সঞ্চয়পত্রে করের বোঝা

সঞ্চয়পত্রে করের বোঝা

সম্পাদকীয়

আগস্ট ১৮, ২০২৩ ২:৩১ অপরাহ্ণ

কর্মজীবন শেষে কিংবা চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে কীভাবে সংসার চলবে, তা নিয়ে মধ্যবিত্তের দুশ্চিন্তা অনেকটাই লাঘব করেছিল সঞ্চয়পত্র। সারা জীবনের সঞ্চয় কিংবা চাকরি শেষে এককালীন যে অর্থ তারা পেতেন, তা নির্বিঘ্নে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতেন। এ থেকে অর্জিত মুনাফা দিয়ে সংসারের ব্যয় মেটাতেন তারা। সরকারও সাধারণ মানুষের এই নিরাপদ বিনিয়োগের অর্থ দিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালাত। এতে ব্যাংক থেকে বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থায়নের জন্য বাড়তি ঋণ নিতে হতো না। কিন্তু সম্প্রতি যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাতে সঞ্চয়পত্রের এ বিনিয়োগ উলটো পথে হাঁটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নতুন আয়কর আইনে পুরোনো আইনের একটি ধারা {৮২ (সি) ২(ডি)} বিলুপ্ত করার কারণে কর নির্ধারণের হিসাব পালটে গেছে। এতে সঞ্চয়পত্রের মুনাফাকে করদাতার আয় হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। পুরোনো আইনে মুনাফার অর্থ করদাতার আয়ের সঙ্গে যুক্ত হতো না, শুধু মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর কেটে রাখা হতো, যা করদাতার চূড়ান্ত করদায় হিসাবে বিবেচিত হতো। কিন্তু নতুন আইনে একই হারে উৎসে কর কাটলেও অন্য (চাকরি, ব্যবসা, বাড়ি ভাড়া প্রভৃতি) আয়ের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা যোগ করে করদাতার চূড়ান্ত করদায় নির্ধারণ করা হবে। এ কারণে ক্ষেত্রবিশেষে চলতি করবর্ষ থেকেই করদাতাদের বাড়তি কর দিতে হবে।

পুরোনো আইনে কেউ যদি প্রতিবছর সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের বিপরীতে ২ লাখ টাকা মুনাফা পেতেন, তাহলে ব্যাংক ২ লাখ টাকা মুনাফার ওপর ২০ হাজার টাকা উৎসে কর কর্তন করে করদাতার ব্যাংক হিসাবে বাকি অর্থ স্থানান্তর করত, যা চূড়ান্ত করদায় হিসাবে বিবেচনা করা হতো। করদাতা উৎসে কর কর্তনের বিষয়টি রিটার্নে শুধু উল্লেখ করতেন। নতুন আইনে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা করদাতার বার্ষিক আয়ের সঙ্গে যোগ হবে। সে হিসাবে ২০ হাজার টাকা উৎসে করের সঙ্গে করদাতাকে আগের চেয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা বেশি কর দিতে হবে, যা চলতি করবর্ষ থেকেই কার্যকর হয়েছে। যেসব করদাতা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা দেবেন, তাদের এই নিয়মে আয়কর দিতে হবে। আবার যাদের আয় বেশি, তাদের বেশি ট্যাক্স দিতে হবে। কারণ, করযোগ্য আয়ের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা যোগ করলে করদাতার করযোগ্য আয়ও বেড়ে যাবে।

এমন সিদ্ধান্তে স্বভাবতই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের আগ্রহে ভাটা পড়তে পারে। যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতেন, তারা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও অন্যত্র বিনিয়োগের ক্ষেত্র খুঁজবেন। সেক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র থেকে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না এলে বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ঋণের ওপর সরকার বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে না। এমনিতেই চলমান অস্থির অর্থনীতি আর বাজারদরের ঊর্ধ্বগতির কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে, কর আইনের সাম্প্রতিক পরিবর্তন এ প্রবণতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। শুধু জীবননির্বাহ নয়, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় মানুষের যে সঞ্চয়ের প্রবণতা, তাও হ্রাস পাবে; যা সামাজিক নিরাপত্তা ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। জনস্বার্থের কথা ভেবে সরকার নতুন কর আইন সংশোধন করবে, এটাই প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *