চট্টগ্রামে ২৯ পণ্যের বেশিরভাগই বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে। দাম বেঁধে দেওয়ার ১৫ দিন হলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কিছুটা সহনীয় হলেও খুচরা বাজারে অতিরিক্ত দাম আদায় করা হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম একদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ২০ টাকা বাড়ার পর আবার কিছুটা কমেছে। মাছ ও মাংসের দাম আগের মতোই আকাশচুম্বী। পাশাপাশি বেড়েছে চালের দামও। ঊর্ধ্বমুখী অন্য ভোগ্যপণ্যের দামও। ভোক্তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের তদারকির অভাবে ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করছেন না। কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করলে ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হতেন। ভোক্তারা অনেক ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। সরকার দাম বাড়ালে মিনিটের মধ্যে কার্যকর হয়। আর দাম কমলে দিনের পর দিনও তা কার্যকর হয় না।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তদারর জানান, রোববার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি অনিদির্ষ্টকালের জন্য স্থগিত করার খবরে দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে দাম বেড়ে যায়। নগরীতে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। কেজিপ্রতি ভারতীয় ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল কেজিপ্রতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৭০ থেকে ৭২ টাকা। যদিও শনিবার ভারতীয় ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল কেজিপ্রতি ৫২ থেকে ৫৮ টাকার মধ্যে।
শুক্রবার কিছুটা কমেছে পেঁয়াজের দাম। দেশি পেঁয়াজের সরকার নির্ধারিত দর ৬৫ টাকা ৪০ পয়সা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকার বেশি দামে। যদিও গত সপ্তাহে পেঁয়াজ ৬০ টাকায় ভোক্তারা কিনতে পেরেছিলেন। দেশি রসুন মানভেদে বিক্রি হচ্ছে কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। দেশি রসুনের নির্ধারিত দর ১২০ টাকা ৮১ পয়সা। সরকার নির্ধারিত প্রতি হালি ডিমের দাম ৪২ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা থেকে ৪৮ টাকায়।
নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি জাইদি খেজুর ৩২০ থেকে শুরু করে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অতি সাধারণ ও নিুমানের খেজুরের সরকার নির্ধারিত দাম সর্বোচ্চ ১৬৫ টাকা। কিন্তু এসব খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকার বেশি দামে। সাধারণ মানের খেজুর প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে ভালোমানের খেজুর ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে চট্টগ্রামের খেজুরের আড়তদাররা বলছেন, এখন বিক্রি করা খেজুরগুলো আগের কিনা। তারা পাইকারি বাজার থেকে বাড়তি দামে খেজুর কেনার কারণে সরকারের নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারছেন না। সরকারের নির্ধারিত দামে খেজুর বিক্রি করতে হলে তারা লোকসানে পড়বেন। এ কারণে তারা অতিরিক্ত দামে খেজুর বিক্রি করছেন।
নিত্যপণ্যের মধ্যে বেশকিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, ডাবলির ৭৫ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, চিকন মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, মোটা দানার মুগ ডাল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, চিকন মুগ ডাল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা ও খেসারি ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খোলা আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, খোলা ময়দা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তদার সাইফুল ইসলাম জানান, পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। তবে সরকার নির্ধারিত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা সম্ভব নয়। কারণ খরচ সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি। ভারত থেকে প্রায় দেশে ১ হাজার ৬৫০ টন পেঁয়াজ আসার কথা রয়েছে। এসব পেঁয়াজ এলে দাম আরও কিছুটা কমবে। এছাড়া দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন ভালো হয়েছে।