ন্যায্য দাবিটি উপলব্ধি করতে তাদের সহায়তা করি।

তিনি আরো বলেন, নারী ও শিশুরা যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং যুবকরা তাদের জীবন দেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা শান্তিতে বিশ্বাসী এবং অন্য দেশের সব ধরনের যুদ্ধ ও দখলদারিত্বের বিরোধিতা করেন।

তিনি বলেন, আমরা চাই যে কোনো সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হোক। সবার কাছে আমার আবেদন: যুদ্ধ বন্ধ করুন; অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। প্রতিটি দেশ তার সার্বভৌমত্ব এবং শান্তিতে বসবাসের অধিকার ফিরে পাক। এতেই নিহিত রয়েছে মানবজাতির কল্যাণ।

প্রধানমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ভিত্তিতে এবং আল-কুদস আল-শরীফকে রাজধানী করে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার অধিকারকে সমর্থন করে এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি— আপনারা সবাই তা করবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের জন্য আমি মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি— বৈঠকটি ইসরায়েলকে প্রতিরক্ষাহীন ফিলিস্তিনিদের ওপর নিষ্ঠুর আক্রমণ বন্ধ করার জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।

কয়েক দশক ধরে গাজাকে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ উন্মুক্ত কারাগার হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, একসময় নির্যাতিত ইহুদি জনগণ এখন নির্মমভাবে তাদের ঘরবাড়ি, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও পরিবারগুলোকে ধ্বংস করছে, যারা তাদের কঠিন দিনগুলোতে আশ্রয় দিয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *