নভেম্বর ১১, ২০২৩ ৯:২৬ পূর্বাহ্ণ
কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে বহু প্রতীক্ষিত দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল উদ্বোধন ও প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম খান গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, মাতারবাড়ী বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গেম চেঞ্জারের ভূমিকা পালন করবে। এই বন্দরে জোয়ার-ভাটায় যেকোনো সময়ে ৮০০০ টিইইউএস’র জাহাজ ভিড়তে পারবে। শিপিং লাইনগুলো বাংলাদেশে জাহাজ নিয়োজিত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুবিধা ভোগ করবে। ফলে পণ্য পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।
বন্দরকে ঘিরে মাতারবাড়ী মহেশখালী এলাকায় ব্যাপক শিল্পায়নসহ গড়ে উঠবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। ফলে সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থানের। দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকসহ পেশাজীবীদের জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের বেকার সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে এ বন্দর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বন্দরকে ঘিরে যে লজিস্টিকস ও সাপ্লাইচেইন ম্যানেজমেন্টের অবকাঠামো গড়ে উঠবে ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বন্দরকে কেন্দ্র করে মাতারবাড়ী মহেশখালী এলাকায় যে নগরায়ন হবে তা ঐ এলাকাকে দক্ষিণ এশিয়ার সিঙ্গাপুরে পরিণত করবে। ফলে ঐ এলাকার আপামর জনসাধারণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে দেখার মতো। মাতারবাড়ী বন্দরকে ঘিরে যে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ আবর্তিত হবে তা বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা জিডিপিতে ২-৩ শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।
২০২৬ সালে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বর্তমানের স্মার্ট দেশ সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যাবে। মাতারবাড়ী বন্দর বাণিজ্যিক হাব হবে। চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির লাইফ লাইন, মাতারবাড়ী বন্দরও হবে প্যারালাল অর্থনীতির লাইফ লাইন।
উল্লেখ্য, দেশের প্রথম ও একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মাতারবাড়ী টার্মিনাল বাস্তবায়িত হলে ১৬ মিটার বা ততোধিক গভীরতা সম্পন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ গমনাগমন করতে সক্ষম হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে মাইলস্টোন হিসেবে কাজ করবে। এখানে বড় ধরনের ফিডার ভেসেল আসবে। অর্থ ও সময় বাঁচবে। অর্থনীতিতে সুপ্রভাব ফেলবে। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়া অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পার্শ্বে ২ হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পার্শ্বে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে আনুমানিক ০.৬ থেকে ১.১ মিলিয়ন টিইইউস (বিশ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আনুমানিক ২.২ হতে ২.৬ মিলিয়ন টিইইউস কন্টেইনার কার্গো হ্যান্ডেল করা সম্ভব হবে। প্রকল্পের সড়ক ও জনপথ অংশে ২৭.৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে মাতারবাড়ী বন্দরের সঙ্গে ন্যাশনাল হাইওয়ের সংযোগ স্থাপন করার কাজ চলমান।