বিশ্ববাজারে সোনার দাম ‘রেকর্ড ভাঙছে —রেকর্ড গড়ছে’। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে শুক্রবার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে দামি এই ধাতু। প্রথমবারের মতো এক আউন্স সোনার দাম দুই হাজার ২৩০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সোনার দাম বাড়ার এ প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
মার্চজুড়েই বিশ্ববাজারে সোনার দাম এমন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহেই প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ৫১ দশমিক ৪৬ ডলার বা দুই দশমিক ২৬ শতাংশ। মার্চ মাসে বেড়েছে ১৮৯ দশমিক ২০ ডলার বা নয় দশমিক ২৬ শতাংশ। গত সপ্তাহজুড়ে বিশ্ববাজারে সোনার দামে বড় উত্থান হলেও এখনো দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
তবে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকলে এবং স্থানীয় বাজারে সোনার চাহিদা বাড়লে ও তেজাবী সোনার দাম বাড়লে নতুন করে আবার দাম বাড়ানো হতে পারে।
এ বিষয়ে বাজুসের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, সোনার অস্বাভাবিক দাম হওয়ার কারণে দেশের বাজারে বিক্রি অনেক কমে গেছে। তবে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকলে এবং স্থানীয় বাজারে চাহিদা বাড়লে নতুন করে সোনার দাম বাড়ানো হতে পারে। এ জন্য আগামী কয়েকদিন স্থানীয় বাজারের চিত্র পর্যবেক্ষণ করবে বাজুস।
নতুন করে দাম বাড়ানো হলে বাংলাদেশের বাজারেও সোনার দামে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে। অবশ্য বর্তমানে রেকর্ড দামেই বিক্রি হচ্ছে দামি এই ধাতু। দেশের বাজারে সোনার দাম সর্বশেষ নির্ধারণ করা হয় গত ২১ মার্চ, যা কার্যকর হয় ২২ মার্চ থেকে।
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার দাম বাড়ার কারণ উল্লেখ করে সেদিন সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম দুই হাজার ৯১৬ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করে হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৭৪ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম দুই হাজার ৭৪১ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ আট হাজার ৮৮৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম দুই হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়িয়ে ৯৩ হাজার ৩১২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৯৮৩ টাকা বাড়িয়ে ৭৭ হাজার ৭৯৯ টাকা নির্ধারণ করে। দেশের বাজারে সোনার এত দাম আগে কখনো হয়নি। বর্তমানে এই দামেই সোনা বিক্রি হচ্ছে।
অবশ্য সোনার গহনা কিনতে ক্রেতাদের এর থেকে বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে। কারণ বাজুস নির্ধারণ করা দামের ওপর পাঁচ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে সোনার গহনা বিক্রি করা হয়। সেই সঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম তিন হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে রোববার (৩১ মার্চ) থেকে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার গহনা কিনতে ক্রেতাদের এক লাখ ২৩ হাজার ২৭৭ টাকা গুনতে হচ্ছে।
দেশের বাজারে সর্বশেষ যখন সোনার দাম নির্ধারণ করা হয়, সে সময় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল দুই হাজার ১৫৫ ডলারের কাছাকাছি। অর্থাৎ দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর পর এরই মধ্যে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৮০ ডলারের মতো বেড়ে গেছে।
বিশ্ববাজারের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত সপ্তাহের শুরুতে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল দুই হাজার ১৮০ দশমিক ৯২ ডলার। সেখান থেকে বেড়ে এখন প্রতি আউন্স সোনার দাম দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৩২ দশমিক ৩৮ ডলার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ৫১ দশমিক ৪৬ ডলার বা দুই দশমিক ২৬ শতাংশ। আর মার্চ মাসেরে শুরুতে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল দুই হাজার ৪৩ দশমিক ৬৩ ডলার। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ১৮৯ দশমিক ২০ ডলার বা নয় দশমিক ২৬ শতাংশ।
এদিকে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, চলতি বছর প্রতি আউন্স সোনার দাম দুই হাজার ৩০০ ডলার হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং’র চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের যে রেকর্ডটা আমরা দেখেছি প্রতি আউন্স সোনার দাম দুই হাজার ৩০০ ডলার এই বছর হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, ভূ-রাজনৈতিকসহ কয়েকটি কারণে সোনার দাম বাড়ছে। ইনফ্লেশন (মূল্যস্ফীতি) এখন খুব হাই। ডলারের দাম সেই তুলনায় কম। এ কারণে বিনিয়োগ গোল্ডের দিকে ঝুঁকে গেছে। আবার মুক্তবাজার অর্থনীতিতে অনেক দেশ এখন ডলার বাদ দিয়ে রিজার্ভ হিসেবে সোনা কিনে রাখছে।
বাংলাদেশে নতুন করে দাম বাড়ানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববাজার এবং স্থানীয় বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। এখানে দুটি বিষয় আছে, একটা ফিউচার মার্কেট, আর একটা প্র্যাকটিক্যাল মার্কেট। ফিউচার মার্কেটে দাম বাড়তে পারে বিনিয়োগের কারণে। আর প্র্যাকটিক্যাল মার্কেটে যদি ক্রয়ক্ষমতার ওপরে চলে যায়, তখন মানুষ কম কিনবে, চাহিদা কম থাকবে। এই দুইদিক বিবেচনা করে আমাদের দাম ওঠা-নামা করে। আমরা স্থানীয় বাজারের এই সপ্তাহের চিত্র দেখবো। যদি ওরকম না বাড়ে তাহলে হয়তো বাড়ানো হবে না। আর যদি বেড়ে যায় তখন তো বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বাবাজারে সোনার দাম বাড়ছে, আমাদেরকেও তার সঙ্গে তালমিলিয়ে চলতে হবে। আমরা বেশি দামে কিনলে, বেশি দামে বিক্রি করবো। এর বিকল্প নেই। দাম বেশি হওয়ার কারণে এখন আমাদের সেল কম হচ্ছে। দামটা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। দামটা কমলে হয় তো তখন মানুষ আবার কেনাকাটা শুরু করবে।