নভেম্বর ১৭, ২০২৩ ৯:৩৪ পূর্বাহ্ণ
সরকার পতনের একদফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের ফল ঘরে তুলতে চায় বিএনপি। এজন্য তফশিল ঘোষণার পর আন্দোলনের মাত্রা আরও তীব্র করার প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। এ প্রেক্ষাপটে ভয়ভীতি উপেক্ষা করে মাঠে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা এবং বিরোধী দলগুলোকে ভোট থেকে বিরত রাখা-সামনে এই দুই চ্যালেঞ্জ দেখছে দলটি। এসব মোকাবিলায় চলছে নানামুখী তৎপরতা। আন্দোলন সফল করতে নেওয়া হচ্ছে পদক্ষেপ।
তৃণমূলসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের রাজপথে নামতে ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে বার্তা। দফায় দফায় অবরোধের পর এবার হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোও হরতাল কর্মসূচি দিয়েছে। আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে ভাবছেন শীর্ষ নেতারা। এসবের সঙ্গে বিরোধী দলগুলোকেও পাশে চায় বিএনপি। তাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন এসব তথ্য।
বুধবার তফশিল ঘোষণা করা হবে তা অনেকটা অপ্রত্যাশিত ছিল বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর কাছে। কারণ বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব। বিবদমান সব পক্ষকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
এমন পরিস্থিতিতে ‘রাজনৈতিক সমঝোতা’ ছাড়া তফশিল ঘোষণার ফলে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করেছে। নেতারা ধারণা করছেন, সরকারের এমন অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ভালোভাবে নেয়নি। তাদের কাছ থেকে যে কোনো ধরনের পদক্ষেপ আসতে পারে। যা বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের আরও চাঙা করবে।
গত ৫ দিন ধরে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন বিএনপির হাইকমান্ড। নেতাদের বিশ্লেষণ হচ্ছে, ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশ পণ্ডের পর থেকে ১ দিন হরতাল ও পাঁচ দফা অবরোধ কর্মসূচি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
পঞ্চম দফা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের পর আবারও দেশব্যাপী হরতালের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। সরকারের পতনের একদফার পাশাপাশি তফশিল ঘোষণার প্রতিবাদে রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা জেলা ও মহানগরসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের এ কর্মসূচি সফলে দলীয় নির্দেশনা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন।
সামনের কর্মসূচি সফলে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঠে চান হাইকমান্ড। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরকে টার্গেট করে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সব সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতাদের বার্তা দেওয়া হয়েছে-যে কোনো পরিস্থিতিতেই মাঠে থাকতে হবে।
আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা রাজপথে বের হয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবেন। একই কর্মসূচি দিয়েছে সমমনা দল ও জোট। বিএনপি নেতারা মনে করেন, অবরোধে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছেন। কিন্তু রাজধানীর ভেতরে সেভাবে কঠোর কর্মসূচি পালন করা যায়নি। তাই হরতালের মতো কর্মসূচি জরুরি ছিল।
নেতারা জানান, সরকার একতরফা নির্বাচনের পথেই হাঁটছে। যে কারণে বিরোধীদের ওপর হামলা-মামলা ও গ্রেফতার-নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীরাও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কৌশলে কর্মসূচি সফল করছেন। এবার আন্দোলন সফলে তারা আশাবাদী। কারণ প্রতিটি কর্মসূচি ও পদক্ষেপ খুব পরিকল্পিতভাবে নেওয়া হচ্ছে।
তাদের মতে, তফশিল ঘোষণার পর বিরোধী অধিকাংশ দলই তা প্রত্যাখ্যান করেছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলেও তারা ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের এই মনোভাব ইতিবাচক। যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল তফশিল প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন দাবি থাকলেও সরকারের পদত্যাগের দাবিটি কমন।
নেতারা আশা করেন, প্রায় একই দাবিতে পৃথক কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়েই সামনে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আরও ঘনিষ্ঠ হবে। দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। দলটির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না, তাদের অবস্থানে অনড় থাকার বিষয়ে বিএনপি নানাভাবে কাজ করছে। বিএনপির কাছে তথ্য আছে, এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দলকে নির্বাচনে নেওয়ার জন্য নানা প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। কিন্তু তাদের বিশ্বাস, এসব করে কোনো দলকেই নির্বাচনে নিতে পারবে না।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই। সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা যে লড়াই করছি। আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করে জনগণের হাতে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করার জন্য জনগণ আজ রাস্তায় নেমে এসেছে। এই আধিপত্যবাদী স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের বিজয় হবেই । জনগণ এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এত মামলা-হামলা, গ্রেফতার-নির্যাতনের পরও সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে নেতার্মীরা মাঠে থেকে কর্মসূচি সফল করছেন। আগামী দিনের আন্দোলন আরও তীব্র হবে। একতরফা নির্বাচনের তথাকথিত তফশিল জনগণ মানে না। অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল তফশিল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে। বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট চূড়ান্ত কর্মসূচি দিয়ে মাঠে রয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও কঠোর কর্মসূচি পালন করছে। আমাদের সবার দাবি একই, সরকারের পদত্যাগ। তাই সরকারের পতন অনিবার্য।’
বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট ছাড়াও বাম গণতান্ত্রিক জোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বিজেপি, এনডিএম, এবি পার্টিসহ অধিকাংশ বিরোধী দলই তফশিল প্রত্যাখ্যান করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এসব দল নানা কর্মসূচিও পালন করছে।
রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল সমমনা দল ও জামায়াতের : এদিকে বিএনপি সঙ্গে একই কর্মসূচি দিয়েছে সমমনা দল ও জোট এবং জামায়াতে ইসলামী। রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি পালন করবে তারা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে অবরোধের সমর্থনে পৃথক বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে হরতালের ঘোষণা দেয় গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, লেবার পার্টিসহ সমমনা দল। এক বিবৃতিতে হরতালের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সফল করে তোলার জন্য সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।