জানুয়ারি ১, ২০২৪ ১২:৫৪ অপরাহ্ণ
অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে শেষ হচ্ছে ২০২৩ সাল। এ বছরটি ঘটনাবহুল একটি বছর পার করলো ক্রীড়া বিশ্ব। ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস, রাগবি – সব জনপ্রিয় খেলায় ছিল গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন, ছিল বড় মাপের ঘটনা। ২০২৩ সালে দেশের ক্রীড়া অঙ্গনে আলো ছড়িয়েছেন যারা-
কামরুন নাহার কলি
নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে ২০১৭ সালে শুটিংয়ের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় কামরুন নাহার কলির। ক্লাবে নিয়মিত হন ২০১৮ থেকে। শুটিংয়ে আগেও আন্তর্জাতিক ইভেন্টে পদক জিতেছে বাংলাদেশ। তবে এই বছর শুটিংয়ে সবচেয়ে বড় চমকটা দেখিয়েছেন এই কলি। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় এই বছর অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ শুটিংয়ের ফাইনালে কলি নতুন দিগন্তের সূচনা করেন। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে নারী ব্যক্তিগত ইভেন্টে তিনি অষ্টম হন। কলিই প্রথমবারের মতো শুটিং বিশ্বকাপের ফাইনালে তোলেন বাংলাদেশকে। ২০২২ এর অক্টোবরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও দারুণ পারফরম্যান্স করেছিলেন কলি। সেই প্রতিযোগিতায় তিনি ৬২৯ স্কোর করেছিলেন। প্রতিভাবান কলি বাংলাদেশের শুটিংকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন এমন আশা অনেকের। কলি নিজেও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি স্বপ্ন দেখেন দেশের হয়ে অলিম্পিক থেকে পদক আনার।
তাওহীদ হৃদয়
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন তাওহীদ হৃদয়। তবে ২০২৩ বিপিএলে দারুণ পারফরম্যান্সে জাতীয় দলের দরজা খুলে যায়। সিলেট স্ট্রাইকার্সের ১৩ ম্যাচে ৪০৩ রান করে হন তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সুযোগ পেয়ে যান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টির জন্য জাতীয় দলে। কদিন পর মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ওয়ানডে অভিষেকেই করেন ৮৫ বলে ৯২ রানের মনকাড়া ইনিংস। ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত হৃদয়ের সর্বোচ্চ ইনিংসও এটি। এরপর থেকে সাদা বলের ক্রিকেটে নিয়মিত খেলছেন। ২৩ ইনিংসে ৩৪.৬১ গড়ে ৭২৭ রান। সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর পরই হৃদয়ের গড়। ১০ টি-টোয়েন্টিতে করেছেন ১৭৫ রান। ফর্ম ধরে রাখতে পারলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ভরসার নাম হতে পারেন হৃদয়। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার স্ট্রাইক রেট ১৩১.৫৭। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংটাও ভালোই করেন হৃদয়।
মারুফা আক্তার
ঘরোয়া ও বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে আলো ছড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় মারুফা আক্তরের। সুযোগ পান ২০২৩ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে। এখন পর্যন্ত দেশের হয়ে খেলেছেন ১২ ওয়ানডে (১০ উইকেট) ও ১৬ টি-টোয়েন্টি (১৩ উইকেট)। কাল ১ জানুয়ারি ২০-শে পা দিতে যাচ্ছেন তিনি। বয়সটা কম হলেও ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে পেস বোলিংয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার সব গুণই আছে মারুফার মধ্যে। গেল ১৬ জুলাই মিরপুরে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মারুফার দারুণ বোলিংয়ে ভারতের বিপক্ষে জয় পায় ভারত। মারুফা নিয়েছিলেন ২৯ রানে ৪ উইকেট। সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচটি হয়েছিল টাই। সেই ম্যাচেও মারুফাই ভারতের ইনিংসের ৫০তম ওভারে ৩ রান ডিফেন্ড করেন। ২০২৪ নারী আইপিএলের প্লেয়ার ড্রাফটে আছেন দুজন বাংলাদেশি। তাদের একজন মারুফা আক্তার।
সোহেল রানা জুনিয়র
২০১৮ সালে চোখে পড়ে যান রহমতগঞ্জের তৎকালীন কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানীর। পরের মৌসুমে সোহেল রানা জুনিয়র যোগ দেন চট্টগ্রাম আবাহনীতে। কোচ মারুফুল হকের অধীনে নিজেকে পরিণত করতে সময় নেন দুই মৌসুম। এরপর ঢাকা আবাহনীতে গত মৌসুমে অসাধারণ ফুটবলে নজর কাড়েন সেন্ট্রাল মিডিফল্ড পজিশনে। তার আগেই জাতীয় দলে অভিষেক হয় কম্বোডিয়ার বিপক্ষে। আবাহনীতে আলো কাড়ার পর ভালো পারিশ্রমিকে সুযোগ পান চারবারের লিগজয়ী বসুন্ধরা কিংসে। সময় যত যাচ্ছে, আরও পরিপক্ব হয়ে উঠছেন। মিডফিল্ড পজিশনে অনেকদিন পর একজন বৈচিত্র্যময় মিডফিল্ডারের খোঁজ পেয়েছে বাংলাদেশ। ছোটবেলার আদর্শ, দেশের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার আরমান মিয়াকে ছাপিয়ে দেশের সেরা মিডিফল্ডার হতেই ক্যারিয়ার যতটা সম্ভব লম্বা করতে চান।
শেখ মোরসালিন
লং রেঞ্জে গোল করতে পারেন এমন কাউকে বহুদিন ধরেই খুঁজছিল বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকরা। সেই শূন্য স্থান পূরণে আশার প্রদীপ হয়ে আসেন শেখ মোরসালিন। মিডফিল্ড, উইং, স্ট্রাইক বেশ কয়েক পজিশনে খেলতে পারেন। ক্লাব পর্যায়ে ২০২১-২২ মৌসুম থেকে আলোচনায় থাকলেও জাতীয় দলে অভিষেকটা এই বছরের জুনে। কিছুদিন আগে বিশ্বকাপ ২০২৬ এর বাছাইয়ে লেবাননের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুর্দান্ত এক গোল করে আবার এসেছেন খবরের শিরোনামে। মোরসালিনের পারফরম্যান্সে এএফসি তাকে সম্ভাবনাময় তরুণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বে সেরা আট তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছিলেন মোরসালিন। যে তালিকায় ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার সন হিউং মিনের মতো খেলোয়াড়। জাতীয় দলের জার্সিতে ৯ ম্যাচে ৪ গোল করেছেন মোরসালিন।