যুদ্ধবিরতি নয়, গাজা শাসনে মাথাব্যথা যুক্তরাষ্ট্রের

যুদ্ধবিরতি নয়, গাজা শাসনে মাথাব্যথা যুক্তরাষ্ট্রের

আন্তর্জাতিক

নভেম্বর ১৯, ২০২৩ ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ

গাজায় ইসরাইলি আক্রমণের প্রতি বরাবরই সমর্থন জানিয়ে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুদ্ধজাহাজসহ অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামও পাঠিয়েছেন বন্ধুরাষ্ট্রকে রক্ষায়। পাশাপাশি গাজায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ইসরাইলের সামরিক উপস্থিতি, অঞ্চলটির কোনো অংশ দখল অথবা স্থায়ীভাবে এর জনসংখ্যাকে বাস্তুচ্যুত করার সমর্থনও করছে না যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে হাসপাতালে হামলা কিংবা বেসামরিক হত্যার প্রতি সহানুভূতিও দেখাচ্ছেন সমান তালে। অথচ গাজার যুদ্ধ বন্ধ বা যুদ্ধবিরতি নিয়ে টুঁ শব্দটিও করছেন না বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রটির প্রেসিডেন্ট!গাজা যুদ্ধের স্থায়ী কোনো সমাধানের দিকে না গিয়ে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে উপত্যকাটিকে কে শাসন করবে তা নিয়ে ব্যস্ত। এককথায়, ইসরাইলের স্বার্থচরিতার্থ করতে বহুমাত্রিক চরিত্রে নিজের যুদ্ধংদেহী মুখোশ ঢাকতে শশব্যস্ত হয়ে উঠেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতি নয় বরং গাজা শাসন নিয়েই বেশি মাথাব্যথা যুক্তরাষ্ট্রের। ওয়াশিংটন-তেল আবিবের পুতুল সরকার হিসাবে সমালোচিত ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ বা প্যালেস্টাইন অথরিটিরই (পিএ) গাজা শাসন করা উচিত বলে পরামর্শ দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। চলতি মাসের শুরুর দিকে রামাল্লায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে গাজায় পিএ’র ফিরে আসার ব্যাপারে কিছুটা ইঙ্গিত দেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও। তবে এই প্রস্তাবটি পুরোপুরি নাকচ করেছে গাজার হামাস সরকার। ‘অবাস্তব’ ও ‘সময়োপযোগী নয়’ বলে মতপ্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরাও। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক ওসামাহ খলিল গাজার শাসন পিএ’র কাছে হস্তান্তর করার বিষয়টিকে শুধু একটি ‘অবাস্তব স্বপ্ন’ বলে অভিহিত করেছেন।

বলেছেন, ইসরাইলকে সমর্থনের জন্য বাইডেন প্রশাসন ইতোমধ্যে ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। নিজের দোষ ঢাকতে তিনি মূলত যুদ্ধের পর কী হবে সেদিকে সবার মনোযোগ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। খলিল আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মূলত সংঘাতের সমাধানের দিকে মনোযোগ না দিয়ে সংঘাত ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিচ্ছে বেশি। যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত নিরসনে আন্তরিক নয় বলেও উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, ইসরাইলের প্রতি পশ্চিমা সমর্থনের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ দূর করতে যুক্তরাষ্ট্র পিএ’র প্রত্যাবর্তন ঘটাতে চাচ্ছে। আলজাজিরা।

এ বিষয়ে ওয়াশিংটন ডিসির আরব সেন্টারের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের নির্বাহী পরিচালক খলিল জাহশান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির আহ্বান না জানিয়ে যুদ্ধের পর কী হবে তা নিয়ে কথা বলা শুধু সময়ের অপচয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় ফিলিস্তিনিদের একটি কর্তৃত্ব থাকা উচিত। তবে তা যুদ্ধবিরতি আর একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পর।’

গাজা শাসন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুরেই একই কথা বললেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলও। তার বক্তব্য, ইসরাইল বা হামাস নয়, ফিলিস্তিনিরাই গাজা নিয়ন্ত্রণ করবে। শনিবার বাহরাইনে পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতির বার্ষিক সম্মেলনে মানামা সংলাপে বক্তৃতাকালে এ মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘তাহলে গাজার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে? আমি মনে করি শুধু একজনই তা করতে পারে। আর তা হলো প্যালেস্টাইন অথরিটি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *